"ব্লগকে সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই"...গরীব স্ক্রীপ্ট রাইটার
যখন ছোট ছিলাম একুশে ফেব্রুয়ারির আগের সপ্তাহ খুব ব্যস্ত সময় কাটাতাম। কত কাজ, শহীদ মিনার বানাতে হবে, কে বানাবে গতবার যে দায়িত্ব নিয়েছিল তারটায় কি সমস্যা ছিল, ফুল কোথায় পাবো এসব চিন্তায় আমাদের ঘুম হারাম।
প্রথমে আমরা ইট আর কাদা দিয়ে শহীদ মিনার বানাতাম কিন্তু ওইভাবে বানাতে গেলে সমস্যা হতো ইটকে বাকা করতে যেয়ে, আমরা পারতাম না। তারপর একজন বুদ্ধি বের করল কলাগাছ দিয়ে বানাবে আর কলাগাছের একটা খোসা ছাড়িয়ে কাঠি দিয়ে ওটাকে শহীদ মিনারের মত বাকাবে। কিন্তু মাটির মত কলাগাছে অত ভালভাবে চুন আর রঙ লাগে না।
তাতে আমাদের কোন সমস্যা নাই মনে করে কলাগাছে কাদা লেপে তারপর রঙ করতাম যদিও খুব একটা ভালো হতো না তারপরও আমরা বানাতাম। এরপর শহীদ মিনারের চারপাশ কাদা দিয়ে লেপে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে রাখতাম। প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারীতে আমরা একটা শহীদ মিনার উদ্বোধন করতাম।
এরপর ফুল নিয়ে বিশাল টেনশন। আমাদের বাড়িতে ফুলগাছ থাকলেও ওগুলো ২০তারিখ রাতেই চোরেরা খতম করে দিতো।
আমরা গাদা, গোলাপ ফুল সেজন্য শহীদ মিনারে দিতে পারতাম না। জবা, রঙ্গন, কসমসসহ যেসমস্ত হাবিজাবি ফুল চোরেরা নিতো না তাই শোভা পেতো আমার শহীদ মিনারে।
খুব সকালে আমাদের শহীদ মিনার উদ্বোধনের পর আমরা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতাম। দেখতাম মাইক বাজাতে বাজাতে এক একটা দল যাচ্ছে শহীদ মিনারে ফুল দিবে বলে। আমাদের বয়সী ছেলেমেয়েরাও স্কুলের থেকে ফুল দিতে যেত খালি পায়ে ফুল দিতে।
আমরা অন্য কোথাও না গেলেও খালি পায়ে দাড়িয়ে থাকতাম। কেউ ভুল করে স্যান্ডেল পায়ে দিলে লজ্জায় যেন মরে যেতাম আমরা, যেন এর থেকে লজ্জার আর কিছু নাই।
কেমন একটা উৎসব উৎসব আমেজ অনুভব করতাম। গান বাজতো “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...” “আমার সোনার বাংলা...” “একটি বাংলাদেশ (আমার প্রিয়গান)...” সহ অনেক সুন্দর সুন্দর গান।
ইদানীং কেমন যেন সবকিছু বদলে গেছে মনে হয়।
সেই গান আর বাজে না আগের মত, আজকালকার বাচ্চাদের মধ্যেও ওই ধরনের কোন আমেজ নেই, খবরের কাগজ পত্রিকা খুললেই দেখি একুশের সাজ, একুশের পোশাক সহ নানাধরনের ঢং। যেন একুশের পোশাক পড়লেই আর সাজ করলেই বিশাল কিছু একটা হয়ে যাবো। বুঝি না এগুলোর সাথে সম্পর্কই বা কি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।