আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কন্সপিরেসীতে নিমগ্ন রাজনৈতিক বাহন...(চার)

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

হো মো এরশাদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তুমুল প্রোপাগান্ডামূলক অবস্থান নিয়া ক্ষমতায় আইছিলেন...দেশ তখন দুর্নীতির করালগ্রাসে নিমজ্জিত, সেই দেশরে টাইনা তুইলা স্থলবন্দরে ভীড়ানের পর তিনি ফিরবেন ব্যারাকে। তিনি সেই মহান ব্রত পালন শুরু করলেন...তার ধারাবাহিকতায় জরুরী অবস্থা আর মার্শাল ল'। দেশরে টানতে টানতে তিনি স্থলবন্দরে তুলনের লোভ দেখাইয়া একেবারে ব্যারাকেই লইয়া গেলেন। তার কন্সপিরেসীতে মানুষ তখন রাজনীতির প্রতি ঠিক এই বছরের শুরুর দিককার মতোন বিদ্বেষী হইছিলো সেই সময়ে। সেইটারে ব্যবহার কইরা তিনি ভাবছিলেন ক্ষমতা কুক্ষিগত কইরা ফেলতে পারবেন।

কিন্তু যেহেতু রাজনৈতিক ভাবেও সে কন্সপিরেসী খেলতে গেলেন, আর স্বভাববশতঃই খেই হারাইলেন...সেই হেতু খানিকটা রাজনৈতিক বিড়ম্বনাও তৈরী হইলো... আওয়ামি লীগরে ঠেকানের লেইগা পূর্বতন জেনারেল জিয়া'র সামরিক সরকার পৃষ্ঠপোষণা করছিলেন জামায়াতি আর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানরে...এরশাদ করলেন ঠিক তার উল্টাটা। তিনি আওয়ামি লীগরে জায়গা কইরা দিলেন...যাতে জনপ্রিয়(!?) বিএনপি সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান অনায়াস না হয়। এই কন্সপিরেসী তত্ত্ব দিয়া তিনি দেশের রাজনীতিরে বিভ্রান্ত কইরা রাখতে পারছিলেন দীর্ঘসময়। যেই কারনে একটা অপরিকল্পিত সামরিক সরকার, যার লেইগা দেশের অর্থনৈতিক মায় যেকোন রাষ্ট্রীয় পলিসি আজ পর্যন্ত চলতেছে চরম বেকুবী'র মধ্য দিয়া, সে'ও টিক্কা গেছিলো পুরা ৯টা বছর। এর মধ্য দিয়া সংশয়ে পড়ছিলো দেশের বামপন্থীগো একটা অংশ'ও...কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের জটিলতায় তারাও আন্দোলনের ধারাবাহিকতা থেইকা বাইর হইয়া ৮৬'এর নির্বাচনে অংশ নিয়া ফেলনের মতো হঠকারীতাও কইরা ফেলছিলো।

রাজনৈতিক বিভাজনের এই কন্সপিরেসী'র ফাকে এরশাদ সরকার যা করতেছিলো তা হইলো পুরানা সকল দুর্নীতিবাজ অভীধা পাওয়া রাজনীতিবিদগো তার লগে সঙ্গী করতেছিলো...এইটা পূর্বসূরি জেনারেল জিয়া'র স্ট্র্যাটেজি থেইকাই ধার করছিলো সে নিঃসন্দেহে। মজার ব্যাপার হইলো আমার মেজোকাক্কু'র নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের একটা শক্তিশালী অংশ তার লগে যুক্ত হইছিলো মামলার ভয়ে আর ক্ষমতা/পুঁজির লোভে। এরশাদের কন্সপিরেসীগুলি এক্কেরে গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের উপর ভিত্তি কইরা হইতো সেইটা স্পষ্ট। ছাত্র সমাজের ভেতরেই এরশাদ স্বৈরাচার বিরোধী শক্তির অঙ্কুরোদগম হইতেছিলো সেইটা বুঝতে পাইরা সে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানাইলো। ছাত্র রাজনীতি এক্কেরে বন্ধ করনের তেমন ইচ্ছা করনের সাহস তার হয় নাই...নিজের ছাত্র সংগঠন সে প্রত্যাহার করলো।

সাধারন মানুষ জেনারেল জিয়ার ছাত্র রাজনীতির কৌশলে তীতি বিরক্ত ছিলো...ছাত্র রাজনীতিতে তখন পেশী শক্তি পরিপূর্ণ হইছিলো বইলা। সেই স্পর্শকাতরতারে যদি পুঁজি কইরা কিছু মানুষের সমর্থন আদায় করা যায়...নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ বিলুপ্ত হইলো...কিন্তু ষড়যন্ত্র ধরা খাইলো। কারন ব্যানার বিলুপ্ত হইলেও ছদ্মবেশটা খুব নিখুঁত হইলো না। সকল জায়গায় "সাধারন ছাত্র ছাত্রী মনোনীত এরশাদ সমর্থিত" এই ব্যানারে তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচন গুলিতে অংশ নিতে থাকলো। আর যেমনে-তেমনে নির্বাচনে জিততে লাগলো।

স্বভাবজাত মাস্তানী আর সন্ত্রাস অব্যাহত থাকলো। ছদ্মবেশের রাজনীতিতে জনগণ বিভ্রান্ত না হওনের উপকরণ এরশাদ সাহেব নিজেই সাপ্লাই দিতেছিলেন। আর নিজের কৌশলে নিজে ধরা খাইয়া অস্তিত্ত্বের খাতিরে বৃহত্তর উত্তরাঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাপক অর্থে শুরু হইলো। পরিকল্পণা ছিলো কিনা সেইটা বিবেচ্য করলে ক্ষতির পরিমান অপরিসীম...কিন্তু আসলেই দেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে রাজধানী আর বাকী অংশে যোগাযোগ মাধ্যম সংহত করলেন তিনি। এই ষড়যন্ত্রের কারিশমা আমরা এখনো নির্বাচনকালে দেখি...উত্তরবঙ্গের মানুষ জাতীয় পার্টিরে অন্য চোখেই তুলনাহীন দেখে।

একটা নিশ্চিত ভোটব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হইলো এরশাদরে কেন্দ্র কইরা। এরশাদের এই সময়টাতেই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র সবচাইতে বেশি হইছে। ব্যর্থতার নজীর হয়তো বেশি, কিন্তু নতুন নতুন কন্সপিরেসী আইসা মানুষরে যথেষ্ট পরিমানেই বিভ্রান্ত করছে...অন্ততঃ ৮৬ পর্যন্ত সে বেশ ভালোমতোই বিভ্রান্তির বেড়াজাল বিস্তৃত কইরা রাখতে পারছিলো...কিন্তু ৮৭তেই গল্প পাল্টাইতে শুরু করলো...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।