ইমরোজ
তোমাদের কাছে বলতে এসেছি জন্মভূমির কথা। শুনে যাও।
কখন বোধ শক্তি পেলাম জানা নেই। স্মৃতিগুলো আবছা। সেদিন কি বোধ শক্তি ছিলো, যখন বাবার মুখে প্রথম শুনেছিলাম "তুমি স্কুলে যাচ্ছ কাল থেকে"? ৩৫ কিলোমিটার দূর স্কুল।
তাই মা কেঁদেকেটে অস্থির হয়েছিলেন, খুব মনে আছে।
নাহ! তারও আগে বোধ শক্তি হয়েছিলো। প্রতিদিন রাতে তখন এক ঘন্টার জন্য কারেন্ট চলে যেত। আমার প্রিয় নগরি থাকতো অন্ধকার। বেনগাজি টাউন আগুরিয়া একটি মফস্বল।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দেশের একটি মফস্বল।
পাশে ছিলো তারেকদের বাসা। তারেক ছিলো আমার এখন যে বয়স ঠিক সেই বয়সি। ফুটবল খেলত খুব। আর প্রায়ই তাদের বাসা থেকে একটা মুরগী আমাদের বাসায় চলে আসতো।
প্রতিদিন রাতে দরজায় কড়া নড়তো। তারেক ঢুকে পরে মুরগী খুজে নিয়ে যেত। একদিন এরকম হলো যে মুরগী আমরা ধরে রেখে দিলাম। তারেক মুরগী খুজতে এসে ফিরে গেল। সেদিন রাতেই মুরগী জবাই করে খাওয়া শেষ করে ফেললাম।
"সুনীল সাগরের শ্যামল কিনারে..." গানটি রবীন্দ্রনাথের। তিনি সুনীল সাগর কোথায় দেখেছিলেন আমার জানা নেই। কিন্তু ভূমধ্যসাগরের মত নীল সাগর কোথাও নেই হয়তো। মনে হয় এইটা আমার জন্মভূমির কঠিন পক্ষপাত মূলক কমপ্লিমেন্ট হয়ে গেল। হলে হোক।
প্রতি শুক্রবার আমরা বীচে যেতাম। কখনও ফুল ফ্যামিলি কখন আমি আব্বু আর আমার বোন। সে কি ঢেউ সাগরের আজও ভুলিনি।
লিবিয়াকে অনেক ভালবাসি। যদিও বাংলাদেশের মত এত সবুজ সে নয়।
তবু তার তুলনা হয় না। পীচ ঢালা রাস্তা, মরুময় গোধূলি, আর কাটা গাছের সারি। কতবার যে কাটা ফুটিয়েছিলাম হাতে তার কোন ইয়োত্তা নেই।
একবার আমাদের এলাকা খুব সাজানো হলো। কেন জানি না।
শুনেছিলাম গাদ্দাফি আসবেন। কিন্তু তিনি আসেন নি। জীবনে প্রথম সাজতে দেখেছিলাম একটি শহরকে। শহরে কোন নদী ছিলো না, হ্রদ ছিলো না। ছিলো পাহাড় আর গভীর খাদ।
যেখানে কত কত বাস আর ট্রাক যে পরে থাকতে দেখতাম! অবাক হতাম ভেবে একদিন সেগুলোর ভেতরে কত যে জীবন্ত মানুষগুলো ছিলো, তাদের মৃত্যু না জানি কত বিভতস্য হয়েছিলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।