আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রেষ্ঠতম ঝগড়া

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

কারো সাথে ঝগড়া হলেই আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। আমার রেপুটেশনের সবচেয়ে বড় একটা এরিয়া হচ্ছে অঝগড়াপিয়াস। আমার ভোদাইজমেরও সবচেয়ে বড় দূর্বলতা এই অঝগড়ামানস। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ঝগড়াটা আমি করেছিলাম আমার সবচেয়ে প্রিয় ও অন্তরঙ্গ বন্ধুটির সাথে। এটা এমন একটা সময়ে যখন তার নারী পরিচয়টা বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছিলো।

পিকনিকে গিয়েছি, তিনচারশো ছাত্র-ছাত্রীর নেতা বলতে গেলে সে আর আমি। টিচার, টিচারপত্নী, বাবুর্চি, গানাবাজনার ষড়ঞ্জাম, বাসওয়ালা থেকে শুরু করে সব কিছু সামলাচ্ছে সে, আর আমি গেমস, নাটক, গায়ক-গায়িকাদের নিয়ে প্রোগ্রাম। দুপুর পর্যন্ত সবকিছু চলছিলো ঠিকমত। তখন মোবাইলের যুগ নয়, আর আমি ঘড়িমুক্ত সময়জ্ঞ চিড়িয়া। বারবার তারাকে সময় জিজ্ঞেস করি।

ওর হ্যান্ড ব্যাগ মানেই আমার দুতিনটা প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন ম্যাচলাইট, লিপজেল, ব্রেসলেট। তারার অভিযোগ আমি ফাঁকি দিচ্ছি। ওর কাজ করতে করতে জান শেষ। আমিও জানি ফাঁকি দিচ্ছি, কিন্তু ওসব অভিযোগ আমলে নেয়ার মত কাপুরুষ আমি না। তারাকে তাড়িয়ে আবার গায়কের হাত থেকে গাজার কল্কি নিয়ে টান মারি।

ইত্যবসরে মাইকে আওয়াজ তুলতে তুলতে ঠোঁট ফেটে চৌচির। একটু আগে পনা, রুবেল আমাকে তারার প্রেমিক হিসাবে ফাজলামো করাতে মেজাজ গরম। মাইকে ঘোষণা করলাম, তারা! যেদিকে থাকিস লিপজেলটা নিয়ে আমার কাছে আয়! তোর শোকে ঠোঁট আমার গেল! তারা দৌড়াতে দৌড়াতে এল। কোমড়ে হাত দিয়ে রাজ্যের জুনিয়রদের সামনে চিৎকার করে বললো, এসব কি! চোখ বড় বড়। হাতের ব্যাগটা ছুড়ে মারলো আমার দিকে।

টিচাররাও হতভম্ব। হাডুডু খেলা চলছিল উইমেন ভার্সেস ম্যান, সেটা থামিয়ে দিল প্লেয়াররা। আমার মাইকের ঘোষণায় একটা স্থূল ইংগিত ছিল। ইচ্ছে করেই করা। এমন ফাজলামো ডালভাত ছিল।

কিন্তু সেদিন তারা অন্যমুডে। আমি ব্যাগটা কুড়িয়ে ওর দিকে আবার ছুড়ে মারলাম। চেচিয়ে বললাম, ব্যাগ ছুড়ে মারলি যে! তারা বললো সেই একই রুক্ষমুর্তিতে, ব্যাগ তো ছুড়ে মেরেছি, তোকে আমি এখন পিটিয়ে ফ্লাট বানাবো! আমি লাফ দিয়ে দুই কদম সামনে বাড়ি। পারলে মারতো দেখি, তোর কালো মুখে আমি চুন মেখে দেব! বদের হাড়ি! তারা হাতের কাছে সাউন্ড বক্সের ছেড়া একটা তার পেল। সেটা হাতে তুলে নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসলো।

আমি তারের রেঞ্জের বাইরে দৌড়ে পালাই। তারা পেছনে পেছনে। কিছুদূর এসে বসে পড়ে। তারাকে ভীড় করে আছে ক্লাসমেটরা। কিছুদূর এসে ফিরে যায়।

আমিও ফিরি। মুখ গোমড়া করে বসে আছি একটা সিমেন্টের বাধানো শানে। তারা অন্য পাশের এক জংগলার ধারে। কিছু ভাল লাগছে না। হঠাৎ করে কাউকে কিছু না বলে আমি একটা রিকশা ডেকে বাসস্টান্ডের দিকে ছুটতে থাকি।

বাসের জন্য বসে আছি। কতক্ষণ পরে দেখলাম তারাও উপস্থিত। ও আমাকে দেখে তেড়ে আসে। বলে, তুই কেন এসেছিস! এখনই পিকনিকে যা! আমি বললাম, আমার সাথে কথা বলবি না। তুই যদি পিকনিক ছেড়ে যাস, আমি তোকে এই রাস্তায় খুন করে ফেলবো! আমি বলি, তোর বাপের পিকনিক, তু্ই কর গিয়ে! তারা বলে, তুই আমার বাপ তুললি কেন? তুই আসলে একটা ছোটলোক, ইতর! তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ! ততক্ষণে বাস চলে এসেছে।

বাসে উঠতে উঠতে আমি বলি, তোর সাথে সম্পর্ক কিসের? একটা মীন, অভদ্র, মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শিখেছিস কখনও? বাসে সিট পাওয়া গেল। মোটামুটি খালি। বাসের হেলপার হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বলে, তোর ভদ্রতার আমি ক্ষেতা পুড়ি! তুই একটা ভন্ড, স্বার্থপর, অসভ্য! আমি বলি, তুই একটা আলুর বস্তা। কেমন ধামড়ী হয়েছিস দেখেছিস? জানিস তো শুধু খেতে! তারা পারলে সিট থেকে উঠে এসে আমাকে মারে।

এর মধ্যে একজন প‌্যাসেঞ্জার তারার দিকে তাকিয়ে দাত কেলিয়ে হালকা স্বরে বললো, মোটা মাগীর কি তেজ! কিন্তু আমি শুনে ফেললাম। তারাও শুনলো। আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল চড়াৎ করে। তরাক করে উঠে ব্যাটার গালে বসিয়ে দিলাম বিরাশী সিক্কার একটা থাপ্পড়। হতভম্ব বাসের লোকজন।

আমি পারলে আরো কিছু পেদানী দেই। তারা লাফিয়ে আমাকে ধরে। তারপর হেলপারকে বাস থামাতে বলে। আমরা বাস থেকে নেমে যাই। তারার মুখ থমথম করছে।

বাসের যাত্রীটা সমানতালে আমাকে গালিয়ে যাচ্ছে। বাসস্টান্ড থেকে কিলোমিটির খানেক দূরে আমরা গেছিলাম। কোন কথা না বলে দু'জনই আবার পিকনিক স্পটে ফিরে গেলাম। তারা আর আমি এ বিষয়টা নিয়ে পড়ে অনেক মজা করতাম। * ১৯৯৭ সালের এইদিনে তারা প্রথম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মরে গেছিল।

আমি আজ পর্যন্ত ওর জন্য একবারও কাঁদিনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.