অন্ধকার রাতে নিজস্ব নক্ষত্রের পাহারায়
অনেক চেনা কবরের অচেনা অন্ধকারে
কংকালের গলা জড়িয়ে ধরি
মা, আমার গায়ে খুব জ্বর! (পতন-১)
কবি সুমন প্রবাহন ১৯ এপ্রিল আত্মহত্যা করেছেন। এই মুহূর্তে তিনি হয়তো তার কবিতার লাইনগুলোর মতোই মায়ের কংকাল জড়িয়ে বলছেন `মা, আমার গায়ে খুব জ্বর'। কেননা সুমন প্রবাহনের কবর হয়েছে মায়ের পুরনো কবরের ওপরই। কবিরা নাকি অনেক কিছু আগে থেকেই টের পান, সুমনও কি টের পেয়ে গিয়েছিলেন যে খুব শিগগিরই শায়িত হতে হবে তাকেও মায়ের কবরের মধ্যে। নাকি এভাবে মায়ের কবরে শায়িত হওয়ার ব্যাপারটা ছিল তার সিদ্ধান্ত!
সেদিন বিকেলে যখন মোবাইলের শব্দে দুপুরের ঘুম ভাঙে, খুব চমকে গিয়েছিলাম অভিজিত দাশের কান্না কান্না কণ্ঠ শুনে, `সুমন প্রবাহন সুইসাড করেছে'।
সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে পড়ছিল নব্বই দশকের কবি শামীম কবিরের কথা। মনে পড়ছিল কথাসাহিত্যিক কায়েস আহমেদের কথাও। এই দু’জনের কথা ওই মুহূর্তে হঠাৎ কেন মনে পড়ছিল তা ঠিক বলতে পারব না, হয়তো ওই দু'জনও নিজ মৃত্যুর ক্ষেত্রে ওই একই পথ বেছে নিয়েছিলেন বলেই।
শুনেছি সুমন এর আগেও দুবার চেষ্টা করেছিলেন আত্মহত্যা করার। কিন্তু কেন তার বারবার এই জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টা? তার পরিপার্শ্বই কি এর জন্য দায়ী? এসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমাদের কখনোই জানা হবে না।
রুশ কথাসাহিত্যিক ম্যাক্সিম গোর্কিও চেষ্টা করেছিলেন দুইবার আত্মহত্যার; কিন্তু তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল আর এর ফলাফল স্বরূপ বিশ্ব সাহিত্য ধন্য হয়েছিল তার অসংখ্য সৃষ্টিশীলতায়। সুমন প্রবাহন বেঁচে থাকলেও হয়ত বাংলা কবিতা ধন্য হতো নতুন নতুন কবিতাতেই, কেননা সুমনেরই একটা কবিতাতে আছে, `আমাদের শিল্পমূল্য কতটুকু/এ নিয়ে সমালোচকরা যাই-ই বলুন /আমরা কিন্তু কবিতা লিখবই'।
সুমন প্রবাহনের জন্ম তারিখ জেনে দেখলাম, সে তো প্রায় আমারই বয়সী সদ্য ত্রিশ পেরুনো এক তরুণ! কোনো কবিতার বই বের করেননি। `বুকটান'
নামে একটি ছোটকাগজ সম্পাদনা করতেন। তার সঙ্গে আমার বিভিন্ন সময়ে দেখা হয়েছে হয়তো চার-পাঁচবার; কিন্তু কখনোই বেশি একটা কথা হয়নি।
ওকে দেখে মনে হতো চুপচাপ থাকতেই পছন্দ করে। হয়তো ওই চুপচাপ স্বভাবের মধ্যেই ও লালন করত নিজের ভেতরের বিষাদ, আনন্দ ও দুঃখবোধকে। সাহসের সঙ্গে উপভোগ করত নিজস্ব একাকিত্বকে এবং প্রতিনিয়তই কথা চালাচালি করত নিজের সঙ্গে নিজের। ফলে তার পক্ষেই বলা সম্ভব হয়েছিল `একাকিত্ব বোধ তৈরির অনেক আগে থেকেই আমি একা'!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।