:)
আজকাল অনুজদের সাথে কথা বার্তায় একটা বিষয় খুব কানে বাজে – সেটা হলো, ভাইয়া আমি রাজনীতি ঘৃণা করি। আমি নিশ্চিত, যারা এই লেখাটি পড়ছেন তাদের বেশিরভাগই এখন মাথা দুলিয়ে এক মত পোষণ করছেন। এখন বিষয়টা হচ্ছে – আমরা বর্তমান অপরাজনীতি’র কথাই বলছি, নাকি, রাজনীতি ব্যাপারটার ই অপব্যাখ্যা করছি! ফাকিটা রয়ে যায় সেখানেই, আমাদের এতটুকু বোঝার সময় ঠিকই আছে যে, যে রাজনীতি এই দেশে চলছে, সেটা খারাপ- বর্জনীয় – শুধু এতটুকু বুঝেই আমরা সেটা বর্জন করে মুখ ফিরিয়ে বসে আছি। আমাদের ধারনা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে বুঝি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে!
বর্তমানে একটা কথা শব্দ খুব জনপ্রিয় – “অরাজনৈতিক”। এই শব্দটি হোটেল, মোটেল, স্কুল – কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয় সব খানে দেখবেন, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এই শব্দটির ফায়দা তোলে।
যাচ্ছে বছরে ২টি বিশালাকার আন্দোলনেও এই শব্দের জয়জয়কার। আসলে এই শব্দটার মানে কি! আর রাজনৈতিক কিছুই কি খারাপ? বলা হয় – অমুক জায়গা – তমুক জায়গা রাজনীতি ও ধূমপান মুক্ত এলাকা!! এর মানে কি! দুইটাই কি একই ভাবে মানুষের ক্ষতি করে চলে?
আমি জানি এই লেখার পাঠক বেশির ভাগ তরুণ, তাদের জন্যই বিশেষ করে কী-বোর্ড ধরা...
প্রথমে আসি – রাজনীতি কাকে বলে? – না, আমি রাজনীতির পাঠ দিতে আসিনি – সে যোগ্যতা ও এখনো আমার নাই, আমি শুধু আমার কিছু চিন্তা ছড়িয়ে দিতে চাই – আদি অনন্ত কাল থেকে জাতীয় রাজনীতি হচ্ছে সাধারণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যেয়ে মানুষের সেবা করা, এই লক্ষ্যে কাজ করা- তা শুধু সে মানুষের সেবা করবার জন্যই – নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নয়! রাজনীতির আদি দর্শন এটাই – মানুষের সেবা। আমরা এই কথা টাই ভুলতে বসেছি – বা , যদি বলেও থাকি – সেটা শুধুই বিশ্বাস ছাড়াই বলার জন্যই বলা।
আমাদের দেশে তাহলে কি হচ্ছে – এটাকে কি আদৌ রাজনীতি বলা যায়? কিছু দলের ক্ষমতার লড়াই হচ্ছে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, এইটি কি মানুষের জন্য রাজনীতি?
দলগুলো মারামারি করতে থাকুক, কিন্তু আমরা কি করতে পারি? আসুন, গোড়া থেকে শুরু করি। শুরুটা হোক বর্তমান দিয়েই।
বাংলাদেশ বর্তমানে কেমন চলছে? এর ভবিষ্যৎ কি? রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক ভাবে আমার দেশের প্রতিষ্ঠা এসেছে কতটুকু? আর আমরা দূর ভবিষ্যতে একে কোথায় দেখতে চাই? কতটুকু-ই বা দেখা যেতে পারে!
এক একটি দেশের সাফল্য সম্পূর্ণ নির্ভর করে সে দেশের জনসাধারণের গুনগত মানের উপর। সুশিক্ষা, স্বাস্থ্য এর দিক দিয়ে আমাদের জনসাধারণের অবস্থা কীরূপ? তথ্যগত বিশ্লেষণের দিকে গেলেও দেখা যাবে আমার দেশের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা নাজুক। আমরা হাজার উন্নয়নের চেষ্টা করতে চাইলেও কখনো তার প্রকৃত সফলতার মুখ দেখতে পারিনা কেননা শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের করুন দশা আমাদের নিজ অধিকার ও স্বপ্নের পথ দেখতে দেয়না। যতদিন না আমরা সুশিক্ষা ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী দেশের জনগণ প্রস্তুত না করছি ততদিন পর্যন্ত এই দেশের মানুষ তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবেনা, ততদিন গুটিকয় মানুষ লিভারের টানে দেশ চাইলেই সোজা করতে পারবে না। এটা সম্ভবও না।
একটি দেশ কে এগিয়ে নিতে পারে শুধু এর জনগণ-ই। এই দেশকে আমরা ৫০ বছর পর কোথায় দেখতে চাই তাও আসলে আমরাই ঠিক করবো। বড় নেতা শুধু তখনি জন্মায় যখন মানুষ তাদের প্রাণের কথা, স্বপ্নের কথা’র ঘোষণা শুনতে চায়। আর এই স্বপ্ন দেখতে, চাই সুস্থ দেহ – সুন্দর মনের সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী।
আমার দেশের প্রান্তিক মানুষের পেটে যেদিন থেকে ভরপেট ভাত যাবে, আমি নিশ্চিত, খুব বৈজ্ঞানিক ভাবেই সে সমাজে তার পরবর্তী চাহিদা মেটাতে চিন্তা শুরু করবে।
এই রকম চিন্তার উন্নয়নের মাধ্যমেই কিন্তু সার্বিক ভাবে রাষ্ট্রের উন্নয়ন সাধন হয়। মানুষ প্রথমে ব্যক্তি উন্নয়নের ধারায় এসে একসময় বুঝতে শেখে যে সমষ্টিক উন্নয়ন ও জরুরী। এর ফলেই এক সময় সারা দেশের মানুষই একই ধারায় একই লক্ষ্যের দিকে ধাবমান হতে থাকে।
ক্ষুধা নিবারণের পর তার সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এর প্রয়োজনীয়তা তখনি আসবে যখন তার শিক্ষা থাকবে। এই প্রক্রিয়া চলমান, এবং শিক্ষার প্রভাব ও বহুমুখী।
সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
শ্রদ্ধেয় আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার তার একটি বই এ বাঙ্গালীর পশ্চাদপদতার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। বৈজ্ঞানিক ভাবেও এই কথা প্রমাণিত যে সু-স্বাস্থ্য মানুষের কর্মদক্ষতা ও দৈনন্দিন কার্যক্রম, চিন্তা-চেতনা কে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সহজ ভাষায় বলতে গেলে, নিজের ভালো করতে চাইলে, নিজ স্বার্থ বুঝতে হলে আগে নিজ সু-স্বাস্থ্য প্রয়োজন। ব্যক্তি থেকে সমষ্টি, গোষ্ঠী থেকে জাতি – সবখানেই সু-স্বাস্থ্যের আলো – সু শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া আবশ্যক।
ব্যক্তি জীবন থেকেই চিন্তা করুন, যেমন, একজন দিন মজুর – সে সকাল বেলা সারা দিনের কাজের কন্ট্রাক্টে খেটে দিন চুক্তির কাজ সেরে বাসায় ফেরে – তার কাছে জীবন বড়ই কঠিন বাস্তব। তার পেটে খাবার জোগানোতেই সময় চলে যায়, তাই তাকে যদি বলা হয় খাবারের উচ্ছিষ্ট সঠিক যায়গায় ফেলবার কথা, ট্রাফিক আইন মানবার কথা, তার কানে তো সেটা ঢোকার কথাও না, আশা করাটাও বোধ করি ঠিক না। এখন অনেকে বলতে পারেন ভরা পেট খেয়ে কয় জনই ময়লা সঠিক যায়গায় ফেলছেন, ট্রাফিক আইন মানছেন ! মানছি – কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে – ক্ষুধা পেটে পৃথিবী গদ্যময় – পূর্ণিমার চাঁদ ও ঝলসানো রুটি। তাই ক্ষুধা নিবারণের পরই একমাত্র স্বাভাবিক বিচার বিবেচনা খরচ করা যায়, কাউকে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেয়া যায়!
যদি সমাজের অনাহারে থাকা মানুষ মুখে খাবার তুলে দেয়া যায়, তাহলে এরা পরবর্তীতে খাবারের প্লেট চাইবে, তা ধুতে সাবান চাইবে। সেটা রাখার জন্য সোপ কেস চাইবে।
এইভাবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে যখন তার চাহিদা বাড়বে – ভূমি সংস্কারের রূপরেখায় রাষ্ট্র যদি তার শ্রমের যথাযথ মূল্য দিতে পারে, একসময় এই শ্রেণীর জন্যই সমাজে বিরাট চাহিদা ক্ষেত্র তৈরি হবে। আর তাতে যোগান ও বাড়বে – উৎপাদন বাড়বে – সমাজের অর্থনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হবে।
সমাজে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বার সারা দেশের সকলের জন্য সর্ব স্তরে উন্মুক্ত রাখতে হবে। দেশের গরীব জনগোষ্ঠীকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে অধিক মনোযোগী হতে হবে। উচ্চতর শিক্ষার পথ সুগম করাও সরকারের দায়িত্ব।
আর শিক্ষা আর খাদ্যর পথ ধরেই আসতে পারে সু-স্বাস্থ্য। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এই শিক্ষিত জনগণের থেকে শক্তিশালী আর কিছু নাই। এরা চাইলে সব পারে! আপনি আমি চাইলে হবেনা, দেশের আপামর জনগণ কে তাদের ভেতরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের আলোয় প্রস্ফুটিত হয়ে স্বপ্নের জানান দিতে হবে। তাহলেই শুধু এই দেশের সত্যিকারের পরিবর্তন শুরু হতে পারে।
যতই সিমপ্লিফাই করার চেষ্টা করি না কেনো, এই সকল ফ্যাক্টর গুলো অনেক কিছুর সাথে সম্পর্কিত।
একটির ফলাফল আরেকটির উপর জড়িত। তাই আসুন আরেকটু কমপ্লেক্স এ চিন্তা করি...
দেশ গড়তে প্রথমে চাই এমন এক সরকার ব্যবস্থা যারা কিনা অন্তত দেশের জনগণের শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের সুযোগ নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের সরকার ব্যবস্থা তো জনবান্ধব না, তাহলে কিভাবে এই শিক্ষা, স্বাস্থ্যের প্রভূত উন্নয়ন আসবে? এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি বর্তমান ছাত্র সমাজ, সুশীল, বুদ্ধিজীবী, মিডিয়া কর্মী, অনলাইন এক্টিভিস্টদের ভূমিকা রাখার ক্ষেত্র আছে। যে সরকারই আসুক না কেনো, শিক্ষা আর স্বাস্থ্য খাতে একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে হাটতে হবে। না হাঁটলে সরকারকে বাধ্য করতে হবে – সুখের বিষয় হচ্ছে এই দুই খাতে বিনিয়োগ কে পশ্চিমা বিশ্ব অথবা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানি গুলো থ্রেট হিসেবে দেখেনা।
যদিও বিভিন্ন সময়ে তারা কৃষিখাত কে পরনির্ভর করে রাখতে চায়, চায় এই সেক্টরে ভর্তুকি কমিয়ে দিতে, তবু সরকারের সামান্য সদিচ্ছাই এই চাপ সহ্য করে নিতে খুব সক্ষম অন্তত ট্রেন্ড তাই-ই বলে!
ধরে নেই, এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ-ই কাঙ্ক্ষিত সুশিক্ষা ও স্বাস্থ্যর আলোয় পৌঁছাবে। এরপর আসবে সমষ্টিক উন্নয়নের স্বপ্নের কথা। সাউথ এশিয়ান রিজিওনের এই এলাকার মানুষ কখনোই রুল করেনাই, সারা জীবন শাসিত হয়ে এসেছে। তাই আমাদের রক্তে শাসনের বীজ আসেনাই। ধরেই নিচ্ছি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের শিক্ষিত জনগণ চাইবে শুধু মাত্র সত্যিকার অর্থে স্বাধীন সার্বভৌম, পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী, প্রাকৃতিক বিপর্যয়মুক্ত এক বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
আর এই ভিশন-ই হতে পারে এই দেশের রাজনীতির লক্ষ্যমাত্রা।
যখন দেশের জনগণ সত্যিকার অর্থে সচেতন হবে, তখন বর্তমানের যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করতে ও বেগ পেতে হবেনা বরং রাজনীতির সবখানেই একটি পজিটিভ কম্পিটিশন হিড়িক পড়তে বাধ্য হবে আর তখনি সত্যিকারের নেতা আসবে। আসবে নতুন দিনের দিকপাল। শুরু হবে নতুন দিনের রাজনীতি।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।