সত্য কথা তিতা হলেও বলতে দেরী করি না...
এইসব তালিকাবাজের আসল মতলব ভিন্ন
- ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, মামলাবাজ, বন্দুকবাজ, নকলবাজ, দলবাজ এমনি সব বাহারি ‘বাজে’র কথা আমরা দীর্ঘকাল ধরে শুনে আসছি। গত ৩রা এপ্রিল এই সারিতে নতুন নাম যুক্ত হলো- তালিকাবাজ। এ রকম ‘বাজ’যুক্ত নামওয়ালাদের কখনও ভালো মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। এই যে বিশেষ্যের শেষে ‘বাজ’ যুক্ত করে বিশেষণ করা হয়েছে, সেটা ভালো অর্থে করা হয়নি। মামলাবাজ মামলা করে কাউকে ফাঁসিয়ে দিতে চায়।
তেমনি এই নব্য-আবির্ভূত তালিকাবাজরা তালিকা দিয়ে কাউকে না কাউকে ফাঁসিয়ে দিতে চায় বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ৩রা এপ্রিল স্বগঠিত ওয়ারক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির নামে জনৈক ডা. এমএ হাসান ১৫৯৭ জনের একটি নামের তালিকা প্রকাশ করে, তালিকাভুক্তদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিন্হিত করেছেন এবং এদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে আরও ‘যুদ্ধাপরাধী’র নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। অর্থাত তালিকা বাণিজ্য চলবে।
বাংলাদেশে বিভেদাত্মক একটি পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিরোধী ফায়দা হাসিলের জন্য দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা অনেক দিন ধরেই ততপর রয়েছে।
বর্তমান অনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বহীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর্বত প্রমাণ ব্যর্থতা। সে ব্যর্থতা থেকে জনগণের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়ার জন্য এসব ইস্যুতে সরকার নীরব ভূমিকাই পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু একটার পর একটা নন-ইস্যুকে সামনে এনে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস অব্যাহতই আছে।
এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক চাল এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যু। আইন নেই, আদালত নেই, গ্রহণযোগ্য কোনো কমিটি নেই, কতৃ্ত্ব নেই, একজন অজ্ঞাত অচেনা লোক একটি তালিকা নিয়ে এসে হাজির হলো।
বললো, এই যে আমার কাছে তালিকা আছে যুদ্ধাপরাধীদের। তালিকা ছিলো না সরকারের কাছে, আমি তালিকা দিয়ে দিলাম। সরকার বিচার শুরু করুক।
এই ডামাডোল সৃষ্টি করে আমরা গোয়েবলসীয় কায়দায় সত্যকে পেছনে ঠেলে দিতে বসেছি। হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলস বলেছিলেন, একটি মিথ্যা কথা বারবার বললে তা সত্য হয়ে যায় এবং মানুষ তা বিশ্বাস করে।
যুদ্ধাপরাধী ইস্যুটিকে ষড়যন্ত্রকারীরা ফ্যাসিবাদী হিটলারের কায়দায় একশ্রেণীর লোক এমনভাবে বলতে শুরু করেছে যে, মিথ্যাই যেন সত্য হয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর পাকিস্তানী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ‘দালাল আইন অধ্যাদেশ’ জারি করেন।
তবে এই আইনটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য জারি করা হয়নি। বরং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীকে যারা সহযোগিতা করেছিল তাদের বিচারের জন্য অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছিল।
তা সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার যুদ্ধাপরাধী চিহিßত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথমে শেখ মুজিব সরকার ১০১৫ জন পাকিস্তানীকে যুদ্ধাপরাধী বলে চিন্হিত করেন। তারপর যাচাই-বাছাই চলতে থাকে, যাতে কেউ অহেতুক যুদ্ধাপরাধী বলে চিহিßত না হন।
এক পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪০ জনে। আরও যাচাই-বাছাইয়ের পর শেখ মুজিব সরকার ১৯৫ জন পাকিস্তানীকে যুদ্ধাপরাধী বলে চূড়ান্তভাবে সাব্যস্ত করেন। শেখ মুজিবুর রহমান যদিও ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। কিন্তু ততোদিনে ভারত-পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ১৯৭২ সালের জুনে। সে চুক্তির সময়ই ভারত বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে পাকিস্তানকে জানিয়ে দিয়েছিল যে, যুদ্ধাপরাধীদের কোনো বিচার হবে না এবং সকল বন্দীকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রথম ভারতীয় হাইকমিশনার ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব জেএন দীক্ষিত তার ‘লিবারেশন অ্যান্ড বিয়ন্ড’ গ্রন্থে লিখেছেন যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পরমেশ্বর নারায়ণ হাসকার ১৯৭২ সালের জুন মাসেই দিল্লীতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, কোনো পেশাদার আর্মি অপর কোনো পেশাদার আর্মির বিচার আশা করে না।
ভারতের অনাগ্রহের কারণে ও পাকিস্তানের সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্ক উন্নয়ন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি চিন্হিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি আর বড় করে দেখেননি। কিন্তু ১৯৭২ সালের জুনে ভারত-পাকিস্তান সিমলা চুক্তির সময় ভারতই যদি পাকিস্তানকে কথা দিয়ে থাকে যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে না। তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করার জন্য ভারতকেই তো দায়ী করা উচিত। কিন্তু আমরা তা না করে এখন ভারতের স্বার্থ রক্ষায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য চাপ দিচ্ছি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি নিস্পত্তি হয় আরও পরে। শেখ মুজিব সরকার যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতেনও, তাহলেও তা সম্ভব ছিলো না। কারণ যুদ্ধাপরাধী বলে ততকালীন সরকার যেসব সেনা অফিসারকে চিন্হিত করেছিলেন, তারা ছিলো ভারতের মাটিতে ভারতের হাতে বন্দী। আমরা তাদের খুঁজে পেতাম না। তার ওপর ১৯৭৪ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সমঝোতা চুক্তির ১৪ ও ১৫ ধারার অধীনে এই বিচার রহিত করা হয়।
১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল বাংলাদেশের ততকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সে চুক্তির আলোচ্য ধারা দু’টি নিম্নরূপঃ
ধারা ১৪ঃ
এ সম্পর্কে তিন মন্ত্রী উল্লেখ করেন, বিরোধ মীমাংসায় কাজ করে যাওয়ার তিন দেশের অঙ্গীকারের আলোকে বিষয়টির পর্যালোচনা হওয়া উচিত। মন্ত্রীরা আরও উল্লেখ করেন যে, স্বীকৃতি দানের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সফর করবেন এবং বুত্ব স্থাপনের লক্ষ্যে অতীতের ভুল-ভ্রান্তিকে ক্ষমা ও ভুলে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। একইভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পরিচালিত নৃশংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপারে তিনি চান যে, জনগণ অতীত ভুলে যাবে এবং নতুন করে শুরু করবে এবং বাংলাদেশের জনগণ জানে কিভাবে ক্ষমা করতে হয়।
ধারা ১৫ ঃ
পরিহার করার মনোভাবের আলোকে এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অতীতকে ক্ষমা ও বিস্মৃত হওয়ার জন্য পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার অনুকম্পা হিসেবে বিচার কাজ না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্মত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, দিল্লী চুক্তির শর্তাধীনে পাকিস্তানে যুদ্ধবন্দী প্রত্যর্পণের যে কাজ চলছে তাদের সঙ্গে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকেও প্রত্যর্পণ করা যেতে পারে।
সে হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কতৃêক চিন্হিত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানে ফেরত চলে যায়। বিষয়টির সেখানেই ইতি ঘটে।
বাকি থাকে দালাল আইনে গ্রেফতার করা। ১৯৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারি জারিকৃত এই আইনে প্রাথমিকভাবে প্রায় লক্ষাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার অভিযোগ আনতে পারে ৩৭ হাজার ৪৭১ জনের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬২৩ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে কোনো মামলাই দায়ের করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিচার হয় ২,৮৪৮ জনের, সেই বিচারের মাত্র ৭৫২ জনের সাজা হয়। বাকী ২০৯৬ জন বেকসুর খালাস পান। এই ৭৫২ জনের বিরুদ্ধেও যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তা গুরুতর শাস্তি দেয়ার মতো কোনো অভিযোগ ছিল না।
দালাল আইনে একমাত্র চিকন আলী নামের একজনের মৃতুøদণ্ড হয়েছিল।
অর্থাত স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লঘু শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছিল মাত্র ৭৫২ জন ব্যক্তি। এ থেকে প্রমাণিত যে, যে অবস্থানেই থাকুক না কেন, দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
দালাল আইন জারির এক বছর ১০ মাস ছয় দিনপর ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর জাতীয় সংহতি ও ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার স্বার্থেই শেখ মজিবুর রহমানের সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। ফলে যে ৭৫২ জনকে দালাল আইনে সাজা দেয়া হয়েছিল, তারাও মুক্তিলাভ করে।
শেখ মুজিবুর রহমানের সাধারণ ক্ষমার আওতার বাইরে রাখা হয় ৪ ধরনের অপরাধ। সেগুলো হলোঃ হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল যে উপরোক্ত চার ধরনের অপরাধ যদি কেউ করে থাকে, তবে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধের আওতায় আনা হবে এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহিßত করা হবে। এই দালাল আইন বহাল ছিল ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে শহীদ রাষ্ট্রপতি ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান দালাল আইন বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। অর্থাত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর ২ বছর ১ মাস পর্যন্ত দালাল আইন বহাল ছিল। এই ২৫ মাসে উপরোক্ত চার ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য দালাল আইনে একটি মামলাও কেউ দায়ের করেনি। এমন কি এখন যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করছেন তারাও কোনো মামলা দায়ের করেননি কারও বিরুদ্ধে। তখন এরা কেউ দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিলেন না।
এদের প্রায় সবাই বালেগপ্রাপ্ত ছিলেন। সেদিন সব পথ উন্মুক্ত ছিল। তবু চুপ করে বসেছিলেন কেন? আজ ৩৭ বছর পর কোন যুক্তিতে বাংলাদেশীদের মধ্য থেকে যুদ্ধাপরাধী খুঁজে বের করার ‘মহান’ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন?
রহস্যের এখানেই শেষ নয়। কিছুদিন আগে এক বীরোত্তম গলায় গামছা ঝুলিয়ে একেবারে সত্যি কথাটিও বলে ফেলেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী বড় ইস্যু নয় বড় ইস্যু হলো জামায়াত।
আসল সত্য এটাই।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াত খুব বড় দল ছিল না। বড় দল ছিল মুসলিম লীগ। পিডিপিও জামায়াত থেকে বড় দল ছিল। তারাও কোলাবরেটর ছিল, সংখ্যায় তারা বেশিই ছিল।
কিন্তু কোনো দিন তাদের নাম কেউ উচ্চারণ করেনি। কারণ, সেসব দল আর টিকে নেই। টিকে গেছে জামায়াতে ইসলামীই। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমার আদর্শগত ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে আমি তাদের রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নেবার কোনো কৌশলে সমর্থন জোগাব না।
জামায়াতে ইসলামী এখনও বিএনপি আওয়ামী লীগের তুলনায় অনেক ছোট দল। এই জামায়াত ঐক্য করে অন্যান্য জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে। আসল সমস্যাটা সেখানেই। বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, জামায়াত যাদের সমর্থন করে রাষ্ট্রক্ষমতা তারাই পায়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াত একা লড়েছিল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
সরকার গঠনে তারা কোনো দলকেই সমর্থন দেয়নি। ফলে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ক্ষমতাসীন হতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধায় আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি জামায়াত জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে জোট বাঁধে তবে অন্যদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা সুদূর পরাহতই থেকে যায়। অতএব জামায়াতকে ঘায়েল করতে হবে।
ছলে-বলে-কলে-কৌশলে। মূল ব্যাপারটি সেখানেই। ফলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি এবং শেষ পর্যন্ত এক এক অজ্ঞাত পরিচয় তালিকাবাজের আবির্ভাব সবই একই উদ্দেশ্যে। একই মতলবে পরিচালিত হচ্ছে।
সরকারও তামাশা দেখছে।
কিন্তু ঐ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি যদি তালিকা প্রকাশ করে দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে। যদি গণআদালত বানিয়ে সমাজে বিশৃক্মখলা সৃষ্টির প্রয়াস পায়, তাহলে যে হানাহানির পরিবেশ সৃষ্টি হবে, সেটা সামাল দেয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। কেউ একজন যদি মনগড়া এক যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ করে, তা হলে অন্য কেউও আরও একটি ভিন্ন তালিকা প্রকাশ করতে পারে। কেউ ভারতীয় দালালদের তালিকা প্রকাশ করতে পারে। তা হলে সমাজের অবস্থা কী দাঁড়াবে।
এক্ষেত্রে সরকারেরও দায়িত্ব আছে। এই তালিকা প্রকাশ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার শামিল। সামাজিক শান্তি ও জনশৃক্মখলা রক্ষার স্বার্থেই কঠোর হাতে এই তালিকাবাজদের দমন করা দরকার। কেননা, এই তালিকাবাজদের দু’একজন শুভেচ্ছা স্বাগতম বলে অভিনন্দন জানালেও দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিহত করতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।