তোমার অস্তিত্বে সন্দিহান, তবু্ও সদাই তোমায় খুঁজি
বলা হয়ে থাকে ঢাকা মসজিদের শহর। ঠিক এককভাবে ঢাকাকে মসজিদের শহর না বলে পুরো বাংলাদেশটিকে মসজিদের দেশ বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না। বরং সেটাই হবে যথাযথ। দেশের সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আসে নতুন, পুরাতন, কারুকার্য্য সম্বলিত,কারুকার্য্য বিহীন, মিনার সম্বলিত, মিনার বিহীন, জৌলুসপূর্ণ অথবা সাদামাটা শুধুই টিনশেডের অসংখ্য মসজিদ। এ মসজিদগুলোর প্রতিটি ইট, বালিতে জড়িয়ে আছে একটি ধর্মের অথবা একটি জাতির ইতিহাস,আবেগ, আবেদন, আকর্ষণ, নিবেদন আর ভালোবাসার কথা।
মসজিদগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এই আবেগ, আকর্ষণ, আবেদন, নিবেদন আর ভালোবাসা যে শুধু এই দেশের একটি বিশেষ ধর্মের মানুষের মাঝে সীমাবদ্ধ তা নয়। বরং কালের আবর্তনে তা ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এর প্রমাণ স্বরূপ বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদটিকে ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়াল্ড হেরিটেজ এর আওতাভুক্ত করার বিষয়টি উপস্থাপন করা যেতে পারে। ষাট গম্বুজ মসজিদকে এককভাবে এ সন্মান কিংবা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এমনটা চিন্তা করা অবান্তর। বরং বলা যেতে পারে দেশের সব মসজিদের প্রতিনিধি হিসেবেই ষাট গম্বুজ মসজিদকে এ সন্মান, গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
মসজিদ কে কেন্দ্র করে মানুষের আবেগ এবং ভালবাসার বিষয়টি যেমন লক্ষণীয় তেমনি এই খাদবিহীন ভালবাসার অপব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। তেমন একটি অপব্যবহার হচ্ছে সরকারি অধিকৃত ভূমিতে যততত্র পরিকল্পনাবিহীন মসজিদ নির্মাণ। আমরা জানি সরকার একটি সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই জনসাধারণের কাছ থেকে কোন ভূমি অধিগ্রহণ করে থাকে। এই অধিগ্রহণের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। অথচ দেখা গেছে সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অধিগ্রহণকৃত জমিতে যততত্র গড়ে তুলা হচ্ছে মসজিদ।
এতে সরকারে আসল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ব্যহত হচ্ছে তা নয়, ক্ষেত্রবিশেষে বাতিল করতেও হচ্ছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থাও নিতে পারছেনা। কারণ বাস্তব কথা হচ্ছে এদেশে সরকার থেকে শুরু করে আমরা সবাই ধর্মীয় বিষয়ে জেনে কিংবা না জেনেই খুব সেন্সেটিভ রিএক্ট করি। এ বিষয়ে উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুইপাশে সড়ক ও জনপথ, পানি সম্পদ অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনেক অধিগ্রহণকৃত জমি আছে। একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই সরকার এ ভুমি অধিগ্রহণ করেছিলো।
কিন্তু এই ভূমিতে যততত্র গড়ে তুলা হচ্ছে অসংখ্য মসজিদ। সরকারি জায়গায় বস্তি কিংবা অন্যকোন অবৈধ স্থাপনা থাকলে তা কষ্টসাধ্য হলেও হয়তো একটা সময়ে তা সরানো যায়। কিন্তু একটা মসজিদ কোনক্রমেই সরানো যায় না। কারণ এতে জনসাধারণের ধর্মীয় আবেগ ও সেন্টিমেন্টের বিষয়টি জড়িত।
অথচ এই মসজিদগুলোর সামাজিক প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সবসময়ই প্রশ্নবিদ্ধ।
কারণ এরকম অসংখ্য মসজিদ আছে যেগুলোতে সপ্তাহের এক জুম্মার নামাজ ছাড়া কখনও এক কাতারও পূর্ণ হয় না। আমার মনে হয় আমাদের যা মসজিদ আছে তাই যথেষ্ট। প্রয়োজন হলে পুরাতন মসজিদগুলোকে সংস্কার তথা উন্নয়ন করা যেতে পারে।
সামাজিক প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনা ছাড়াও অন্য একটি কারণেও এ মসজিদগুলোকে নিয়ে ভাববার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ এ মসজিদগুলোকে নিয়ে সবসময়ই একটি ব্যবসা চলে।
আপনি যদি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিয়মিত যাতায়াত করেন তাহলে দেখবেন স্থানে স্থানে এসব মসজিদের নামে গাড়িতে উঠে বা কোথায়ও মাইকিং করে টাকা উঠানো হয়। সব মহলে প্রচলিত আছে যে এই টাকার একটি বৃহৎ অংশ কমিশন হিসেবে টাকার উত্তোলনকারীদের পকেটে চলে যায় এবং ফলশ্রুতিতে মসজিদগুলো সেই জড়াজীর্ণ অবস্থায়ই থেকে যায়। তাদের এ ধরণের আচরণ ইসলামকে একটি খয়রাতি ধর্মে পরিণত করেছে। আমি ক্ষমা চেয়েই পুনরায় বলছি তাদের এ ধরণের আচরণ ইসলামকে একটি খয়রাতি ধর্মে পরিণত করেছে।
একটা সময় এদেশের অনেক স্থানে যখন তখন মাজার গজিয়ে ওঠতো।
এই মাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতো জমজমাট মাজারব্যবসা। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ'র লাল সালু উপন্যাসের যুগান্তকারী প্রভাব এবং মানুসের সচেতনতার কারণে অন্তত যততত্র মাজার গজিয়ে উঠার বিষয়টি বন্ধ হয়েছে। তেমনি জনগণের সচেতনতা এবং সরকারের কঠোর অবস্থানের বিনিময়ে যততত্র সরকারি অধিকৃত ভূমিতে মসজিদ স্থাপনের বিষয়টিও রহিত করা সম্ভব। আমাদের দেশ, ধর্ম এবং সরকারি পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের স্বার্থেই এ বিষয়ে অজনপ্রিয় হলেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।