আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দোয়া কী কেন ও কীভাবে (১)

"অবশ্যই আমার নামাজ আমার এবাদাত আমার জীবন আমার মৃত্যু সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহর জন্যে। "

- অধ্যাপক মুহম্মদ সিরাজউদ্দীন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ দোয়ার গুরুত্ব ও বরকত --------- মানবজীবনে দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর ইবাদাতের জন্যে সৃস্টি করে আমাদের প্রতিটি নেক আমলকে তাঁর সাহায্য ও অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল করেছেন। আমাদের প্রতি এটা তাঁর বড়ই অনুগ্রহ। আমাদের কর্ম ও বিশ্বাসের ত্রুটিগুলো দোয়ার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হয়, ইবাদাত পরিপূর্ণতা লাভ করে, ঈমান সুদৃঢ় হয় এবং পরনির্ভরশীলতার পরিবর্তে আমরা আল্লাহ-নির্ভর হওয়ার অবারিত সুযোগ পাই।

প্রত্যেক নবী ও রাসূলকে আল্লাহ তায়ালা একটি করে বিশেষ দোয়া করার সুযোগ দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত অন্যান্য নবী ও রাসূলগণ তাঁদের জীবদ্দশায় মহান আল্লাহ প্রদত্ত সে সুযোগ গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'প্রত্যেক নবীরই একটি দোয়া আছে যা তিনি করেন। [এবং এটি কবুল হয়ে থাকে] আমি চাই আমার দোয়াটি আখিরাতে আমার উম্মতের শাফায়াতের জন্যে সংরক্ষিত থাকুক। ' অন্য এক সনদে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, 'প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ যা চাওয়ার চেয়ে নিয়েছেন', কিংবা তিনি বলেছেন, 'প্রত্যেক নবীরই একটি দোয়া কবুল হয়ে থাকে। সুতরাং তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দোয়া করেছেন এবং তা কবুলও হয়েছে।

কিন্তু আমি আমার দোয়াটি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতদের শাফায়াতের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছি। ' ^ হাশরের দিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেই অপরিহার্য দোয়াটি যে পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে পেশ করবেন তার অতন্ত্য মর্মস্পর্শী বর্ণনা রয়েছে নিম্নোদ্ধৃত হাদিসটিতে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমরা নবী করীম (সাঃ) এর সাথে এক দাওয়াতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁর সামনে রান্না করা (খাসীর) গোশত পেশ করা হলো। এটা ছিল তাঁর অতি প্রিয়।

তিনি তা থেকে এক টুকরো খেলেন এবং বললেন, 'আমি হাশরের দিন মানবজাতির নেতা হবো। তোমরা কি জান কিভাবে আল্লাহ [হাশরের দিন] পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষকে একটি বিশাল সমতল ময়দানে জমায়েত করবেন যেন একজন দর্শক তাদের সবাইকে দেখতে পায় এবং আহ্ববানকারীর ডাক সবার কাছে পৌঁছায়। সূর্য তাদের অতি নিকটে এসে যাবে। তখন কেউ কেউ বলবে, তোমরা কি লক্ষ্য করনি যে, কি অবস্থায় আছ এবং কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছো? তোমরা কি এমন ব্যক্তিকে খুঁজে দেখবে না, যিনি তোমাদের রবের কাছে তোমাদের জন্যে শাফায়াত করবেন? অপর কিছু লোক বলবে, তোমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) আছেন [তাঁর নিকট চল] অতঃপর সবাই তাঁর কাছে যাবে এবং বলবে, হে আদম (আঃ) ! আপনি সমগ্র মানবজাতির পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মধ্যে রূহ ফুঁকেছেন এবং আপনাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্যে ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা সবাই আপনাকে সিজদা করেছে এবং আপনাকে তিনি জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছেন।

আপনি কি আমাদের জন্যে আপনার প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করবেন না? আপনি কি দেখেন না আমরা কি ভয়ানক অবস্থায় আছি এবং কত কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি? তখন আদম (আঃ) বলবেন, আজ আমার আল্লাহ এত রাগান্বিত হয়েছেন যে এর পূর্বে কখনও এমনটি হননি। আর পরেও হবেন না। [তাছাড়া] তিনি আমাকে বৃক্ষটির নিকটবর্তী হতে [ফল থেতে] নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি [তাঁর] নাফরমানি করেছি। এখন আমার নিজেরই ইয়া নফ্‌সী ইয়া নফ্‌সী অবস্থা। তোমরা অন্য কারও কাছে যাও।

নূহের (আঃ) কাছে যাও। তখন সবাই নূহের (আঃ) কাছে যাবে এবং বলবে, হে নূহ (আঃ) ! পৃথিবীবাসীর প্রতি আপনিই ছিলেন প্রথম রাসূল। আল্লাহ আপনাকে 'কৃতজ্ঞ বান্দা' খেতাব দিয়েছেন। আপনি কি দেখেন না আমরা কি অবস্থায় আছি? আপনি কি লক্ষ্য করছেন না আমরা কত দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি? আপনি কি আপনার প্রভুর কাছে আমাদের জন্যে শাফায়াত করবেন না? তখন তিনি বলবেন আজ আমার প্রভু এমন রাগান্বিত হয়েছেন, যেমনটি এর আগে আর কখনও হননি, আর পরে কখনও হবেন না। এখন আমার নিজেরই ইয়া নফ্‌সী ইয়া নফ্‌সী অবস্থা।

তোমরা নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে যাও। তখন তারা আমার কাছে আসবে। আমি আরশের নিচে সিজদায় পড়ে যাব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ ! মাথা উঠান, শাফায়াত করুন, আপনার শাফায়াত কবুল করা হবে। আপনি যা ইচ্ছা চান, আপনাকে তাই দেওয়া হবে।

মুহাম্মাদ ইবনে উবায়েদ বলেন, পুরো হাদিসটি আমি মুখস্ত রাখতে পারিনি। ^^ তথ্যসূত্রঃ ^ বুখারী - ৫ম খন্ড হাদিস নং ৫৮৬০, প্রকাশকাল - অক্টোবর ১৯৮২ ^^ বুখারী - ৩য় খন্ড হাদিস নং ৩০৯৩, পৃ. ৩২২-৩২৩, প্রকাশকাল - জানুয়ারি ১৯৮৮

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.