আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মকবুলের কবুল কওয়াঃ রণক ইকরাম

মুগ্ধ প্রেমিক তাই ভালোবাসা করে না!

'একটু আইট্টা দেহাও তো মা। ' পাত্র পক্ষের কথা হুইনা পাত্রীপক্ষের একজন কইয়া উঠল। আরে এইটা তো সিলেটি নিয়ম কুমিল্লাতে কেন? কুমিল্লা আর সিলেট বইলা কথা না। কথা হইল মাইয়া ঠিক আছে কি না, হেইডা পরীক্ষাকরণ। ’ কথা হুইনা একেবারে চিম্মা গেল পাত্রীপক্ষের লোকটা।

জামাইপরে মানুষগুলো এমন কাইষ্ঠা হয় কেন? কাইষ্ঠামিডা আর কতখন পরেই টের পাওয়া গেল। নগদ ৩০ হাজার টাকা আর একটা রঙিন টিভি যৌতুক চাইল হেরা। কিন্ত জামাইপরে এমন কাইষ্টামির বাধা খাইয়া খাড়াইল স্বয়ং জামাই। মকবুলের এককথা যৌতুক লইয়া বিয়া করা তার পে সম্ভব না। যেই কারণে যা অইবার তাই অইল।

মকবুল বেচারার সাত নম্বর বিয়াটাও ভাইঙা গেল। এই তো গতকাল হাইনজালা তার ছয় নম্বর বিয়াটা অল্পের জন্য হয় নাই। সব যখন ঠিকঠাক তখনই কে যেন মাইয়া পরে কইয়া দিচ্ছে যে মকবুলের বাপে দুই বিয়া করছে। ব্যস মনে মনে কবুল কওয়ার লাইগা তৈয়ার হতে থাকা মকবুলের পে আর কবুল কওয়া হইল না। এর আগে মাইয়ার পায়ের আঙ্গুল ছয়টা থাকার কারণে একটা, মাইয়া বাপের মোবাইল না থাকার কারণে একটা, মাইয়ার মাথায় চুল না থাকার কারণে আরেকটা বিয়া ভাইঙ্গা গেছিল।

মকবুল মনে মনে ভাবছিল সাত নম্বর বিয়াটা বোধ হয় ভাঙবো না। কারণ সাত সংখ্যাটার লগে নাকি ভাইগোর একটা যোগসাজশ আছে। কিন্তু এবারের বিয়াটাও ভাইঙ্গা যাওনে মকবুলের সরল মনডাও ভাইঙ্গা-চুইরা খান অইয়া গেল। মন খারাপ বাড়ির লগের পুকুর ঘাটে বইসা রইল মবুল। তখনই তার দুরে সম্পর্কের এক ভাবী আইসা বিয়া লইয়া ঠাট্টা-মশকরা শুরু করে দিল।

বলে কিনা মকবুলের কপালে কোন বিয়াই নাই। তবে মকবুল জানে এই ভাবীর কাহিনী অন্য। তার বইনের লগে মকবুলের বিয়া দিতে পারে নাই বইলাই হেয় এমন করতাছে। অবশ্য হের বইনের চেহার সরত মাশাল্লা খারাপ ছিল না, কিন্তু মাইয়াটার ওপর নাকি জ্বিনের আছড় আছে। মকবুল আবার জ্বিন-ভুত খুব ভয় পায়।

একবার একটা হাডুডু খেলা শষ কইরা ডেংগার পাশ দিয়া ফিরতেছিল সে। টুকটাক বিড়ি টিরি টানলেও সেদিন তার সঙ্গে কোন বিড়ি-ম্যাচ ছিল না। হঠাৎ করে তার সামনে হাজির হলো ইয়া মোটা এক ডোরাকাটা বিলাই। আবার মুহুর্তেই অদ"শ্য হয়ে গেল। একটু পরেই বিলাইটা আবার দেখা গেল।

তবে এবার গায়ের রঙ নীল-কালো। কোন ডোরা নাই। চরম ভয় পেয়ে পাগলা দৌড় লাগায় সে। পাড়ার মাতব্বর শিরু মিয়র হাতের টর্চলাইটের আলোতে সে জানটা ফিরে পায়। এরপর থেইকাই জ্বিন-ভুতকে মকবুল ভীষণ ভয় পায়।

তাই ভাবীর বইন এত সুন্দর অওয়ার পরও সে তারে বিয়া করে নাই। ভাবীর ওই রকম খোচা মারা কথা হুইনা তার মাথা আউলাইয়া গেল। হেয় তৎণাৎ সিদ্ধান্ত নিল আত্মহত্যা করবে। কিন্তু কেমনে করবে? আনেক ভাইবা শেষে গলায় দড়ি ঝুলাইয়া আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল মকবুল। গরুর দড়ি আইনা ঝুলাইল গয়াম গাছের সঙ্গে।

একটা টুল এনে সেটার উপর উঠে গলায় ঝুলানোর জন্য রশি গোল করল সে। তার জীবনে যখন কবুল কওয়ার সুযোগই আসবে না তখন সে আর এই জীবন রাখবেই না। সব কিছু ঠিকঠাক করে গলায় রশি ঝুলাতে গিয়ে মকবুল হঠাৎ থেমে গেল। তার চোখ আটকায়া গেল গাছের আগায় ঝুলা একটা পাকা গয়ামের। ফাঁসির পুরো ব্যাপারটাই মকবুল বাংলা সিনেমা থেইকা নকল করছে।

হঠাৎ তার মনে পড়ল শেষ ইচ্ছা পূরণের কথা। তাই ওই পাকা গয়ামটা খেয়ে তার পরই মরার কথা চিন্তা করল মকবুল। অবশ্য গয়াম বলার চাইতে জিনিসটার ভালো নাম পেয়ারা বলতেই বেশি পছন্দ করে মকবুল। কারণ এইটার প্রতি তার অন্যরকম একটা দূর্বলতা আছে। যেই ভাবা সেই কাজ।

গয়াম খাবার লোভে মকবুল তরতর করে গয়াম গাছের মগডালে উঠে গেল। নিচে থাকতে একটা গয়াম দেখলেও ওপরে উঠে দুই দুইটা পাকা গয়াম আবিস্কার করল সে। একটা গয়াম পেরে খেতে শুরু করল মহা আনন্দে। জিনিসটাকে দেখে যতটা মজার মনে হয়েছিল, এখন ওটাকে এর চেয়ে বেশি মজার মনে হচ্ছে। গয়াম খাওয়া যখন প্রায় শেষ তুনি মেয়ের হাসি শুইনা টাশকি খাইয়া গেল মকবুল।

চুপি চুপি নিচে তাকাইয়া দেখে পাশের বাড়ির সুন্দরী পারুল। অনেক দিন আগে একবার পারুলের কলসিতে ঢিল ছুড়েছিল সে। এর পর থেকে এই মাইয়াটাকে দেখলেই সে একটু দুরে দুরে থাকে। এবারও বরাবরের মতো পাতার আড়ালে পালানোর চেষ্টা করল সে। কিন্তু পারুল নিচে আইসা টুল আর দড়ি দেইখা খাড়ায়া গেল।

এরপর ওপরে দিকে চেয়েই আঁতকে উঠল মকবুল। এরপর নিজেরে সামলায়া লইয়া পারুলের দিকে একটা পাকনা গয়াম নিয়া খাইতে লাগল। হের পর পারুলের কথায় মকবুল গাছ থেইকা নাইমা আসল। পারুল মকবুলকে জিজ্ঞাসা করলকেন এত আয়োজন? মকবুল বলল আমি আর বাঁচতে চাই না। বারবার খালি আমার বিয়া ভাইঙ্গা যায়।

আমি আত্মহত্যা করমু। মবুলের মুখে এই কথা শুইনা পারুল নিজের হাত মকবুলের মুখে চাইপা ধরল আর বলল তুমি এই মুখ দিয়া আর মরার কথা কইয়ো না। তাইলে দুইজনেই মরমু। মকবুল পারুলের কথা শুইনা অবাক হইয়া যায়। জিজ্ঞাসা করে এসব তুমি কী কও পারুল? পারুল কাঁদতে কাদঁতে বলে-হ্যাঁ, যেদিন তুমি আমার কলসি ফুটা করছ, হেইদিন তুমি আমার মনটারেও নিয়া নিছিলা, কিন্তু নিজে টেরও পাই নাই।

আমার জন্ম তোমার লাইগা। আর এই জন্যই তো বারবার তোমার বিয়া ভাইঙ্গা যাইতাছে। পারুলের কথা শুইনা মকবুলের চোখেও পানি চইলা আসল্ মকবুল বলল ভাবছিলাম জীবনে বুঝি আমারে কেউ কবুল কইবো না আর আমিও কাউরে কবুল কইতে পারুম না, কিন্তু এহন দেখতাছি......। মকবুলকে থামিয়ে দিয়ে পারুল বলল এবার তুমি এহন আমাকে কবুল কইবা। আমিও কবুল কইমু।

ধর্মমতো বিয়ার লাইগা কাজী লাগে। আসমান জমিন আল্লারে সাী রাইখা আমরা বিয়া করমু। মকবুল কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল, পারুল। পারুল মকবুলকে জড়িয়ে ধরে বলল হ্যাঁ মকবুল হ! এরপরই মকবুলের কন্ঠে শোনা গেল কবুল! কবুল! কবুল!!! **কুমিল্লার ভাষায় লিখিত **নয়াদিগন্ত এর থেরাপিতে প্রকাশিত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।