কবি
আমার কথা বেশি নয়। দুই চারটা। আমাদের গড় পড়তা রাজনীতি চেতনার তিন রূপ। ধর্মনিরপেক্ষতা, ধার্মিকতা, ধর্মান্ধতা। এই তিনই মূলত রাজনীতি সম্পর্কিত।
আমরা হয় ধর্মনিরপেক্ষ, না হয় ধার্মিক, নয়তো ধর্মান্ধ; কেউই আমরা ধর্মহীন নই। কারন ধর্মহীনতায় রাজনৈতিক ফায়দা নেই, বরং ফাঁপর আছে আরও বেশি। সোজাভাবে, 'আমি ধর্মনিরপেক্ষ' সাজলেই একটা সুবিধাগত অবস্থান আমরা যেমন পেতে পারি, তেমনি অতি ধর্মান্ধ সাজলেও জমিনের ফল মিঠা বৈ চুকা হয় না। এই ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে ধর্মান্ধের সাপে নেউলে লড়াইয়ের মাঝে উলখাগড়া প্রান ধার্মিক বলির পাঠা। সেই আসলে উভয়ের লক্ষ্য।
তবে শেষ পর্যন্ত ধার্মিক একটা পক্ষে ভিড়েই যায়। ধার্মিক হলো উভয়চর। সে উদার এবং সংবেদী। ফলে উদারতার দোহাই দিয়ে তাকে যেমন নিরপেক্ষতার চাতুরির ভেতর আনা যায় তেমনি তাকে সংবেদনশীলতার ওজু করিয়ে তাকে আধাধর্মান্ধ করা যায়। একারনে ধর্মনিরপেক্ষ বা ধর্মান্ধ উভয় পক্ষ তাদের একটা সমর্থন লাভ করে।
তবে সে ময়দানে নামে না। তবে তাকে ময়দানে না-নামানোটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সমর্থনই অনেক বড় ব্যাপার। এই সমর্থনের ফলে একটা সাম্যাবস্থা বিরাজ করে। এই ধার্মিক নিরপেক্ষতা বা ধর্মান্ধতার হাতি দর্শন পূর্বক কোন না কোন একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
ফলে বায়তুল মোকারম কুরুক্ষেত্র বিষয়ে জনগন ব্যক্তিগত ভাবে একটা সিদ্ধান্তে এস যায়। যদিও সে কথা বলে না। তবে আলোচনা সমালোচনা ওঠে, থামতেই চায় না এই ঝড়। তবে এই নিয়ে কথা বলে দুচার জন। তবে তারা কারা? এরা আমাদের বুদ্ধিজীবি শ্রেণী।
এরা কথা বলে কারন তারা ধর্মিক শ্রেণীটাকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসতে চায়। এই নিয়ে আসাটাই বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর কাজ। এরা আসলে রাজনীতির সেবক এবং দার্শনিক গুরু। আমাদের ধার্মিক শ্রেণী কোন একটা পক্ষে যায় বটে। এই যাওয়ানো পর্যন্তই এদের কাজ।
এই ধার্মিক হলো রাজনীতির চালিকা শক্তি। ধার্মিকের বুদ্ধিজীবি প্রদত্ত নাম 'মধ্যবিত্ত শ্রেণী'। ফলে তারা মধ্যবিত্তের দোহাই টেনে ধর্মটাকে লুকিয়ে রাখেতে চায়। 'মধ্যবিত্ত শ্রেণী' নামক যে বস্তুর দেখা পাওয়া যায় তা নয়া আমদানি। গোপনে চলে ধর্ম ব্যবসা।
যাতে তাদের ধর্মীয় উন্মাদনা কারও চোখে পড়ে না যায়। ফলে বুদ্ধিপেশাজীবিরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে ধর্ম নিয়ে কথা বলে। কেননা তারা আমাদের নানা প্রতিষ্ঠানের জনক, পালক এবং প্রতিপালক। নিজ নিজ জায়গাকে জায়েজ করতেই তারা ধর্মনিরপেক্ষতা বা ধর্ম নামক হ্যামিলনের বাঁশিতে সুর তোলে। এই মায়া বাশিঁর সুরে ধর্মপ্রানকে কুক্ষির নিচে রেখে আপনার অর্থ সম্পদের সাথে প্রতিপত্তি রক্ষা করা যায়।
ফলে আমাদের দেখতে হয় বাঁশিটা কার হাতে এবং কি সুরে বাজে। ''বাঁশি তুমি ভেঙে ফেলো সে আমাকে বলে না কিছু''। বাদক সব বাজায় এবং বলে। এরা হলো আমাদের প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি। এর বাইরে আরেক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি আছে এরা বুদ্ধিপেশীর সহগ।
এরা প্রথম শ্রেণীর সাথে চলক হিসাবে কাজ করে। এবং নিজ অবস্থানে সদা পরিবর্তনশীল। এরা ক্ষমতা বা অর্থ সংরক্ষণপ্রত্যাশী নয়। মাত্র টিকে থাকা, পিতলের মেডেলের মত এরা ঝুলে থাকতে চায়, ঝুলে থাকে। এরা বুদ্ধিপেশাজীবি হিসাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং কম ক্ষতিকর।
আর এর বাইরের বাকি যে বুদ্ধিছুতার তারা প্রচারক। এরা প্রচারে প্রসার ঘটায় নানা তত্ত্বের। গ্যাস ভরা লাল নীল বেলুনের মত এরা বাতাসে ওড়ে আর হাওয়া দেয় যখন তখন। এরা যশ প্রত্যাশী তবে হাওয়াই মিঠাই, টিকতে পারে না। উভয় দলে তাকে আমরা যে নামেই ডাকি ধর্মনিরপেক্ষ বা ধর্মান্ধ সবখানেই এই তিন জাতীয় বুদ্ধিপেশী, বুদ্ধিপেশাজীবি এবং বুদ্ধিছুতারের দেখা মিলবে।
আমাদের সমস্ত বুদ্ধিপেশীদের এক নম্বর কথা ধর্ম। বুদ্ধিপেশী হতে প্রথমত ধর্মীয় অবস্থান যে কোন এক পক্ষের কাছে পরিস্কার করতে হবে। ( যাদের তাবেদারি করতে হয়) । আর বুদ্ধিপেশাজীবি হলে উক্ত বুদ্ধিপেশীর অপ্রকাশ্য সমর্থন, গোপন গোপন খেলা। আর বুদ্ধিছুতার হতে হলে এই প্রচারে মাইক ম্যান হতে হবে।
এই তিন জাতের বুদ্ধি দাতা ও ত্রাতা মিলে আমদের বুদ্ধিবৃত্তির জীব বৈচিত্র্য।
আমাদের দেশে শত শত দল, তবে রূপ তার দুই। একটা ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবধারী, তবে এর ভার বওয়ার সাহস এর নেই। আর একটা সরাসারি ধর্মান্ধতার সাথে যুক্ত। এখন আপনাকে দার্শনিক যে কোন এক পক্ষেই যেতে হবে।
তারা শেষ পর্যন্ত যোগদান কর্মসূচী পালন করে। আমাদের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, নেতা, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, সচিব, ছাত্র, তার্কিক, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আবৃত্তিকার, গোপন সংগঠক, চোর, ডাকাত, স্যাচোর, রাজাকার সবাই কোন না কোন পক্ষের লোক। পক্ষপাত পেশাগত উন্নতির পরিচালক। ফলে সবাই কাতারে কাতারে নাম লেখাচ্ছে। কার আগে কে যাবি, দে দৌড়... দৌড়ে নাম লেখানোর প্রতিযোগিতা চলছে।
কারন শোনা যাচ্ছে সামনেই আমাদের সোনার হরিণ নির্বাচন। ফলে এই সমস্ত পেশাজীবিদের উপস্থিতি একটু ঘন হয়ে আসছে। পক্ষপাতহীন বুদ্ধিজীবির দেখা মেলা এখানে ভার। ফলে ধর্মনিরপেক্ষতার ফাঁকা আওয়াজ ও ধর্মান্ধতার গুরু গম্ভীর চিৎকার উভয়ই প্রতিক্রিয়াশীলতা। কেউ কারো থেকে কম যায় না।
এই প্রতিক্রিয়াশীলতার ওজনে তারা উভয়েই কিনে নিতে চাইছে টাকার পাহাড়। এই প্রতিক্রিয়ার মাঝেই আমাদের দিন গুজরান হয়। মাঝখান দিয়ে আমাদের দেহ থেকে ছাল ছাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। কেউ সে চিৎকার শোনে না।
সমস্ত দোষ আর্ন্তজাতিকতার!! আমাদের কি আসলে কোন দোষ নেই? রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যর্থতা আরও দীর্ঘজীবি হচ্ছে।
এই ব্যর্থতার মিঠাই মন্ড বুদ্ধিজীবিরাই বেশি ভোগ করে। কারন নেতাদের পাবলিক ইমেজের ব্যাপার আছে, বছরের পর বছর জেলের ব্যাপার আছে, ভোটে হারার ভয় আছে। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবিদেও সে ভয় নাই কেননা তাদের এ সমস্ত দেখে খেতে হয় না। তারা সর্বদা সুবিধাবাদী অবস্থানে থাকে। ফলে এই রাষ্ট্রে বুদ্ধিজীবিতার চেয়ে ভালো কোন পেশা আর নেই।
করে খাওয়া বুদ্ধিজীবিদরে বিনাশ ছাড়া এই দেশের কোন উন্নতি সম্ভব না, তা আজ বুঝলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।