সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...
পলাশ। পুরো নাম কি তোমার ? ' পলাশ '। হুমায়ুন আহমেদের হিমু কিংবা মিসির আলীর মত চরিত্রের একটি। তবে আমার বাস্তবিক গল্পে সে শুধুই "পলাশ"।
তোমার বয়স কত?
সে বলতে পারেনি।
তবে অনুমান করতে তেমন সমস্যা না হলে সবে মাত্র ৪ থেকে ৫ বছরে পারা দিয়েছে।
কি কর তুমি?
তার কর্মটিকে যথার্থ ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও কথার চতুরতায় মুগ্ধ হতে ক্ষণ সময় লাগেনি।
টাকা দেন চকলেট নেন !
বয়সের হাতছানিতে তার চরিত্রটি বাস্তবিক জীবনে খুবই বেমানান। তবে সে দিব্বি বলে যাচ্ছে "টাকা দেন চকলেট নেন"।
তার স্পষ্টভাষী বাক্যগুলো আমাদেরকে ৩টি চকলেট নিতে বাধ্য করলো।
তো ‘পলাশ’ সাহেব চকলেট দিন?
তাঁর কর্মউদ্দিপনা দেখে আমরা মুগ্ধ হলাম। ৩টি চকলেটের বিনিময়ে ২টাকা হাতে গুঁজে দিতেই ····..........।
কর্তার মত পলাশ সাহেব আমাদেরকে প্রশ্নার্জিত করতে একটুকুও দেরী করলেন না!
* আফনেরা তো ৩ জন ২ টাহা দিলেন কে?
তাঁর ধাঁরালো প্রশ্নটি আমাদের মনের মাঝে বিগ্ধ করলো। সত্যিই তো আমরা ৩জন! বিচারকার্যে ক্রমাগত ভূল। সংশোধনের নিমিত্তে আর ১টাকা দিতে হবে।
তোমার একটি ছবি তুলি ?
ছবি তুললে ৫ টাহা দিবেন!
তাঁর প্রশ্নবিগ্ন "৫ টাকার কারণটি'র ব্যাখা যথার্থ না পাওয়া গেলেও অভিজ্ঞতার এই জগতে বুঝতে বাকি নেই যে প্রায়ই তাঁর ছবি কেউ না কেউ তুলে নিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট ল্যান্সের কিক দেওয়া ক্যামেরা দিয়ে।
আর হয়তো তাঁর মনে ক্ষণস্থায়ীভাবে জন্ম নিয়েছে একটি প্রশ্ন!
সে হয়তো ভাবছে তাঁর ছবি তুলে আমরা বিক্রি করি। এবং টাকা পাই।
সেই ছোট্ট বালক পলাশ সাহেবের সাথে দেখা হয় গত ০৯ ফেব্রুয়ারি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তাঁর কর্মস্থল।
যেখানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিভিন্ন দিবসে রাজনীতিবীদদের পদচারণায় মুখরিত হয় ফুলে ফুলে। ফুলের শূভেচ্ছায় শহীদদের স্মরণ করা হয়।
কিন্তু ছোট্ট সেই পলাশ প্রতিদিনই সেই শহীদ মিনারের পাদদেশ ঘেষে তাদের স্মরনের নিমিত্তে তাঁর ছোট্ট কর্মটি চালিয়ে যাচ্ছে। সে হয়তো শহীদদের বিষয়ে বড়ই অনবিজ্ঞ! কিন্তু বিজ্ঞতার বিন্দুটি তাঁর মর্মস্পর্শ না করলেও প্রায়ই হৃদয় স্পর্শ করে।
মিষ্টভাষী ছোট্ট পলাশকে বারংবার প্রশ্নার্জিত করলেও বিন্দুমাত্র কেশ তাঁর মধ্যে নেই!
তুমি-কি প-ড়?
হু!
কোথায় পড়?
ঐ যে ঐখানে।
তাঁর আঙ্গলের দিকদর্শন দেখে হতবাক ও বিস্মিত হলাম।
মানে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে!
ঐ খানেই আমি পড়ি।
অপাদমস্তক সীমানা ছাড়িয়ে গেছে তাঁর হাস্যকর বাক্যটি শুনে। হয়তোবা সে বস্তির কোন এক স্কুলে পড়ে আবার হয়তোবা পড়েনা।
তাঁর কর্মস্থলের পাশঘেষে ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দেখে হয়তো মনের মাঝে সেখানে পড়ার এক অনাকাংখিত আগ্রহ জন্ম নিয়েছে।
আর সে তাঁর মনের রাজ্যে ভার্সিটি'র ছাত্র হয়ে বসে আছে।
হয়তোবা দুদিন পর সে বলবে আমি ঐ খানে ঐ ছেলে মেয়েদের পড়াই! বোঝার কোন বালাই নাই যে তাঁর মধ্যে একটি আবেক বিশালতাকার স্থান দখল করে আছে।
ছোট্ট ঐ শিশু আজ চকলেট বিক্রেতা! কিন্তু কাল····। আগামী'র ভবিষ্যত বলে আমারা শ্লোগান দিয়ে বাক্য উচ্চারিত করি। কিন্তু শ্লোগানই যথার্থ।
আমাদের ঐ পলাশদের শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে।
হুমায়ুন আহমেদের হিমু কিংবা মিসি'র আলী চরিত্রের মত পলাশও একটি চরিত্র। একদিন সেও হয়তো ভার্সিটিতে পড়বে? আরেকটি চরিত্রের জন্ম দিবে সে। জাপানের টেলিভিশনে তাকে নিয়ে ডকুমেন্টারী হবে। গল্পের হাতছানিতে সে হবে প্রধান চরিত্রের নায়ক।
মৃদুহাস্য ভঙ্গিমায় আমরা তিন জন সাময়িক বিধায় নিলাম পলাশ চরিত্র থেকে। অপলক দৃষ্টি ও মায়াভরা মুখটি আজও ভাস্যমান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।