আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০৩০ সালে কেমন হবে যুক্তরাষ্ট্রের চালচিত্র



২০৩০ সালে কেমন হবে যুক্তরাষ্ট্রের চালচিত্র ফকির ইলিয়াস ===================================== ২০৩০ সাল। আজকের এই বিশ্ব সে সময়ে কতোটা বদলে যাবে? কেমন হবে মানুষের প্রেম-প্রকৃতি? এর প্রস্তুতি নিয়েই এগিয়ে চলছে আজকের বিশ্ব। ২০৩০ সালে কেমন হবে যুক্তরাষ্ট্রের চালচিত্র? এর একটি ভবিষ্যৎ চিত্র নিয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট করেছে ‘দ্য এ এম নিউইয়র্ক’। রিপোর্টার জাস্টিন রকেট সিলভারম্যান তার তথ্যবহুল প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিষয়ের একটি কল্পচিত্র তুলে ধরেছেন খুব সুনিপুণভাবে। নিউইয়র্কের পাঁচটি বরোতে বর্তমানে বাস করেন প্রায় নয় মিলিয়ন মানুষ।

জরিপে দেখা গেছে, তা প্রতি ৩০ বছরে শতকরা ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে ব্যস্ততম নগরীগুলোতে ক্রিমিনালদের জন্য নেমে আসবে চরম দুঃসময়। স্থানে স্থানে লুকানো গোপন চলমান ক্যামেরাগুলো শনাক্ত করবে সবগুলো গাড়ির নম্বর প্লেট। এমনকি মানুষের মুখাবয়ব পর্যন্ত। অপরাধীরা ক্রাইমসিনের কাছাকাছি আসা মাত্রই ক্যামেরা স্টেশনগুলো, পুলিশ স্টেশনে কিংবা নিকটতম পুলিশ কর্মকর্তার কাছে বার্তা পাঠাবে খুব দ্রুত।

এমনকি কোনো কোনো নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছদ্মবেশে গোপন ক্যামেরা গায়ে নিয়ে ঘুরবে রাস্তাঘাটে। যা খুব সহজে শনাক্ত করতে পারবে অপরাধীদেরকে। ২০৩০ সাল নাগাদ একটি ভিডিও ক্যামেরা প্রায় প্রতিটি যানবাহনেই হয়ে যাবে মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড। পুলিশের গাড়ি কিংবা পুলিশের শরীরে থাকবে খুব তীক্ষè রেকর্ডযন্ত্র। যা হবে খুবই অত্যাধুনিক।

এ বিষয়ে একজন বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সপার্ট মি. জো মার্টিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তা করার প্রায় প্রতিটি ধাপই সম্পন্ন করে আনছে। প্যানাসনিক কোম্পানির এই কর্মকর্তা বলেন, বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে যাতে ‘ল এন্ড এনফোর্সম্যান্ট’ এর কাজে বহুল ব্যবহার করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির সে লক্ষ্য সামনে নিয়ে খুব ব্যাপক কাজ করছে। তিনি বলেন, এসব প্রযুক্তি সেন্ট্রালের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত থাকবে। এবং এর ফলাফল হবে খুবই চমকপ্রদ। আত্মরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং গ্র"প ক্রাইম রোধেও এসব টেকনোলজি কাজ করবে খুব সিরিয়াসভাবে।

গাড়িচালকদের জন্য ইমেইল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। গাড়ি চালনায় ভ্রান্তির জন্য জরিমানা টিকেট, ইমেইল যোগেই চালককে পাঠানো হবে। ক্রমশ স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং, শিক্ষা, হিসাব রক্ষণ, মিল-কলকারখানা পরিচালনায়ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে, কাগজ কলম ব্যবহারের আধিক্য কমিয়ে আনা হবে। বাড়ানো হবে ইলেকট্রনিক ডিভাইস। আগামী একযুগ পর মানুষে মানুষে প্রেমের সম্পর্ক কিভাবে ঘটিত হবে? এরও সমাধান দেবে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি।

ইতিমধ্যেই টেক্সটমেসেজিং, ইমেইল এবং ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং পাল্টে দিয়েছে চিঠি লেখা, এমনকি ফোনালাপ। ফোনের আলাপকালে পাশের কেউ শুনে ফেলতে পারে কথোপকথন। কিন্তু টেক্সট মেসেজে সে সম্ভাবনা নেই। ব্ল্যাকবেরি কিংবা আইফোনগুলো সে সুযোগের দরজা অবারিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, টেক্সট মেসেজ, ইমেইল প্রভৃতি মানুষে মানুষে সম্পর্ক ফ্যাকাশে করছে।

কমাচ্ছে আন্তরিকতা। একজন হৃদয় থেরাপিস্ট মিস সিনথিয়া কলসেন বলেন, এর ফলে মানুষ ক্রমশ কথা দেওয়া, কথা রাখা, কমিটমেন্টস এসব ভুলে যাবে। মানুষ হয়ে পড়বে আরো কৃত্রিম। একজন ডেটিং কোচ জোওসা পেলিকার বলেন, মানুষ হয়ে পড়বে হাইপার রোমান্টিক। সিনথিয়া কলসেন তার বক্তব্যে আরো বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে বাড়তে পারে সমকামীদের সংখ্যাও।

কেউ কেউ বেগতিক হয়ে শিশু এডপশন (প্রতিপালন) করবে। কেউ কেউ তাদের নারী বন্ধুদের জন্য দান করবে নিজের স্পার্ম। বিষয়গুলো ভাবতেই যেন কেমন মনে হয়। বদলে যাবে মানুষের খাদ্য পরিবেশন পদ্ধতিও। বড়ো বড়ো রেস্টুরেন্টগুলোর কিচেনে শোভিত হবে নতুন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি।

বাড়বে প্রতিযোগিতা। একটি খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এলায়েন্সের প্রেসিডেন্ট ডেভিড নেপোলিটান বলেন, বদলে যাবে খাদ্যের ডিশ। মানুষ আরো বেশি ফাস্টফুড নির্ভর হয়ে পড়বে। বিভিন্ন মেশিনের সাহায্যে মেইন ডিশগুলো কেনা যাবে। মেশিন বানাবে মদের ককটেল।

রাত জেগে আর বার টেন্ডারদেরকে কাজ করতে হবে না। ‘দ্য ডিজাইন অব ফিউচার থিংস’ গ্রন্থের লেখক ডোনাল্ড নরমান বলেছেন, ভবিষ্যতে মানুষের ক্রেডিট কার্ড, আইডি, ব্যক্তিগত সব তথ্যাবলী সংরক্ষণ করবে হাতের মুঠোফোন। ফেন্সি বারগুলোতে সুন্দরী বারটেন্ডাররা থাকবে শুধু খদ্দেরের মনোরঞ্জনের জন্য। তাদের বিশেষ কোনো কাজ করার থাকবে না। এমনকি দোকানে দোকানে কমে যাবে সেলসম্যানদের কাজও।

বদলে যাবে রাজনীতির ধরন। বিভিন্ন অ্যাথনিক সোসাইটির মানুষের বংশবৃদ্ধি একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে ভোটের মতপ্রকাশে। রাজনৈতিক নেতৃত্বও ক্রমশ চলে যাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হাতে। ভোট দেওয়ার ধরন পাল্টাবে। কমে যাবে নির্বাচন উপলক্ষে টাকা খরচের হিড়িক।

মিডিয়াগুলো হবে আরো বেশি পাওয়ার ফুল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন সংশোধনী আসতে পারে মার্কিনি সংবিধানে। শাসনতন্ত্রের বিভিন্ন ধাপ মানুষের কল্যাণে, পজিটিভ রোল নিয়ে পরিচালিত হবে, এই প্রত্যাশা নিয়েই আসবে আগামী দু’যুগ সময়। সে সময় পর্যন্ত আমেরিকার পরাক্রমশীলতা টিকে থাকবে, নাকি কিছুটা ধ্বস নামবে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত বলতে পারছেন না কিছুই। নিউইয়র্ক,২৬ ডিসেম্বর ২০০৭ ---------------------------------------------------------------------------------- (দৈনিক ভোরের কাগজ , ঢাকা।

১ জানুয়ারী ২০০৮ মংগলবার, প্রকাশিত)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.