যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
আপনি যখন কিছু লিখে আমাকে পড়তে দেন, এর উদ্দেশ্য কি থাকে? আমি বলছি পাঠককে কেন পড়তে হবে! পাঠক আপনার লেখার মধ্যে যে "অন্তর্নিহিত ভিউ" টা থাকে সেটাকে অনুধাবন করে, "মেসেজ" সঞ্চারিত হয়, পাঠকের নিজস্ব চিন্তার জগতের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়। এই প্রক্রিয়াকে লেখকের সততা বলে। লেখক হয়ে উঠতে গিয়ে সে এই সততার সিঁড়িতে ক্রমশ উন্নীত হতে থাকে। প্রাথমিকভাবে যা থাকে নিজেকে বিচার - তা ক্রমশ হয়ে ওঠে তার মননশীলতার পরিচয়জ্ঞাপক।
লেখক উন্মুক্ত প্রান্তরে তার শষ্যবীজ রোপন করেন এবং পরিমন্ডলে একটা অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করেন।
যার অঙ্কুরোদগম থেকে বৃদ্ধি ক্রমশ তাকে পরিচালনা করবে এক বা একাধিক লক্ষ্য স্থিরকরণে। সেই আবহ তার বিকাশ, দুরূহ বোধের প্রকাশ ও সঞ্চালনে নিজের "শেয়ারিং" কে করবে লোকঘনিষ্ঠ। যুগান্তরে এই প্রক্রিয়া ছিল কেবলমাত্র মানবকল্যানের স্বেচ্ছাসেবাশ্রয়ে। বাঙালি সমাজ দর্পনে কবির পুরষ্কার সরূপ "পুস্পমাল্য" কবি কর্তৃক বরনীয় হলেও গৃহিনী তাতে রুষ্ট হতেন - যদিও কবির সেই অমূল্য স্বীকৃতির ধন্যবাদ তিনি অশ্রুতে ফিরিয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি।
লেখকের কষ্টার্জিত অভিজ্ঞতা আর তার প্রকাশবৈভব যখন শিল্পোত্তীর্ণ হয়ে ওঠে তখন তার পরিতৃপ্তি যেকোন জাগতিক রত্নভান্ডারের অপার 'ওনারশীপ' থেকেও ঔজ্জ্বলময়।
লেখকের এই মহত্ত এক জীবন-সরূপতায় আদৃত করে সকল মানবকূলকে। "তুমি আমাকে করিয়াছো মহান" এমন বিনম্রতায় ন্যুজ হতে থাকে তার শির - অথচ পাঠকমাত্রই তার মহীমা কীর্তনে ইশ্বর অধীষ্ঠান করেন।
আমি যখন আপনাকে পাঠে নিজের ভেতরে আলোড়িত হই, তখন আপনি আমার আলোড়নকে স্তব্ধ করতে পারেন না। লেখক পাঠকের সাথে একটা মাত্রায় যোগাযোগস্থাপনে অচল হয়ে পড়েন। যা তিনি ভাবেননি তাই অভাবিতভাবে পাঠক সঞ্চালন করতে পারেন।
তিনি শ্লোকগাঁথা নকশী করে তুলে ধরতে পারেন পুজোমন্ডপে অথবা বালাগাল উলা বি কামালেহী বলে ঢুকিয়ে দিতে পারেন ধর্মীয় রিচুয়্যালে। প্রশ্নটা হচ্ছে আপনি পাঠকের কোন প্রকাশ ও প্রয়োগে নিয়মের অবরুদ্ধতা কামনা করতে পারেন!
নিঃসন্দেহে আপনার সৃষ্টির ধ্বংষ এবং তার অবৈধ মুনাফা অর্জন প্রতিরোধ যেন করা হয়। মেধাসত্ত্ব যেন লেখকের থাকে, তিনি যেন পরিচিত হন - এর জনক হিশেবে। একজন লেখকের সততার নজির হতে পারে তার পাঠকের এহেন মেধাসত্ব ধ্বংষ হবার প্ররোচনা ছাড়া উদ্যোগে নিজের সংশ্লিষ্টতায় উজ্জীবিত ও গর্বিত বোধ করা। যখন পাঠকের লক্ষ্য থাকে লেখকের এই প্রকাশকে তিনি সংরক্ষণ করবেন, এবং পৌঁছে দেবেন আরও পাঠকের হাতে - যা তার লেখার জাজমেন্টের ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা পাবে সমাজের আরো বিস্তির্ণ অঞ্চলের প্রাজ্ঞদের তা কেবল তার মূল্য নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে।
তৈরী করতে পারে তার মেধাসত্ত্বর অন্যান্য নিয়ম-কানুন আর গতিপ্রকৃতি।
পাঠক লেখকের কোন লেখাকে কিভাবে জনসমক্ষে লিখিত বা ভারবালি ব্যক্ত করবেন সে বিষয়ে লেখকের অনুমতি প্রার্থণার এই ভব্যতা আর শিষ্টতা নামক আচার পালন আসলে কোন মানে রাখে না। লেখকের একটা ইনফরমশেন জ্ঞাত হওয়া ছাড়া রুষ্টতা বা মনোকষ্টের কোন স্থান জায়গা দিতে পারে না।
লেখক না চাইলেও তার লেখা প্রকাশিত হতে পারে ভিন্নমতের প্লাটফর্মে। উদ্ধৃতচারণ হতে পারে অপছন্দের কোন সভা বা মলাটে।
ভব্যতা নামক শিষ্টাচার অপালনে কুঞ্চিত হতে পারে কিছু লেখক - তা নিঃসন্দেহে তার মেধাস্বত্ত্ব হরণের কোন দুশ্চিন্তা থেকে নয়, একদমই উদ্দেশ্যমূলকভাবে পাঠকের আগ্রহকে অবমূল্যায়ন ও অশ্রদ্ধা বা তার অপছন্দের গোষ্ঠীতে নিজের নাম ও লেখার অবমূল্যায়ন ও অশ্রাদ্ধা প্রকাশ শঙ্কায়।
এজন্য আমি লেখা অনুমতি নিয়ে প্রকাশ করার এই ভব্যতা পালনে অনিচ্ছুক, কিন্তু লেখকদের শেষোক্ত শঙ্কা "অপছন্দের গোষ্ঠীতে নিজের নাম ও লেখার অবমূল্যায়ন ও অশ্রাদ্ধা" থেকে মুক্ত করার জন্য মেধাসত্ত্ব আইনে উৎকৃষ্ট কোন বাধ্যবাধ্যকতা নিয়েও আশাবাদী নই। লেখকমাত্র এই শঙ্কায় তটস্থ থাকবেন বিষয়টা ঠিক প্রত্যাশিতও নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।