আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জোকস এবং বাস্তব ঘটনা! মিল সামান্য অথবা অনেক আথবা একটুও না!

ধুর এক রোগী দাঁতের ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন, উদ্দেশ্য দাঁতের চিকিৎসা করান (আরে ব্যাটা, দাঁতের ডাক্তারের কাছে পেটের চিকিৎসা করাইতে যায় নাকি?)। ডাক্তার তার দাঁত পরীক্ষা করে বললেন যে দাঁত ফেলান লাগবে! রোগীতো ভয়ে অস্থির! সে আবার এইগুলি ভয় পায় (আরে ব্যাটা, কি ফাউলামি শুরু করলি, যে কেউইতো ভয় পাবে)। তো ডাক্তার একটু রসিক টাইপের ছিলেন, তাই তিনি রোগীকে বললেন যে আপনি একটু মদ খেয়ে নিন। আশাকরা যায় আপনার সাহস একটু বাড়বে। তখন আর এত ভয় লাগবে না।

তো রোগী ডাক্তারের কথা মত একটু মদ খেয়ে দেখলেন আসলেই ভাল লাগছে, তো সে এবার অনেক খানি মদ খেয়ে ফেলল। এর ফলে যা হবার তাই, সে গেল মাতাল হয়ে। ডাক্তার মুখ ভরা একটা হাসি নিয়ে জিজ্ঞাসা করল, কি? সাহস বেড়েছে? রোগীর উত্তর, হু বেড়েছে তো। এইবার দেখি কোন শালায় আমার দাঁত তুলতে আসে, আমি তার দাঁতই তুলে নিব। ---------------------------------------------------------------- এবার আসি ঘটনাতে।

ঘটনাটা ২০০৬ এর। ঠিক ভাবে বললে ২০০৫ এর একবারে শেষ দিকের। ভর্তি পরীক্ষা শেষ প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরও হাজার হাজার ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের ভীড়ে আমিও ছিলাম। কপাল গুনে একখানে চান্স হলেও কপাল দোষে আর পড়তে পারলাম না সেখানে! আমি যেখানে কোচিং করতাম, সেখানে আমাদের ব্যাচেই ছিল আর একটি ছেলে, নাম বলতে চাই না, তাই ছদ্ম নাম দিলাম 'ক'।

ক এর অনেক অনেক ইচ্ছা ছিল কোন পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়বে। সে যেই সাবজেক্টই হোক না কেন। কিন্তু ক কোথাও চান্স পায় নি। পৃথিবীতে সব থেকে কোন মানুষটিকে বেশি কাদঁতে দেখেছি জিজ্ঞাসা করলে আমি অনায়েসে তার নাম বলে দিতে পারি। ক যেভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল তা বলার মত না।

ক এর জন্মদিন ছিল জানুয়ারী ২৯ তারিখ (আজকের দিন)। তার হঠাৎ করে মাথায় চলে এল যে এই দিনেই আত্মহত্যা করতে হবে। বিষয়টা কিভাবে যেন আমি টের পেয়ে যাই। ২৮ তারিখ রাত থেকে তার সাথে থাকি, সারাটা দিন তার সাথে থাকি, অনেকবার চেষ্টা করেছিল সে কিছু একটা করার, আরও ৩জনের সহযোগীতায় তাকে ঠেকিয়ে রেখেছিলাম। এক পর্যায়ে এসে তাকে বোঝাতে সক্ষম হলাম যে আরও একবার চান্স আছে, এবং সেই বারের জন্য আমি ওকে সাহায্য করব।

পরের একটা বছর প্রতিটি দিন আমি ওকে পড়াতে থাকি। বিভিন্ন ভাবে সহোযোগীতা করতে থাকি। আমার পড়ান বা সহোযোগীতার থেকে বেশি সে চেষ্টা করেছে। ফলাফল হল একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সব থেকে প্রিয় সাবজেক্টে প্রথম ৫জনের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া। যখন রেজাল্টটা শুনেছিলাম তখন আমরা দুইজন রাস্তা পার হচ্ছিলাম।

রেজাল্টটা শুনে ভুলে গিয়েছিলাম রাস্তা পার হবার কথা! রাস্তার মধ্যেই যেই নাচটা নেচেছিলাম, তা মনে পড়লে এখনও লজ্জা এবং আনন্দ লাগে। ১ মিনিটের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ এসে আমাদের দুইজনকেই প্রায় কান ধরে টেনে রাস্তার বাইরে নিয়ে গেল, আমরা সেই ট্রাফিককে ধরেও নাচি নাচি অবস্থা! বেশ কিছুদিন পরের কথা! তখন তার ক্লাস শুরু হয়েছে, সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আর আমি ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। হঠাৎ কোন এক ভাই তাকে কি নিয়ে যেন বলল যে শফিউল না থাকলেতো তুই এতদুর আসতে পারতিস না। আমি তখন ঐ রুমের মধ্যে না থাকলেও হার্ডবোর্ডের পার্টিশন দেওয়া পাশের রুমে ছিলাম। ক ঐ ভাইয়ের কথার যেই উত্তর টা দিল, তাতে হঠাৎ করে মনে হল পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল! তার বক্তব্য আমি যদি না থাকতাম, আজকে সে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐ সাবজেক্টেই ১ম স্থান করে চান্স পেত।

আমি নাকি তার জন্য প্রতিবন্ধকতা ছিলাম। কথাটা শুনে আমি তার সামনে যেতে পারিনি, কিন্তু ঐ বড় ভাই তার মুখে একটা থাপ্পড় মেরেছিলেন। কারণ ঐ বড়ভাই নিজে জানতেন যে আমি তার জন্য কতটুকু করেছি। মাঝে মাঝে উনি আমাকে ক্ষেপাতেন এটা বলে যে, ক নাকি আমার গার্লফ্রেন্ড, না হলে এতটা কেন করি তার জন্য? পরে ঐ বড়ভাই দোষটা দিয়েছিলেন আমাকে, আমি নাকি বেশি করে ফেলেছিলাম। জানি না, জানতেও চাই না।

কারও জন্য কিছু করতে ভাল লাগে। সেই ভাল লাগা থেকেই করি। আগেও করেছি, হয়ত আগামীতেও করব। কিন্তু এর পর আমি আর ক এর সামনে যেতে পারি নি। লজ্জা? ঘৃণা? ভয়? নাকি অন্য কিছু? জানি না।

২০০৬ সালের ২৯ জানুয়ারী সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি প্রতিটি বছর তাকে তার জন্মদিনে উইশ করব কিনা! কথা দিয়েছিলাম করব। সেই কথাটাই রাখছি। শুভ জন্মদিন ক। ভাল থাকিস! তোর প্রতি আমার কোন রাগ নেই। তুই সামনে এসে আমার সাথে কথা বললেই দেখবি আমি আগের মত করেই তোর সাথে কথা বলব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.