তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।
এতো দুষ্টমিভরা ছেলেবেলা। এক সময় শখের বসে চুরি করতাম। বিকেল হলে ঘুরার নাম করে কার গাছে কি পরিমান ফল পেকেছে দেখে এসে রাতে অভিযান। নিজের বাড়ির এতো এতো ফল ।
তারপরও চুরির মজাই আলাদা। ধরা পড়লে মায়ের আদর। মা'কে ভয় পেতাম প্রচন্ড। এখনো চামড়া সরালে মনে দাগ পাওয়া যাবে। আর ভয় পেতাম সন্ধ্যার পর টেবিলে বসলেই যে ঘুম আসবে।
স্যার ছিলেন সাক্ষাত আজরাইল। তারপরও মায়ের চেয়ে কম ভয় পেতাম। গ্রামের স্যারেরা আবার বেত ছাড়া আদর করতে পারেন না। উনার গরু পিটিয়ে মানুষ করার জন্য স্কুল/বাড়িতে বেতের সদ্ব্যব্যবহার করতেন।
স্বভাবসিদ্ধভাবে অংক ভয় পেতাম।
সাথে ছিলো ইংরেজি ভীতি। ক্লাস এইটে বীজগনিতকে বেশ ভালোভাবে ভালোবেসে ফেল্লাম। কিন্তু পাটিগনিত দুই চোখেই দেখতে পারতাম না। বানরের তৈলাক্ত বাঁশ অথবা সুদ-আসল আমান ব্যাপক ভয়ের। কোনমতে পাশের চিন্তা করতে হতো পার্টিগনিতে।
বীজগনিতে ১০০%। স্কুল, কলেজ অনেক কষ্টে উতরাইছি। আমাদের এম.সি কলেজে এক অংকের শিক্ষক ছিলেন। উনি বীজগনিতের অংক করতে গিয়ে কখনো কখনো ঘুরেফিরে আবার পুর্বের জায়গায় চলে আসতেন। আমারও অবস্হা মাঝে মাঝে ঐরকম হতো ।
কোনমতে পড়াশোনার ইতি টেনে কামলা শুরু করে ভাবলাম মনে হয় বেঁচে গেছি। কিন্তু কয়েকদিন থেকে আবার পার্টিগনিত ভীতি আবার চলে এসেছে ।
প্রত্যেকদিন কাজ থেকে এসে ছোটবোনের সাথে একটা ঝগড়া হবেই। উনি একমাত্র এবং সবার ছোট তাই সব আব্দার রাখতে হবে। উদাহরন, উনার হাই কনফিগারের পেন্টিয়াম ৪ কম্পিটার আছে তারপরও আমাদের কেন ল্যাবটব? উনাকে দিতে হবে।
তখন ধমক দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আমি এতো বেতন পাই, কি করি এতো বেতন দিয়ে? যেনো উনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। উনাকে এতো অল্প দেই কেন? আবারো ধমক।
উনার গনিত, ইংরেজি, ফিজিক্স, কেমেট্রির বেতন ছাড়া শিক্ষক। তবে মাঝে মাঝে উনি আমার ডয়েচের শিক্ষিকা।
বীজগনিতগুলো যদিও খুব সহজে করা যায়। কিন্তু আমাদের আর উনাদের নিয়মের ব্যাপক ফারাক। আমাদের মতো ১-২০ পর্যন্ত নামতা শিখতে হয়নি উনাদের। আমি ঘ্যাচ করে অংক শেষ করে ফেল্লে উনি চিল্লানো শুরু করেন। এই রকম হবে না ঐ রকম হবে না।
তারপরও কাভার করা যায়। মাঝে মাঝে কিছু ফাজলামি সমস্যা আসে যে দোস্তদের ফোন করেও সমাধান মিলে না। সমস্যা সমাধান না হলে সবার সম্মান নিয়ে টানাটানি।
গতদিন থেকে শুরু হয়েছে পার্টিগনিত সমস্যা। আমি জার্মান খুব ভালো বুঝিনা এই উছিলায় পার পাওয়ার চেষ্টায় ছিলাম।
কিন্তু সমস্যা কি আর পিছু ছাড়ে। অংক না হলে কাল সকালে পেঠ ব্যাথা হবে উনার। তাই কি আর করার। উনি জার্মান থেকে বাংলা-আংরেজি মিলিয়ে আমাকে পড়ে শুনালেন। আমি মনে মনে টাশকি খেলাম।
হায় হায়, এইসব অংক তো আমরাও করেছি। বাপ-ছেলের বয়স একত্রে ৪০ বছর। ১৬ বছর পর........। ভেবে দেখলাম পারা যাবে। একটু ভাব নিলাম।
আর চান্সে উনার কাছ থেকে কিছু আগাম প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাখলাম। আমি বুঝাই একরকম আর আমার বোন বলে বুঝি নাই। দেখলাম এখন ধমক দিলে আম-ছালা সবই যাবে। পরে আবার উনার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য আমাকে পিজ্জা হোটে যেতে হবে। শেষ পর্যন্ত উনি বুঝতে পেরেছেন।
জানি না ভবিষ্যতে কি যে ঝামেলা এসে হাজির হয়। আল্লাহ তুমি রহম করো। যতো বেশি বীজগনিত ততো শান্তি।
কতো বড়ো ফাজিল। গতদিন এসে বলে, তুমি মাসের প্রথমদিন আমাকে এক সেন্ট দিবে, ২য় দিন ২ সেন্ট, ৩য় দিন ৪ সেন্ট, ৪র্থ দিন ৮সেন্ট,..এই রকম করে ৩০দিন দিবে।
তুমি তো অনেক ইনকাম করো। মাত্র কয়েক সেন্টই তো। আমি শুয়ে কার্টুন দেখতেছিলাম। টি.ভি বন্ধ করে বল্লাম, আমাকে কি আবুল (Dumm) পাইছো? এই অংক মনে হয় ক্লাস ৪/৫ এ আমি অলরেডি করে ফেলেছি।
১+২+৩+...................+১০০
সুত্রটা একটু মনে করার চেষ্টা করলাম।
পরে উনাকে সুত্রটা বল্লাম। উনি মনোক্ষুন্ন হলেন আমি এতো ইউরো দেবো না দেখে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।