আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাবিতে আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!



জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। দফায় দফায় এ সংঘর্ষের সময় প্রায় ১৬টি গুলিবিনিময় হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের সাভার ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সংঘর্ষের পর সহকারী প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান রিকশায় করে ওই হলের এক নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়ার সময় হামলার শিকার হন। ঘটনার পরপরই ভিসি শরীফ এনামুল কবির প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। পরে সিন্ডিকেট সভা ১৭ জন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৩ কর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার এবং জাবি ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় সংগঠন। জানা যায়, সোমবার সকাল নয়টার দিকে আল-বেরুনী হলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম সাফিন গ্রুপের কাজী মোস্তফা মনোয়ার সজিবকে মারধর করে সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলম সাম্য গ্রুপের এনায়েত কবির এমিলের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন কর্মী।

পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিলে সেখানে ডাক্তারদের সামনেই তাকে আবার রামদা চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়। বিষয়টি জানতে পেরে সজিব সভাপতি গ্রুপের ৪০-৫০ জন কর্মী রড, লোহার পাইপ, চাপাতি, রামদা নিয়ে আল-বেরুনী হলে গিয়ে সাধারণ সম্পাদক পক্ষের ৩০-৩৫ জনকে বেধড়ক মারধর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় আহত বেশ কয়েকজন কর্মীকে হলের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালেও তাঁর কথা অমান্য করে সভাপতি পক্ষের কর্মীরা সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতা-কর্মীদের মারধর করেন।

এ ঘটনায় আল-বেরুনী হলের ‘এ’ ব্লকের ২০টি কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। সহকারী প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান এমিল নামের আহত একজনকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়ার সময় সভাপতি পক্ষের কর্মীরা আবারও এমিলের ওপর হামলা চালান। সহকারী প্রক্টর এতে বাধা দিতে গেলে তাঁর বাঁ হাতে রডের আঘাত লাগে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাধারণ সম্পাদক-নিয়ন্ত্রিত আ ফ ম কামাল উদ্দিন ও সভাপতি-সমর্থিত সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ হোসেনের নিয়ন্ত্রিত শহীদ সালাম বরকত হলের কর্মীদের মধ্যে পাঁচটি গুলিবিনিময় হয়।

এ সময় কামাল উদ্দিন হলের উজ্জ্বল ও সালাম বরকত হলের এনায়েতউল্লাহ শিমুল গুলিবিদ্ধ হন। সংঘর্ষে আহত আট ছাত্রকে গতকাল দুপুরের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁরা হলেন শিমুল, এমিল, উজ্জ্বল, মুন্না, তন্ময়, তনু, তনয় ও সুজন। পেটে ছুরিকাহত শিমুলের অবস্থা গুরুতর। আহতদের কারও পিঠে, কারও মাথায় কারও বা পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে।

১৭ ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত: সন্ধ্যা ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভা হয়েছে। এরপর সাড়ে সাতটায় জরুরি সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। সভায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭ জন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার ৪ ও ৫ এবং ডিসিপ্লিনারি অর্ডিন্যান্সের ৮ ধারাবলে উপাচার্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তের জন্য সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. ফরহাদ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরও কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সিন্ডিকেট সভায় জানানো হয়। বহিষ্কৃত ছাত্ররা হলেন রবিউল ইসলাম (৩৭তম ব্যাচ, গণিত), পরিতোষ চাকমা (৩৬তম ব্যাচ, ফার্মেসি), শাহাদাৎ হোসেন (৩৫তম ব্যাচ, প্রত্নতত্ত্ব), রকিবুল হাসান (৩২তম ব্যাচ, গণিত), ফয়সাল হোসেন (৩২তম ব্যাচ, গণিত), তৌহিদুল ইসলাম (৩৪তম ব্যাচ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব), রাইসুল হাসান (৩৬তম ব্যাচ, নৃবিজ্ঞান), আরেফিন রাব্বি (৩৫তম ব্যাচ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব), এস এম কামরান হাসান (৩৬তম ব্যাচ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব), অভিজিৎ চৌধুরী (৩৪তম ব্যাচ, দর্শন), আরিফুল হক (৩৫তম ব্যাচ, বাংলা), তোফাজ্জল হোসেন (৩৩তম ব্যাচ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব), মহিউদ্দিন আহমেদ (৩৫তম ব্যাচ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব), বিজয় কুমার দাস (৩৫তম ব্যাচ, বাংলা), শুভাশিষ কুন্ডু (৩৭তম ব্যাচ, প্রত্নতত্ত্ব), স্বাধীন (৩৭তম ব্যাচ, প্রত্নতত্ত্ব) ও সুমন (৩৫তম ব্যাচ, রসায়ন)। ছাত্রলীগের ১৩ কর্মী সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের ১৩ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান গতকাল সোমবার রাতে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।

এর আগে সন্ধ্যায় মাহমুদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১৩ জনের বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়। তাঁরা হলেন কাজী মারুফ সজীব, বিজয় কুমার দাশ, পারভেজ, দেবব্রত প্রিয় জনি, আরিফুল হক, খায়রুল বাশার, শুভাশিষ কুন্ডু, মহিউদ্দিন আহমেদ, উজ্জ্বল কুমার দাশ, চয়ন, সকাল, স্বাধীন ও পলাশ। এর আগে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের সঙ্গে আজিবুর-অয়ন পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম এক মাসের জন্য স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। ফেব্রুয়ারি মাসে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এক বছর পর গত ১৯ মে পুনরায় কমিটি গঠন করা হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.