আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশৃঙ্খল দৃশ্য: পৌরুষ, পাবলিক স্মৃতি ও সেন্সরশিপ ... রেহনুমা আহমেদের প্রবন্ধ (যোগাযোগ-দৃক যৌথ প্রকাশনা)

সঙ্গে সাহিত্যের সুবাস ...

এই লেখার বিষয় ভিশুয়াল রেপ্রিজেন্টেশন ও সেন্সরশিপ। এটা কোনো পূর্ণাঙ্গ লেখা না, চলমান ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু খসড়া ভাবনাচিন্তা হাজির করছি মাত্র। মোটা দাগে সেন্সরশিপ বোঝা হয় নিষেধাজ্ঞা হিসেবে, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে শাস্তি পেতে হবে, এ হিসেবে। এটা ছাপা যাবে না, ওটা নিয়ে কিছু বলা যাবে না ইত্যাদি, ইত্যাদি। সেন্সরশিপ আগে এবং পরে, উভয় দিক থেকে কাজ করে।

আগে থেকে সতর্ক থাকা, আর পরে অর্থাৎ ঘটে গেলে, শাস্তি পাওয়া। কিন্তু বিষয়টা আরেকটু জটিল। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। এই লেখার অন্য বিষয় ভিশুয়াল রেপ্রিজেন্টেশন। অর্থাৎ, আমার আলোচনার বিষয় রক্ত-মাংসের মানুষ না, রক্ত-মাংসের মানুষের রেপ্রিজেন্টেশন।

খোলাসা করি : আপনার ছবি যেমন আপনারই ছবি, ‘আপনি’ আর ‘ছবি’, এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। স্টিল ছবি হচ্ছে ব্রোমাইড কাগজে ছাপা একটি বস্তু, আর আপনি হচ্ছেন রক্ত-মাংসের মানুষ। আর ঠিক একইভাবে, আমার আলোচনার বিষয় হচ্ছে ছবিজ্জবেশ কটি ছবি, তার মধ্যে দুটো ছবি সমকালীন বাংলাদেশের, একটি প্রকাশিত হয়েছিল, পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়। অপরটি বহুলপ্রচারিত, কখনোই নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়নি। দুটোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকালীন ছবিজ্জরক্ত-মাংসের মানুষ না।

‘আপনি’ আর ‘ছবি,’ এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক নেই তা বলছি না। যেমন ধরেন, “তুই না পিকনিকে যাস না? এ তো দেখি রাজেন্দ্রপুর। ” “হ্যারে, জীবনে ওই একবারই গিয়েছিলাম। ” অর্থাৎ, ছবি একটি বিশেষ মুহূর্তকে তুলে ধরে। এই বিশেষ মুহূর্ত নিয়মিত চর্চার কি-না, তা বলার ক্ষমতা ছবি রাখে না।

মানুষই রাখে। ছবি রেপ্রিজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধিত্বশীল হতে পারে। যেমন ধরেন রাজকন্যা ডায়ানার প্রতি ব্রিটেনের মানুষের ভালোবাসা, তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের দিন বহু ছবিতেই তা প্রকাশ পায়। আবার একইসাথে ছবি বাস্তবকে সঠিকভাবে নাও তুলে ধরতে পারে, “এই ছবিটা যে ক্যামন, দ্যাখ ছোট চাচার নাকটা কেমন লম্বাটে দেখাচ্ছে। ” আরো কথা আছে, “অ্যাঙ্গেলের কারণে মনে হচ্ছে গা ঘেঁষে বসা, আসলে প্রায় এক হাত দূরত্ব ছিল।

” সংক্ষেপে বললে, ডকিউমেন্টারি ছবির ক্ষেত্রে বাস্তবের সাথে বাস্তবের রেপ্রিজেন্টেশনের সম্পর্ক অনায়াস কিছু না। আরেকটি বিষয় মাথায় রাখলে ভালো। হাল-আমলের ভিশুয়াল থিওরিস্টরা রেপ্রিজেন্টেশনকে ‘উৎপাদন প্রক্রিয়া’ এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার ‘প্রোডাক্ট’, উভয়ভাবেই বিচার করেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, ছবি তৈরিতে মানুষের শ্রম, অর্থ, চিন্তা, সময়, সামর্থ্য, দক্ষতা, স্বপ্ন, ছবির সাবজেক্টের প্রতি আলোকচিত্রীর অনুভূতি, আলোকচিত্রের প্রচলিত ধারা, প্রযুক্তিগত দিক ইত্যাদি, নানান বিষয় জড়িত। ভিশুয়াল থিওরিস্টরা বলেন, ছবি সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনায় প্রত্যয় বা কনসেপ্ট হিসেবে ‘উৎপাদন’ শব্দ আমদানি করা জরুরি।

তার প্রয়োগ জরুরি। তা না-হলে স্রেফ বর্ণনায় আটকে থাকতে হবে, বিশ্লেষণের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ... মিডিয়া-মিলিটারির সম্পর্ক আমি সেন্সরশিপের পরিসরে স্থাপন করছি, এ নিয়ে। এখানে বলে রাখি, আমার এ লেখা সেন্সরশিপের ডিসকোর্স নিয়ে না। এটি একটি পলেমিকাল লেখা, তবে সেন্সরশিপ-এ্যাজ-ডিসকোর্সের চিন্তাভাবনা আমার নিজের ভাবনাচিন্তা কোন রাস্তা ধরে এগোবে, তার দিকনির্দেশনায় কাজে দিয়েছে।

বিশেষভাবে কাজে দিয়েছে উত্তর-কাঠামোবাদের একটি তাত্ত্বিক সূত্র যথা, ডিসকোর্সে উপস্থিতি (প্রেজেন্স), অনুপস্থিতি (অ্যাবসেন্স), দুটোই খেলা করে। ... বিশৃঙ্খল দৃশ্য কথা হচ্ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকালীন দুটো ছবি নিয়ে। একটি প্রকাশিত হয়েছিল, পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়। অপরটি বহুলপ্রচারিত, কখনো নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়নি। হয়নি, বাস এটা বললেই চলবে? আচ্ছা, সূক্ষ্মতার সাথে বলি, এখনো হয়নি।

দ্বিতীয় ছবিটি, তার মানে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের ক্ষমা চাওয়ার ছবিটি কখনো নিষিদ্ধ হবে কি-না, হতে পারে কি-না, হলে কোন ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হতে পারে, প্রসঙ্গ হিসেবে এ বিষয়গুলো তোলা আদৌ বাস্তব কি-না, কাক্সিক্ষত কি-নাজ্জআমার পক্ষে কল্পনা করা কঠিন। উল্টো দিক থেকে প্রশ্ন তোলাজ্জঅর্থাৎ, যেটি বর্তমানে সেন্সরড তা কোনো দিন সেন্সর-মুক্ত হবে কি-না ইত্যাদি ইত্যাদিজ্জআমার পক্ষে কল্পনা করা আরো কঠিন। কথাগুলো তুলছি কারণ কল্পনা করতে পারা, না-পারাও সেন্সরশিপের অংশ। যে ছবিটি সেন্সরড, স্পষ্টতই তা ছাপা যাচ্ছে না (দেখুন প্রথম ছবি)। সেটি কী নিয়ে, তা পাঠককে বোঝাব কেমনে? সেন্সরড ছবির বর্ণনা কোন ভাষায় করব? উপরন্তু, ছবি বর্ণনার ভাষা যাতে সেন্সরশিপের সীমারেখা লঙ্ঘন না করে, তা কীভাবে নিশ্চিত করব? প্রশ্নগুলো পদ্ধতিগত।

উত্তর পদ্ধতিগতভাবেই অনুসন্ধান করেছি। অনুসন্ধান করতে যেয়ে আরো নিশ্চিত হয়েছি যে ছবি দুটো ঘটনা-পরম্পরাভাবে লিংকড বা সম্পর্কিত। আর এ কারণে, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণ করে আবারো বলতে বাধ্য হচ্ছি, সেন্সরশিপ আসলেও খুব জটিল বিষয়। সেন্সর-করা-ছবি বর্ণনার ভাষা : বলছিলাম, ছবি বর্ণনার ভাষা যাতে সেন্সরশিপের সীমারেখা লঙ্ঘন না করে, তা কীভাবে নিশ্চিত করব? অনুসন্ধান করে দেখলাম, ৩টি সূত্রের ভিত্তিতে ছবির অবয়ব রি-কনস্ট্রাক্ট করা যায়, ৩টাই সেন্সর-মুক্ত। শুধু তাই নয়, সূত্রমতে খুবই বিশ্বস্ত।

অথেনটিক। ৩২ একটি হচ্ছে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের ক্ষমা চাওয়া বক্তব্য, এটি আমি একটি প্রধান টেক্সট হিসেবে বিবেচনা করছি। তার কারণ, ক্ষমা চাওয়া যাদের প্রতি উদ্দিষ্ট, তাদের কেউ এর সারকথা অস্বীকার করেছেন বলে জানা নেই। উদ্দিষ্টদের মৌন সম্মতি টেক্সট হিসেবে এর তাৎপর্য বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। মজার ব্যাপার হলো, এই টেক্সট পক্ষ-বিপক্ষের মানচিত্রও খাড়া করেছে, যা একইসাথে ছবির বিষয়বস্তু সম্বন্ধে আমাদের ধারণা দেয়।

অন্য ২টো সূত্রের একটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, অপরটি সামরিক, তবে বেসরকারি। এই তিনটি সূত্র থেকে ছবির বিষয়বস্তু কী, সে সম্বন্ধে কী ধারণা পাওয়া যায়? অধ্যাপক আনোয়ারের বক্তব্য থেকে জানতে পারি পক্ষে-বিপক্ষে কারা আছেন : সেনাবাহিনী/সামরিক বনাম সিভিলিয়ান/বেসামরিক। ‘সিভিলিয়ান’ বিভিন্ন শব্দ দ্বারা -- ‘ছাত্ররা’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘শিক্ষক’, ‘শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক’, ‘ছাত্রদের অভিভাবক’জ্জপ্রকাশিত হয়েছে, যা পরিপ্রেক্ষিত, অর্থাৎ ছবির স্থান-কাল-পাত্র সম্বন্ধে কিছু নির্দিষ্ট ধারণা দেয়। ছবিতে কিছু একটা ঘটছে, যা ঘটছে তা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া স্বরূপ, সেটাও অনুমান করা সম্ভব হয়। (অধ্যাপক আনোয়ারের বক্তব্যে ‘আঘাত’ শব্দ ৫বার উচ্চারিত)।

উপরের আলোচনার টুকরো অংশ, এবং ক্ষমা চাওয়ার যৌক্তিকতা বিচার করে অনুমান করি সিভিলিয়ান কেউ, সম্ভবত ছাত্র, কোনো সেনাসদস্যকে আক্রমণ করছেন। আক্রমণের ধরন কী তা অনুমান করা যায় বিএসএফ-এর একটি প্রতিবেদন-এর শিরোনাম দেখে, The “Flying Kicker” Identified। “The” এবং “Kicker” থেকে অনুমান করি ছাত্র পক্ষে একাধিক নন, একজনই ছিলেন। মনে হবে সেনাসদস্যও একজন, “একজন সেনাসদস্যের ওপর আঘাতটি পড়ে যায় গোটা সেনাবাহিনীর ওপর”। ‘এক’ শব্দটি এখানে রূপকও হতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয় তার সম্ভাবনা কম।

যুক্তি দেখাতে বললে আমার মানতে হবে এ পর্যায়ে পৌঁছে আমি কমনসেন্সের শরণাপন্ন হচ্ছি। আমি অনুমান করছি একজন নিরস্ত্র ছাত্র/সিভিলিয়ানের পক্ষে (ছাত্র/সিভিলিয়ান-এর হাতে অস্ত্র ছিল, তার উল্লেখ কোথাও পাইনি, আমার অনুমান, সশস্ত্র হলে অবশ্যই উল্লিখিত হতো), একাধিক সেনাসদস্যকে “flying kick” মেরে আক্রমণ (‘আঘাত’) করা বাস্তবিক-অর্থে অসম্ভব। আরেকটি বিষয় অনুমেয় : ছবিতে সেনাসদস্য ইউনিফরম পরিহিত অবস্থায় ছিলেন (“উত্তেজিত ছাত্ররা ইউনিফরম পরিহিত সেনাবাহিনীর ওপরও আঘাত করে,” “সেনাবাহিনীর ইউনিফরমের ওপর যদি কেউ আঘাত হানে...”)। এ ছিল ছবির বিষয় কী, তা রি-কনস্ট্রাকশনের কাজ। এই ছবির প্রকাশ বিশৃঙ্খলা ঘটায় -- এটি আমার আর্গুমেন্টের একাংশ।

অধ্যাপক আনোয়ারের বক্তব্যে আমরা সেনাবাহিনীর ‘অপমান’বোধর কথা, তাদের ‘বিব্রতবোধ’-এর কথা, ‘মনে ... আঘাত’ লেগেছে, সে কথার উল্লেখ পাই। আমি সেটা নিয়ে বলছি না। আগেই বলেছি, আমার আলোচনার বিষয় রক্ত-মাংসের মানুষ না, বরং ছবি, বা রেপ্রিজেন্টেশন। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ-শাসনের দায়িত্ব গ্রহণের পর (জানুয়ারি ১১, ২০০৭), এ দেশের ভিশুয়াল রেপ্রিজেন্টেশনের জগতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বদল ঘটে। টিভি, প্রিন্ট মিডিয়া, উভয় ক্ষেত্রেই এ বদল ছিল লক্ষণীয়।

ম্যাসকিউলিনিটির ধরন হিসেবে ‘সামরিক ম্যাসকিউলিনিটি’ একটি সুনির্দিষ্ট, বিশিষ্ট এবং কাক্সিক্ষতভাবে পুরুষ-হওয়াকে রেপ্রিজেন্ট করা শুরু করে। এই ভিশুয়াল ইমেজ-নির্মাণ নির্বাচিত সরকার আমলের (১৯৯০-২০০৭) ম্যাসকিউলিন রেপ্রিজেন্টেশান থেকে লক্ষণীয়ভাবে ভিন্ন, সে সময়কালে সামরিক পৌরুষ একইভাবে ইলেক্ট্রনিক কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ায় দৃশ্যের সম্মুখভাগে (visually foregrounded) ছিল না। সামরিক পৌরুষ নির্মাণে ইউনিফরম কেন্দ্রীয়; এ ক্ষেত্রে, বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে টিভি-তে প্রচারিত গানের সাথে সামরিক প্রশিক্ষণের দৃশ্য। ইউনিফরম হচ্ছে সামরিক পৌরুষ-এর প্রতীক, আর ইউনিফরম-এর অর্থ হচ্ছে শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, কষ্টসহিষ্ণু হওয়া। কঠোর ও কঠিন সামরিক প্রশিক্ষণের দৃশ্য অর্থ লাভ করে দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসা, দেশপ্রেমের অনভূতির পরিসরে।

সেনাবাহিনী ও সেনাবাহিনী সহায়ক প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে নির্মিত এই টেলিভিশুয়াল ‘নিজ’জ্জঅর্থাৎ সামরিক পৌরুষ সম্বন্ধেজ্জযে জ্ঞান উৎপাদন করে (self-knowledge) তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘দুঃসাহস’। ইউনিফরম প্রসঙ্গে ফিরে আসি। অধ্যাপক আনোয়ারের বক্তব্যে ‘ইউনিফরম’ আলাদাভাবে উল্লিখিত, “উত্তেজিত ছাত্ররা ইউনিফরম পরিহিত সেনাবাহিনীর ওপরও আঘাত করে। একজন সেনাসদস্যের ওপর আঘাতটি পড়ে যায় গোটা সেনাবাহিনীর ওপর...”। রেপ্রিজেন্টেটিভ-নেস অর্থে ‘ইউনিফরম’, ‘একজন সেনাসদস্য’ ও ‘গোটা সেনাবাহিনী’র এই সমীকরণ, এক কথায় বললে, অভূতপূর্ব।

বক্তব্য-শেষে তিনি আবারো বলেন, “সেনাবাহিনীর ইউনিফরমের ওপর যদি কেউ আঘাত হানে...”। একইসাথে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, অধ্যাপক আনোয়ার সেনাবাহিনীর সমগ্রতাকে ম্যাপ-আউট করেন সর্বোচ্চে অবস্থিত ‘সেনাপ্রধান’ ও সর্বনিম্নে অবস্থিত ‘সাধারণ জওয়ান’, দুই প্রান্তের দুই পদ দ্বারা, দুই প্রান্তের মধ্যে অবস্থিত সেনাকূল দ্বারা। আমার বক্তব্য হচ্ছে, এই সমীকরণ ও ম্যাপিং-আউট যুক্তি-চর্চার (line of reasoning) বিশেষ ধারার মধ্যে অবস্থিত। উপরন্তু, আমার বক্তব্য হচ্ছে, এই সমীকরণ ও ম্যাপিং-আউট-এর পরিণাম ভয়াবহ। সেন্সরড ছবির সাহায্যে ব্যাখ্যা করি : সমীকরণের কারণে ছবি সবধহরহম-অর্থে অত্যধিক ভরপুর হয়ে ওঠে।

ছবির ‘ছাত্র’ হয়ে ওঠেন সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের, সমগ্র সিভিলিয়ান সেক্টরের প্রতিনিধি, আর একজন (অভাগা) সেনাসদস্য হয়ে ওঠেন সমগ্র সেনাবাহিনীর, সমগ্র সেনাবাহিনীর মান-সম্মান, মর্যাদার প্রতিনিধি। সেনাবাহিনীর গায়ে একটি বিশেষ অর্থজ্জঅ-সাহসীজ্জআটকে যায়, তার মাধ্যমে রেপ্রিজেন্টেশনের জগতে সেনাবাহিনীর অপরাপর অর্থ, বীর, দুঃসাহসী ইত্যাদি (শুধু মুক্তিযুদ্ধে নয়, জাতিসংঘের মিশনে দেশের বাইরেও) ম্লান হয়ে যায়। মুছে যায়। আমার ধারণা, অধ্যাপক আনোয়ারের এই বক্তব্য যাদের প্রতি উদ্দিষ্ট, তাদের line of reasoning একই। আগেই বলেছি, বিশৃঙ্খলা দূর করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর কাছে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের ক্ষমা চাওয়ার ইমেজ জরুরি হয়ে পড়ে।

কিন্তু ইমেজ জগতে শৃঙ্খলা ফিরে আসলেও, ছবি দুটো ঘটনা-পরম্পরা দ্বারা লিংকড হওয়ার কারণে, কজ-অ্যান্ড-ইফেক্ট ভাবে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে, দ্বিতীয় ছবির উপস্থিতি, তার প্রেজেন্স, অনুপস্থিত অন্য-কে, একটি অ-সাহসী ইমেজকে মনে করিয়ে দেয়। সেন্সরশিপ সত্ত্বেও।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।