আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চতুর্ভুজ

আনাড়ী রন্ধন শিল্পীর ব্লগ B-)। ব্লগের বাজে-মানহীন লেখাগুলোর মাস্টার পিস দেখতে চাইলে এই ব্লগারের পোষ্ট গুলো পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না। B-) রোজ রোজ এক রুটিন ভাল লাগে না। ভেবেছি সত্যি সত্যি চাকরীটা ছেড়ে দেবো, কলেজের জন্যে তৈরী হতে হতে খুব বিরক্তি নিয়ে বলছিলো আনু।

== এটা নতুন কিছু নয়। তোমার ভাল না নাগলে ছেড়ে দিতে পারো তবে যদি আমার মতামত চাও তাহলে বলবো সময় নাও। একটু ভাবো, ভেবে দেখো আসলেই কি চাইছ তুমি। ভাবতে গেলে মাথা ঘুরে যায়। ধুর....................... == এত বিরক্ত হচ্ছো কেন ? হেসে ফেললো আনু, মনে পড়ে গেলো ভার্সিটি লাইফের বান্ধবী তানজি'র কথা == কি ব্যাপার হাসছো যে....... তোমার কথা শুনে তানজির কথা মনে পড়ে গেলো।

আমি সামান্যতেই এত বিরক্ত হয়ে যেতাম যে তা দেখে তানজি বলতো তোমার যদি একটা বয় ফ্রেন্ড থাকতো তবে তোমার বিরক্তিকর কথায় সে পালিয়ে চলে যেতো.....হাহ হা....... == আমার তো এখন তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে সেই ভদ্রলোক এই কারনেই গেছে......হাহ হাহ হা...........সরি, ডোন্ট মাইন্ড.....জাস্ট কিডিং । আনুর মনে পড়ে গেলো রাফাতের কথা। সদ্য কলেজ পাশ করেছে সে তখন। ভার্সিটির জন্যে কোচিং করছিলো। সে সময়ে কোন একভাবে পরিচয় রাফাতের সাথে।

প্রথমে আনু প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলো কোন সম্পর্কে জড়াবে না কিন্তু আস্তে আস্তে কিভাবে যেনো হয়ে গেলো। অনলাইনে খুব কথা হলেও দুজনের দেখা হতো কদাচিৎ। সে চাইলে হয়ত গুনে বলতে পারবে কতবার দেখা হয়েছিলো। রাফাত তখন ACCA করছে। আনুকে বলেছিলো দু বছরের আগে কোনভাবেই তার পড়া কমপ্লিট হবে না।

এতে আনুর কোন সমস্যা ছিলো না। রাফাতের কিছু শর্ত ছিলো যা আর দশটা সাধারন মানুষের কাছে অযৌক্তিক মনে হলেও আনুর কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছে, তাই সে খুব একটা প্রতিবাদ করেনি। আর ততদিনে ভালবাসাটা এতটাই প্রবল হয়ে গিয়েছিলো যে অন্য কিছু বাধা হতে পারেনি। কিন্তু পথ তো আর সোজা হয় না, সেটা একসময় কোথাও না কোথাও গিয়ে বেঁকে যায়। অজানা এক কারনে রাফাত তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

প্রথমে পাগলের মতন চেষ্টা করেছে যোগাযোগ করতে কিন্তু ফলাফল তেমন পায়নি। রাফাতের আচরনে তার জেদ চেপে গিয়েছিলো সত্যিটা সে জানবেই কেন রাফাতের এই আচরন। একদিন দ্বায়সারা গোছের কিছু উত্তর দেয় রাফাত যা শুনে সে প্রথমে বিশ্বাস-ই করতে পারেনি। জেদটা আরো বেশী চেপে যায়। এর পর রাফাত এমন কিছু বলে যা আগের বারের সাথে মেলাতে পারেনা।

মেলাতে পারে না কেন দুবার দু রকম কথা বললো তাকে। এর মাঝে ভর্তি পরীক্ষার দিন চলে এলো। ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে যায় আনু। খুব ফাকা লাগে নিজেকে। প্রথম দিকে খুব কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে।

একদিন খবর পায় রাফাত ইংল্যান্ড চলে গেছে। আনুর ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো। মনে হচ্ছিলো দুজনে একই শহরে থাকে এইটুকু ভেবে অন্তত শান্তি পেতো সে কিন্তু এখন.....পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নেয় সে। রাফাতের সাথে আর যোগাযোগ করেনি সে তবে ওর বিয়েতে তাকে দাওয়াত দেবে বলে মনস্থির করে। জেদের বশেই এই সিদ্ধান্ত নেয় সে।

== কি ব্যাপার কিছু ভাবছো মনে হচ্ছে......... হ্যা....নাহ্ তেমন কিছু না। মাহীর কথা সম্বিৎ ফিরে পায় সে। দ্রুত হাতে ঘড়িটা নিয়ে সময় দেখে হাতে পড়ে নেয় সে। এত বেজে গেল কি করে। আজ দেরী হয়ে যাবে ক্লাসে যেতে।

আচ্ছা আমি নাহয় দেরী করেছি তুমি কি করলে, খেয়াল ছিলো না এত দেরী হয়ে গেলো, কি যে করো না...... == আমাকে দোষ দিচ্ছো কেন। রেডী হয়ে এসে দেখি তুমি একমনে ভেবে যাচ্ছো কি যেনো। তোমাকে এভাবে দেখলে বেশ লাগে তাই আমিও একটু দেখে নিলাম। বলেই হো হো করে হেসে ফেললো মাহী। ফাজলামো রাখো, এত তেল দিতে হবেনা।

ঘরের বউতো আর পালিয়ে যাচ্ছে না যে তেল দিচ্ছো। এই কথা আমি রাগলেও তুমি বলো, হাসলেও বলো। == কি আর করবো বলো। অন্য কাউকে বলবো সে বয়সতো আর নেই তুমি হলে আমার একমাত্র আপন বউ উফ মা...হী............শোন আমি ভেবেছি সত্যিই চাকরীটা ছেড়ে দেবো। == কলেজ শেষ করে আজ নদীর ধারে যাবো ঘুরতে।

তোমার সব কথা নাহয় সেখানেই শোনা যাবে। ঠিক আছে যাও তাহলে। আনু-মাহী দুজনেই দুটো কলেজের অধ্যাপক। মাহী সরকারী কলেজের অধ্যাপক। জায়গাটা পছন্দ হওয়ায় এখানে কোয়ার্টার পাওয়ার পর আনু শহরের কলেজ ছেড়ে এখানকার একটি মেয়েদের কলেজে চাকরী নেয়।

আজ তার দুটো ক্লাস ছিলো। শেষ করে মাহীকে বলে আগেই নদীর পাড়ে চলে এসেছে। হুট করেই সাদ এর কথা তার মনে পরে যায়। এতে সে নিজের উপরই বিরক্ত। রাফাতের সাথে সম্পর্কের সময় সাদ তাকে প্রপোজ করে।

স্পষ্ট বলে দিয়েছিলো সে রাফাতকে ভালবাসে। কিন্তু ছেলেটা তাকে প্রচন্ড ভালবাসতো এটা সে বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু কিছু করার নেই। রাফাতের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারটা জানতে পেরে আবার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আনু কিছুতেই রাজী হয়নি। ছেলেটা খুব পাগলামী করতো।

ঢাকার বাইরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো সাদ। ছুটি হলেই আনুকে কিছু না বলে ঢাকায় এসে ওর ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে দাড়িয়ে থাকতো। ব্যাপারটা মোটেই ভাল লাগেনি আনুর। একসময় তার সাথে বসে ব্যাপারটি মিটিয়ে ফেলেছে। আর আসেনি সাদ।

কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে সম্বিৎ ফিরে পায় আনু.....ওহ! তুমি। == আর কারো কি আসার কথা ছিলো নাকি ম্যাডাম, দুষ্টুমী মাখা হাসি মুখের জিজ্ঞাসা। বাদ দাও, আমরা যে জন্যে এখানে এসেছি......আমি ভেবে দেখলাম চাকরীটা ছেড়েই দেবো। শখের বসে ঢুকেছিলাম অধ্যাপনায়। জীবনের একটা লক্ষ্য ছিলো এটা।

স্বপ্ন ছিলো রুম ভর্তি ছাত্র-ছাত্রীর সামনে লেকচার দেবো আর সবাই তন্ময় হয়ে শুনবে। একটা সত্যি কথা কি শুধু আমার স্বপ্ন হলে আমি এখানে হয়ত আসতাম না। কিন্তু আমার মায়ের স্বপ্নটা বেশী ছিলো, আমি একজন শিক্ষিকা হবো। আর তাই এখানে আশা। ভেবে দেখলাম স্বপ্ন আমার পূরন হয়ে গেছে, লক্ষ্যে পৌছে গেছি আমি আমার আর কিছু করার নেই।

একটানে এতগুলো কথা বলে থেমে গেলো আনু। তার দৃষ্টি নদীর মাঝখানের বালু চরের দিকে। == হুম বুজলাম.......তোমার মায়ের স্বপ্ন। তোমার কি মনে পড়ে আমাদের বিয়ের পরের দিনের কথা........ আনুর সামনে ভেসে ওঠে সেই স্মৃতি। এখনো তার কাছে অবাক লাগে সে সময়টা।

কিভাবে যেনো কি সব হয়ে গেলো হুটহাট করেই। আসলে বিয়ের ব্যাপারটাই মনে হয় এরকম। তবে একটা জেদ আনু রেখেছিলো, রাফাতের বাসায় গিয়ে কার্ড দিয়ে এসে দাওয়াত করে এসেছিলো আনু। এমন বাগে ফেলেছিলো ওকে যে বিয়েতে না এসে পারেনি...... == তুমি কি খেয়াল করেছিলে দ্বিতীয় দিন তোমাদের বাসায় আসার পর তোমার মা আমাকে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে অনেক্ষন যাবত কথা বলেছিলেন? অ্যা.....হ্যা। আমি জিজ্ঞেস করলেতো বলোনি কি কথা হয়েছিলো তোমাদের মাঝে।

== আমাকে তোমার মায়ের স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। তিনি খুব চেয়েছিলেন পড়া লেখা করতে, একজন শিক্ষিকা হতে কিন্তু সুযোগ পাননি তিনি। আমাকে খুব অনুরোধ করেছিলেন তোমার পড়াশুনা যেনো বন্ধ না করি, এবং তোমার চাকরী করা না করার ব্যাপারে তোমাকে যেনো কোনদিন চাপ না দেই। তাই তুমি যখন কলেজে ঢুকতে চেয়েছো আমার পরিবার থেকে আপত্তি করলেও আমি যেমন কোন বাঁধা দিইনি আজ তুমি ছাড়তে চাইছো সেখানেও বাঁধা দেবো না। তবে আমার পরামর্শ হলো চাকরীটা ছেড়ো না।

তুমি এটাকে অনেক ভালবাসো এটা মনে হয় তোমার চেয়ে বেশী আমি জানি। পারবে না ছেড়ে থাকতে। বাসায় চলো সন্ধ্যা হয়ে আসছে, শান্ত গলায় বললো আনু। == চলো আজ বাইরে কোথাও খেয়ে যাই দেরী হয়ে যাবে, মেয়েদের পরীক্ষার খাতা জমে আছে সেগুলো কাল জমা দিতে হবে। == এক মূহুর্ত থমকে হো হো করে হেসে উঠলো মাহী।

যথা আজ্ঞা ম্যাডাম, চলুন তাই হবে। থিম: মাহবুব ভাই ধন্যবাদ মাহবুব ভাই থিমটার জন্যে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।