আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মকবুলের ভূত



বেচারা মকবুল মরে ভূত হয়ে গেছে তবুও তার গল্প তো শেষ হয়না। তাই মকবুলের ভূতকে নিয়ে নতুন একটি সম্পুর্ণ উপন্যাস। প্রথম কপাতা এখানে দিলাম, পুরোটা ডাউনলোড করে নিন মকবুলের ভূত ----------------------- আমি ভুতে বিশ্বাস করি না তবে ভয় পাই। কথাটা আমার জন্য একেবারে একশভাগ মানানসই। আমি ভুত বিশ্বাস করি না কারন আমি জানি ভুত বলে কিছু নেই।

কোনকালে ছিল না। যে যত বড়বড় কথাই বলুক না কেন আসলে কেউ কখনো ভুত দেখেনি। নিজেরা অকারনে ভয় পেয়েছে সেই ভয় অন্যদের দেখানোর জন্যই ভুতের গল্প করেছে। যে শুনেছে সে গল্প করেছে অন্যের কাছে। এখন সারা পৃথিবীর মানুষই শতশত ভুতের হাজার হাজার গল্প জানে।

তবে ভয় পাওয়ার বিষয়টা আলাদা। রাতের বেলা সবাই ঘুমিয়ে গেলে, চারিদিকে নিস-ব্ধ হয়ে গেলে জানালার বাইরে অন্ধকার আমগাছের দিকে তাকিয়ে মনে হয় ওখানে কিছু যেন রয়েছে। কিছু একটা গাছকে নাড়াচ্ছে। আমি জানি যে নাড়াচ্ছে সে বাতাস। বাতাসকে ভুত নামে ডাকার কোন কারন নেই।

তাহলেও অন্যদিকে মুখ করে থাকতে চেষ্টা করি। সময়সময় জানালা বন্ধ করে দেই। মনে হয় অশরীরী কিছু জানালা দিয়ে ঢুকে পরতেও পারে। তার ওপর যখন কেউ রসিয়ে রসিয়ে নিজের দেখা ভুতের কিংবা জ্বীনের গল্প করে তখন কয়েকদিনের জন্য এই বিষয়টা আরো বেড়ে যায়। যাক সেসব কথা।

যা বলতে চাইছি তা হল এতকিছুর পরও একদিন ভুতের দেখা পেলাম। সত্যিকারের ভুত। আর তারচেয়ে মজার কথা, তাকে দেখে আমি মোটেও ভয় পেলাম না। রাতের বেলা আধো ঘুমে আধো জাগরনে কার যেন অসি-ত্ব টের পেলাম ঘরের মধ্যে। খুটখাট শব্দ।

একবার মনে হল ইদুর দৌড়ে বেড়াচ্ছে। তারপর মনে হল আরো বড় কিছু। রীতিমত মানুষের মত আকৃতি। বুঝতে পারছি তার অসি-ত্ব অথচ দেখতে পাচ্ছি না। ভয় পাচ্ছি নিজেই।

সেটা কাটানোর জন্য তাকেই ভয় দেখাতে চেষ্টা করলাম। বললাম, ‘কে রে বাবা চোর নাকি ? দামি জিনিষপত্র নেই, সময় থাকতে কেটে পর। নাকি ভুত ? নিজের পরিচয়টা দাও দেখি। নইলে দেব মাথায় বাড়ি। ’ মনেমনে বললাম বাড়ি দেয়ার মত কোনকিছুই হাতের কাছে নেই।

পুরো ঘর খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। হাতের নাগালে বালিশ রয়েছে, বড়জোর সেটাই ছুড়ে মারা যেতে পারে। শুধু কথাতেই কাজ বল। সে বলল, ‘আমি মকবুলের ভুত। ’ মকবুল নামে একজনকে আমি চিনতাম।

আমার সাথে ছোটবেলায় স্কুলে পড়ত। এছাড়া অন্য কোন মকবুলকে আমি চিনি না। সেই মকবুল মারা আছে কিনা তাও জানি না। এর কথা সত্যি হলে সে মারা গেছে। মরে ভুত হয়েছে।

তারপর এসেছে আমার কাছে। মকবুলের সাথে একসময় খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল আমার। হয়ত সেকথা ভেবেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি বললে ? তুমি মকবুলের ভুত ?’ সে বলল ‘হ্যাঁ, আমি মকবুলের ভুত। আমাকে চিনতে পারছ না।

এতবছর একসাথে পড়লাম, একসাথে থাকলাম। এতদিনের বন্ধুত্ব। ’ আমার খটকা লাগল। নিশ্চয়ই কেউ ঠকবাজি করতে এসেছে। এসে এটাওটা বলে আমাকে ভোলানোর চেষ্টা করছে।

আমি বললাম, ‘তুমি বললেই আমি বিশ্বাস করব কেন ? তুমি যে ভুত তার প্রমান দাও। ’ ভুত বলল, ‘বেশ, কি প্রমান চাও ?’ আমি বললাম, ‘তুমি মকবুলের ভুত তার প্রমান কি ?’ সাথেসাথে সে গড়গড় করে মকবুলের কথা বলতে শুরু করল। তার অনেকগুলো আমি জানি, অনেকগুলো জানি না, অনেকগুলো ভুলে গেছি, অনেকগুলি নতুন করে মনে পরল। তাকে জোর করে থামাতে হল। ‘আচ্ছা, থামো-থামো।

তোমাকে মকবুলের প্রমান দিতে হবে না। তুমি যে ভুত তার প্রমান আগে দাও। ’ ভুত বলল, ‘বেশ। কি প্রমান চাও ?’ আমি ভুতের জন্য কি পরীক্ষা নেয়া যায় তা ভাবতে শুরু করলাম। একটা মোক্ষম যুক্তি পেয়ে বললাম, ‘আগে তোমার পা দেখি।

ভুতের পা পিছন দিকে থাকে। সেজন্য ভুত সবসময় উল্টোদিকে যায়। দেখি তোমার পা কেমন ?’ ভুত বলল, ‘আমার পা নেই। একসিডেন্টে আমার দুপা কাটা গেছে। আমি সেই চেহারা নিয়ে ভুত হয়েছি।

’ আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘তারমানে কারো যদি মাথা কাটা যায় তাহলে সে মাথাকাটা ভুত হবে ?’ ভুত বলল, ‘সেটাই নিয়ম। ’ আমি বললাম, ‘নিয়ম না কচু। তোমার কাছে প্রমান নেই তাই মিথ্যে কথা সাজাচ্ছ। ’ শুনে ভুত খুব মন খারাপ করল। মাথা নিচু করে এমন ভঙ্গি করল যেন কাঁদছে।

দেখে আমারও খুব খারাপ লাগল। একেবারে যেন পুরনো দিনের সেই মকবুলের কথাই মনে হল। এবারে সহজভাবে বললাম, ‘আচ্ছা, পায়ের কথা তাহলে যাক। তোমাকে কিছু একটা প্রমান দিতেই হবে। প্রমান ছাড়া আমি তোমাকে চিনব কেন ? প্রমান ছাড়া আমি ব্যাংকে গেলে কি টাকা দেবে ? নাকি ভোট দিতে দেবে ? ধরে সোজা থানায় নিয়ে যাবে।

ভুতের দেশে থানা পুলিশ এসব নেই ?’ ভুত বলল, ‘না নেই। ’ আমি চমকে উঠলাম শুনে, ‘নেই। তাহলে পুলিশ মরার পর কি হয় ? চোর মরার পর কি হয় ? দুজন পাল্টাপাল্টি করলেও চোর-পুলিশ দুইই থাকে। ’ ভুত বলল, ‘ভুতের দেশে চোর পুলিশের খেলা নেই। বড়লোক ছোটলোক নেই।

নতুন নতুন যারা আসে তারা কিছুদিন এটা ওটা নিয়ে বড়াই করে, তারপরই ঠান্ডা হয়ে যায়। এখানে কার কি আছে তাতে কারো কিছু যায় আসে না। যে বড়াই করে তারদিকে কেউ ঘুরেও তাকায় না। ’ আমি অবাক হলাম, ‘তারমানে কেউ বড়াই করে না! কেউ তার বিষয়সম্পত্তি, টাকাপয়সা, স্বাস্থ্যচেহারা, বংশপরিচয়, শক্তি এসব নিয়ে বড়াই করে না!’ ভুত বলল, ‘একবার একজন কোন বংশের কতবড় কেউকেটা ছিল তা নিয়ে বাহাদুরি দেখাতে চেয়েছিল। তখন থেকে কেউ তারসাথে কথা বলে না।

সে মরার জন্য গলায় ফাঁস লাগিয়ে তালগাছে ঝুলে থাকল কয়েকদিন। তারপর নিজেই আবার নেমে এসে মাফ চাইল সবার কাছে। ’ আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, ‘কয়েকদিন ঝুলে থাকল মানে ?’ ভুত বলল, ‘মানে মরার চেষ্টা করল। জেলখানায় ওকে ফাঁসি দিয়ে মেরেছে তো, ভেবেছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে থাকলে আবার মরবে। ’ আমি বললাম, ‘তারমানে একবার মরলে আর মরার ভয় নেই।

’ ভুত বলল, ‘একেবারেই না। ’ আমি বললাম, ‘আচ্ছা ধরে নিলাম তুমি মরে ভুত হয়েছ, কিন' মকবুল তো মরেনি। ওরসাথে বছরখানেক, নাকি বছর দেড়েক আগে ফার্মগেটে দেখা হয়েছে। দিব্যি আমার সাথে গল্প করল। রীতিমত সুস্থ সবল পাজোড়া।

বলল মালয়েশিয়া যাচ্ছে। তার পা কাটা গেল কখন আর মারাই বা গেল কখন?’ ভুত বলল, ‘সেকথা আমারও মনে আছে। আমিই তোমাকে ডেকে কথা বললাম। তুমি আমাকে নিষেধ করলে মালয়েশিয়া যেতে। তখন সেটা শুনিনি।

তারপর মালয়েশিয়া গেলাম। এয়ারপোর্ট থেকে ধরে নিয়ে গেল, আটকে রাখল। দশদিন পর ফেরত প্লেনে উঠিয়ে দিল। আমার পা কাটা গেছে দেশে ফিরে, গাড়ি চাপা পরে। আর মরেছি-’ আমার আর মরার কারন শোনার আগ্রহ হল না।

বরং মনটা একটু নরমই হয়ে গেল তার বলার ভঙ্গি দেখে। একেবারেই সেই মকবুলের ভঙ্গি। শব্দের ব্যবহার, উচ্চারন সবকিছু। হয়ত সত্যিকথাই বলছে। শেষবার যখন মকবুলকে দেখি তখন তার চেহারা দেখেও মন খারাপ হয়েছিল।

আমি বললাম, ‘বেশ, এখন আমি কি করতে পারি বল। টাকাপয়সা খরচ করতে পারব না। একটু আধটু ধান্দাপানি করে যা পাই তার পুরোটাই ঘরভাড়া দিতে চলে যায়। এরপর হাতে কিছু থাকলে খাই না থাকলে পানি খেয়ে থাকি। যদি টাকা পয়সার জন্য এসে থাকো তাহলে আগেই জানিয়ে দিচ্ছি সেটা পারব না।

’ মকবুলের পরিচয় দেয়া ভুত বলল, ‘আমি তোমাকে বিপদে ফেলতে আসিনি। আর ভুতের টাকাপয়সা প্রয়োজন হয় না। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে আমি যত যাই করি কখনো কারো কাছে হাত পাতিনি। যাকিছু পেয়েছি একমাত্র তোমার কাছেই। কখনো চাইতে হয়নি।

সেজন্যই বন্ধু হিসেবে তোমার কাছে একটু দাবী নিয়ে এসেছি। ’ আমাকে আরো কাবু করে ফেলল মকবুলের ভুত। আমি মনে করে দেখলাম আসলেই মকবুল কখনো কারো কাছে কিছু চায়নি। এমনকি বাড়িতেও নাকি খিদে পেলে খাবার কথা বলত না। ওকে খাবার জন্য ডাকলে যেত, না ডাকলে না খেয়ে থাকত।

আমার কাছে-। না, আমি তাকে বন্ধুত্ব ছাড়া অন্যকিছু কখনো দিয়েছি বলে মনে পরল না। টাকাপয়সা বা কোন জিনিশ তো কখনোই না। আমি যেন মকবুলের সাথেই কথা বলছি এমনভাবে বললাম, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। এখন কি করতে হবে বল।

’ ভুত বলল, ‘আমি তোমার সাথে কদিন থাকতে চাই। ’ আমি চমকে উঠলাম। ভুত আমার সাথে থাকবে কিভাবে ? আমার সাথে খাবে ? ঘুমাবে ? ভুতের নিশ্চয়ই খাওয়া ঘুম কোনটাই দরকার হয়না। জিজ্ঞেস করলাম, ‘সাথে থাকবে মানে কি ?’ মকবুলের ভুত আরো পরিস্কার করে বলল, ‘তোমার সাথেসাথে থাকব, যেখানে যাও সেখানে যাব আর মাঝেমাঝে কথা বলব। অন্য কেউ জানতে পারবে না।

আমি সবসময় অদৃশ্য হয়ে থাকব। অন্য কেউ থাকলে কথা বলব না। তোমাকে এসব নিয়ে এতটুকু ভাবতে হবে না। ’ আমি বিরক্ত হলাম তার কথা শুনে। মরে ভুত হওয়ার পরও তার মাথায় বুদ্ধি গজায়নি।

বললাম, ‘কিন' আমার প্রাইভেসি বলে তো কিছু আছে। সবসময় কেউ আমাকে দেখছে, আমি কি করছি, কারসাথে কথা বলছি, কি বলছি সবকিছু জানছে এটা কি কেউ মেনে নেয়। প্রাইভেসি হল গিয়ে সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধান তুমিও পড়নি আমিও পড়িনি তবু দুজনেরই সেটা মানা উচিত। সংবিধান লংঘন হল গিয়ে, সেই যাকে বলে, দেশদ্রোহিতার সামিল।

হাজতবাস, রিমান্ড, জেল-জরিমানা থেকে ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারে। ’ বলতে বলতেই মনেমনে ভাবলাম এজন্য আমাকে অনায়াসে জেলে ঢুকানো সম্ভব, লাঠিপেটা করা সম্ভব কিন' মকবুলের কে কি করতে পারে ? তাকে কোন জেলে রাখবে আর ফাসিই বা দেবে কে ? একটু আগেই তো বলল কে যেন কয়েকদিন গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলেছিল। মকবুলের ভুত বলল, ‘তোমার সমস্যা হবে এমন কিছু করব না কথা দিচ্ছি। ব্যক্তিগত আলাপেও কান দেব না। তখন দুরে দুরে থাকব।

’ আমি বললাম, ‘সেকথায় বিশ্বাস কি ? আমি যখন জানতে পারছি না তখন সেটা করতেও পার। ’ মকবুলের ভুত বলল, ‘ঠিকই বলেছ। তাহলে বল দেখি- তোমাদের সরকার যখন ঘোষনা দেয় তোমাদের প্রত্যেকের টেলিফোন আড়ি পাতা হবে, প্রত্যেকের চিঠি খুলে দেয়া হবে, ঘরেঘরে মাইক্রোফোন-ক্যামেরা লাগানো হবে তাহলে কি হইচইটাই না কর তোমরা। যখন না জানিয়ে করে তখন কি কর ?’ আমি মনে মনে বললাম মরে গিয়ে মকবুল অনেক যুক্তি শিখেছে। ওর মুখ থেকে এসব কথা বেরুচ্ছে ভাবাই যায় না।

তখনই মনে হল ভুত হয়ত মনের কথাও পড়তে পারে। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি মনের কথা জানতে পার। ’ মকবুলের ভুত বলল, ‘না। ’ আমি ঠিক আস্বস- হলাম না। তাহলেও আর কথা বাড়ালাম না।

বললাম, ‘বেশ তোমার যদি ইচ্ছে হয় থাকো। কিন' এখন আমাকে ঘুমাতে হবে। ’ মকবুলের ভুত বলল, ‘আমি জানতাম তুমি না করবে না। ’ আমি ঘুমাতে চেষ্টা করলাম।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।