আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসলিম এইড, আরিফ জেবতিকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আর আমার সামান্য সংযুক্তি

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

প্রথমেই আরিফ জেবতিকে ধন্যবাদ, প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতার Click This Link মাধ্যমে একটা ধর্মের নামে প্রতারনার একটা চিত্র প্রকাশ করার জন্যে। জামাত-শিবির (মুলত মৌদুদীবাদীরা) যে ধর্মের নামে কতটা নীচে নামতে পারে তার একটা দলিল হয়ে থাকবে এই অভিজ্ঞতার বিবরনটি। ধন্যবাদ, আরিফ জেবতিক। এই সুযোগে আমার একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতার কথা বলি। সিডরের পরপর কর্মক্ষেত্রে বাঙালীরা অর্থ সাহায্যের বিষয়ে আলোচনা শুরু করলো।

সবাই মিলে আমাকে দায়িত্ব দিলো কোথায় সেই অর্থ পাঠানো যায় - তা নির্ধারন করতে হবে। সব কিছু বিবেচনা করে রেডক্রিসেন্টে কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু একজন মুসলিম এইড নামের একটা সংস্থার বিষয়ে বেশ জোরালো বক্তব্য রাখায় আমার প্রস্তাব নিয়ে একটু দ্বিধার সুস্টি হয়। কোন ধর্মীয় সাইনবোর্ডের নীচে কোন প্রতিষ্টানের বিষয়ে আমার একটু খুত খুতে ভাব আছে। এর কারন হলো এদের জবাবদীহিতা কম।

এরা যেহেতু ধর্মীয় অনুভুতিকে ব্যবহার করে তাই এদের হিসাব নিকাশ নিয়ে কেউ তেমন একটা উচ্চবাচ্য করে না। আমি শুধু মুসলিমের কথাই বলছি না - অন্য ধর্মীয় চ্যারিটি গুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের অসংল্পনতা দেখেছি। যেমন ক্রিস্টিয়ান প্রতিষ্টানগুলো যেভাবে এইডস এর কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করে প্রাইভেট জেটে আফ্রিকায় বিলাস বহুল ট্যুর করে তা সত্যই অবাক করার মতো। যাই হোক - আগে কথায় আসি। কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে বেশ বড় অংকের ডলার উঠে ছিলো ।

কিন্তু গিন্নি একটা সমস্যা তৈরী করলো। ও এনটিভির বিজ্ঞাপনে দেখেছে মুসলিম এইডএর কিভাবে ওরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে সাহায্য করছে - যা সত্য। ই প্রসংশা পাওয়ার মতো । ওর কথা হলো মুসলিম এইড ভাল হতে পারে - একটু যাচাই করা যাক। আমি ইন্টারনেটে দেখলাম বিরাট ব্যপার স্যাপর।

কিন্তু মন থেকে পুরোপুরি সায় দিচ্ছিলোনা - কারন বিজ্ঞাপন তো আর খবর না আর বিজ্ঞাপন বানানো হয় প্রফেশনাল দিয়ে - ভাল হতেই হবে। আমার দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখে গিন্নিও বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে - কারন ওর একটা অংশ ছিলো সেই সংগৃহিত অর্থের মধ্যে। এক পর্যায়ে গিন্নিকে বললাম - দেখো হয়তো কোন রাজাকার এই সংস্থা চালাচ্ছে। গিন্নি এতে বেশ বিরক্ত হয়ে বললো - মুসলিম নাম দতেখেই তোমার রাজাকার মনে হচ্ছে। তবে সত্য বলতে কি, কথাটা খুব একটা ভেবে বলিনি।

কিন্তু আমার একটা বিশ্বাস - জামাতি/রাজাকারগোষ্ঠী পিছনে না থাকলে এতো সুন্দর ফটো তুলে এনে টিভিতে দেখিয়ে টাকা উঠাতো না। ধর্মপ্রান মুসলমানরা গোপনেই দানের বিষয়টা সারতে চায় - আর তাদের ভাষাটাও হয় সহজ সরল। কিন্তু এরা পুরোপুরি পশ্চিমা প্রফেশনালিজমের সাথে ধর্মকে মিশিয়ে একটা করুন রসের আবেশে মুসলমানদের ওয়ালেটের দিকে লক্ষ্য নির্ধারন করেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রায় এক সপ্তাহ চলে গেল। আমি কিছুটা দ্বন্দ্বের মধ্যে - রেডক্রসে না কি প্রধান উপদেষ্টার ত্রান তহবিলে ডলারগুলো পাঠাবো।

মুসলিম এইডে পাঠাবো না - মোটামুটি স্থির করে ফেলেছি - কিন্তু তার জন্যে ভাল একটা যুক্তির দরকার। সেই যুক্তিটা এনে দিলো মুসলিম এইডের এটিভিতে প্রচারতি তিন ঘন্টার সরাসরি প্রচারিত ফান্ডরাইজিং ক্যাম্পেইন অনুষ্টানটি। তিনদিন বিজ্ঞাপনী প্রচারনার পর যেদিন ফান্ডরাইজিং অনুষ্টান শুরু হলো - আমি তখন কাজে। গিন্নি বেশ আগ্রহ নিয়ে অনুষ্ঠান দেখছে - হঠাৎ আমার কাজের ফোন বেজে উঠলো। গিন্নি উত্তেজিত কন্ঠে বলেছে - "তুমি কিভাবে জানতে যে মুসলিম এইডে রাজাকার আছে?" আমি বললাম - "আমার মনে হয়েছে।

" - তুমি ঠিক। এই মাত্র একটা ঞটনা হয়ে গেল। যখন ফান্ডরাইজিং এর অনুস্ঠান সরাসরি দেখাচ্ছে - উপস্থাপকের পাশ এবসে ছিলো এক ব্যক্তি - একটা টেলিফোনে ওয়াশিংটন থেকে একজন ভদ্র মহিলা উপস্থাপকের সাথে বেশ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেছে। ভদ্রমহিলা পাশে বসা লোকটিকে একটা আল-বদর হিসাবে চিহ্নিত করে তার পিতার হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত লোকটির সাথে মুসলিম এইডের সম্পর্ক জানতে চেয়েছে। কিন্তু উপস্থাপক সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফোন বন্ধ করে বলছে - আপনারা সিডর বিষয়ে কথা বলুন।

এদিকে ক্যামেরা যখন সরিয়েছে - পাশে বসা আল-বদরটা সেখান থেকে সরে গেছে আর তাকে টিভির পর্দায় দেখা যায়নি। এই ঘটনা পর টরন্টো ও অন্যান্য শহর থেকে টেলিফোনে প্রশ্নকারীরা মুসলিম এইড, জামাত আর পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক বিষয়ে প্রচুর প্রশ্ন করলে উপস্থাপক বিরক্ত হয়ে যায় আর বিষয়ের বাইরে প্রশ্ন না করতে বলছে। ঘটনার পর পুরো অনুষ্ঠানে ছন্দপত হয়- ফলে ফান্ডরেইজিং তেমন হয় নি। এর পর গিন্নীর পক্ষ থেকে মুসলিম এইডএ বিষয়ে আর সমর্থন থাকেনি। মুসলিম এইডের ফান্ডরেইডিং ক্যাম্পনেইনের অনুষ্ঠানের নামে আল-বদরকে উপস্থাপনে গিন্নী মর্মাহত।

তবে আমি তেমন একটা অবাক হয়নি। কারন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দেখেছি - যদিও জামাতিরা মিলাদকে বেদাত হিসাবে বিবেচনা করে - তারপরও জামাতি নেতারা মিলাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করার চেষ্টা করেছে - যা ঠেকাতে যথেষ্ঠ ঝামেলা করতে হয়েছিলো। যেনতেন ভাবে ধর্মীয় লেবাসে রাজাকার- আলবদরদের পুর্নাবসন ও রক্ষা করাই জামাত নামক প্রতিষ্ঠানটির মুল কর্মসূচী - এই বিষয়টা জেনে দীর্ঘকাল আগেই। মুসলিম এইডের নামে ধর্মের আড়ালে ধর্মপ্রান প্রবাসীদের অর্থ দিয়ে উপমহাদেশে মৌদুদীবাদের প্রচার ও প্রসার ঘটনানোর চেষ্টার বিষয়টা বোধ হয় আর আড়াল করা গেল না। আশা করি প্রবাসীরা সাইনবোর্ডে ধর্ম দেখে আর বিভ্রান্ত হবেন না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.