আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“রক্ষক যখন হয়ে উঠে ভক্ষকঃ”বিশৃঙ্খল সেনা অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর গর্ব যুগে যুগে হয়েছে খর্ব ।

বেশ কিছু দিন ধরেই ভাবছিলাম লিখব বিষয়টি নিয়ে তবে লিখা হয় না। আসলে নিরাপত্তার বিষয়েও যথেস্থ সন্ধিহান ছিলাম যে , আমার নিরাপত্তা কে দিবে ? কেননা যতই মত আর বাক স্বাধীনতার কথা আমরা বলি না কেন আসলে দিনের শেষে আমাদের স্বৈরাচারী মনোভাব বের হয়েই আসে যখন আমাদের বিপক্ষে কোন মত যায় । এটিই আসলে বাঙ্গালী চরিত্র এই চরিত্র থেকে যেমন আমাদের রাজনৈতিক দলগুলি উপরে নয় তেমনি নয় আমাদের সেনাবাহিনী । কিছু অফিসার এর ক্ষমতার লালসা এবং ব্যাক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশে এই বাহিনী বিভিন্ন সময়ে হয়ে উঠেছে ভয়ংকর, জনবিরোধী এবং দেশ বিরোধী । এই বাহিনীর সার্থকতাও কম নয় এই দেশের তরে কিন্তু সেই গুলী তারা ধুলুতে মিশিয়ে দিয়েছেন তাদের বেশকিছু সংখ্যক কাজের মাধ্যমে।

স্বাধীনতা উত্তর যেই সেনাবাহিনী আমাদের এই দেশে গঠন করা হয়েছিল বস্তুত তার প্রধান একটি অংশ ছিল ততকালিন পাকিস্তান এর কর্মকর্তা এবং এই বাহিনীতে আসলে তখনই বিশৃঙ্খলার একটি বীজ বুনা হয়ে যায়। তার নমুনা আমরা দেখতে পাই ৭৫ ও এর পরবর্তী সময়গুলিতে । সত্য স্বীকারে কোনও লজ্জা নেই যে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভিতরে যে সব বিশৃঙ্খলা এবং দেশের অভ্যন্তরে যেই অস্তিরতা সৃষ্টি হয়েছিল তার পিছনে বেশ বড় একটি হাত ছিল মেজর জিয়াউর রহমান সহ আরও বেশ কিছু আইএসআই কর্মকর্তাদের অবশ্য যারা পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন এবং অনেকেই সেক্টর কমান্ডার এর মতন গুরত্তপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন । এর পরের ইতিহাস সবার জানা । কালো সেই দিনগুলি ।

জাতির পিতার মৃত্যু । একদল জোয়ান , যারা পরাজয় নিশ্চিত জেনে মুক্তিযোদ্ধার লেবাস নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের শেষ কয়েকদিনে যাতে এই সেনাবাহিনীর ভিতরে ঢুকে এরুপ কাজ সমাধা করতে পারে। এবং তারা সেই দিন সফলও হয়েছিল। পিতার মৃত্যু হল দেশ হল এতিম । খুনি মুসতাক তখন আসলো ক্ষমতায় তবে এতেও শান্ত হয়নি ওই হায়ানারা ।

একে একে হত্যা করল জাতীয় চার নেতাকে আর কর্নেল তাহেরকে করল বাহিনিচ্যুত এবং সময়ের ব্যাবধানে তাকে হত্যাও করা হল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে । এরই মাঝে ক্ষমতা গ্রহন করলেন আরেক সেনাকর্মকর্তা বলা চলে তৎকালীন বাহিনীর প্রধান (আসলে তখন যে আসলে কে সেনাবাহিনিকে চালাচ্ছিল সেটাই বুঝা দুস্কর ), মেজর জিয়াউর রহমান । একজন সাহসী সেনা কর্মকর্তা যিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। নেতৃত্বের সব গুনাবলিই তার মধ্যে বিরাজমান । আমি তাকে মূল্যায়ন করি মুলত একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তবে স্বাধীনতার পরবর্তীসময়ে স্বাধীনতা কিংবা দেশের ঐক্য বজায় রাখতে তিনি কোন দায়িত্ব পালন করেননি বরং নিজ দায়িত্ব থেকে সড়ে গেছেন।

মুলত তিনি কাজ করতেন পর্দার পিছন থেকে ঠিক যেভাবে আইএসআই কাজ করে । একজন সিনিয়র অফিসার হিসেবে তিনি কখনোই বঙ্গবন্ধুর খুনের দায় এড়াতে পারেন না। এরপর রাজনৈতিকভাবে তিনি কি করেছেন পাকিস্তানের প্রোপাগান্ডা বাস্তবায়ন, রাজাকার পুনর্বাসন, গনতন্ত্রের নতুন জন্মদান এই সব বিষয়ে যাব না শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডেই থাকতে চাই। এরপর যতটুকু আমি জানি দেশ তিনি ভালই চালাচ্ছিলেন কিন্তু যেই স্পর্ধা সেনাবাহিনীর ভিতরে আগেও দেখা গিয়েছে সেটা আবারো জেগে উঠল এবং সেনাবাহিনীর হাতেই মৃত্যুবরন করলেন মেজর জিয়াউর রহমান ( কেন তাকে “শহীদ জিয়া” বলা হয় একটু বলবেন জানা থাকলে)। তারপর আবার স্বৈরশাসন এইবার ঘটনার নায়ক হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ।

এই ব্যাক্তি দায়িত্ব নিলেন দেশের স্বৈরশাসনের এবং দেশ থেকে গনতন্ত্র মুছে ফেলার প্ল্যান নিয়েই এগুচ্ছিলেন ঠিক লিবিয়ার গাদ্দাফি ও হুসনি মুবারকের মতন । শোষণ আর নিপীড়নের আট বছর । এর মধ্যে সুযোগ করে দেয়া হয় রাজাকারদের প্রতিষ্ঠিত হতে ঠিক জিয়ার সরকারের ধারাবাহিকতায় কেননা আগেই বলেছি পাকিস্থানি মিলিটারির সদস্যে গড়া সেনাবাহিনীর কাছে আর কিই বা আশা করা যায়। যাই হোক নুর হোসেনের মত যুবকদের প্রানের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হল গনতন্ত্র এবং বাংলাদেশ পেল দুইটি মানসকন্যা গনতন্ত্রের শেখ হাসিনা ও বেগম খলেদা জিয়া । যাক এইবার কিছুকাল সেনাতাণ্ডব থেকে রক্ষা পেল দেশ ।

সব ঠিক মতই চলছিল ২০০৬ পর্যন্ত । এইবার খালেদা হাসিনার কারাবন্দী হওয়ার মাঝে দিয়ে দেশ আরেকবার চলে গেল স্বৈরাচারের হাতে । এই বার নায়ক মইন উ আহমেদ । খন্দকার মুশতাক,মেজর জিয়া, কিংবা এরশাদের মতই উচ্ছবিলাসি স্বপ্ন দেখে এরুপ ভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন তিনি । এইবার আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে আগের মতন ওই সময়য়ে বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানি প্রভাব ছিলও না থাকলে হয়ত সেও প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেত দেশের।

যাক এই সময়য়ে গনতন্ত্র কিছুটা বুজত মানুষ তাই আর পেরে উঠেননি সেই সময়। তবে কলঙ্কিত করেছেন আরেকবার সেনাবাহিনিকে তাতে সন্দেহ নেই। *এখন প্রশ্ন হল এই বর্ণিল বাহিনীর এত কলঙ্ক কেন? আমাদের দুইজন রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করেছে আমাদের সেনাবাহিনী। আমাদের দুইজন প্রধানমন্ত্রীকে কারাবন্দী করেছে আমাদের সেনাবাহিনী। আমাদের জাতীয় নেতাদের হত্যা করেছে এই আমাদের সেনাবাহিনী ।

অবশ্যই এই বাহিনীর সংস্কার প্রয়োজন । দরকার হলে মারশাল ল এ এর শাস্তির স্থানটি আরও বিশাল আকারে আনা উচিৎ সাথে সাথে সংবিধানেও এরুপ ক্ষমতার উৎসকে বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে এর প্রধানের দায়িত্তে থাকতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নিজে । *কেন তারা কিছু অফিসারের উচ্ছবিলাসি লোভের জন্য নিজেদের গর্ব মাটি করবেন ? না আমরা সেটা হতে দিব না । আমাদের সেনাবাহিনীতে আছে দেশ প্রেমের এক বিশাল উদাহরন তো হ্যা ওই কিছু দাগ থেকেই যায় কিছু মানুষের জন্য।

তবে আমরা পাসেই থাকব আমাদের সেনাবাহিনীর তবে সাথে সাথে তাদেরকেও বুঝতে হবে সাহসিকতা আর স্পর্ধার মাজখানের সীমারেখাটি । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।