আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কন্সপিরেসীতে নিমগ্ন রাজনৈতিক বাহন...(দুই)

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল ক্ষমতায় আসীন হইলো প্রায় নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়...আর ক্ষমতার খেলায় যারা থাকে তাগো চিরকালীন তাগীদমতোই আচরনের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। আওয়ামি লীগের অভ্যন্তরে শুরু হইলো কন্সপিরেসী'র...মুক্তিযুদ্ধের আগে এই অঞ্চলের কম্যুনিস্ট পার্টি পাকিস্তানীরা নিষিদ্ধ করায় তারা পার্টির সিদ্ধান্তমতোই তৎকালীন জাতীয়তাবাদী ভরসা(!?) আওয়ামি ছায়াতলে ছদ্মবেশে ছিলো...এর বাইরেও অন্যান্য কিছু পার্টিতেও তারা ছিলেন কিন্তু জনপ্রিয়তার বাতাবরনে তাগো উপস্থিতি নিষ্প্রভ ছিলো। আর আওয়ামি লীগে তারা নিজেগো আদর্শিক মনোবলের কল্যাণে হইয়া উঠছিলেন নিয়ন্তাগো অংশ। এই রাজনৈতিক নেতারা আওয়ামি লীগের অভ্যন্তরেই অনেক শক্তিশালী হইয়া উঠতেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে যে কোন ধরণের অনৈতিকতায় টিপিক্যাল আওয়ামি নেতৃত্ব প্রতিনিয়তঃ প্রতিবাদের সম্মুখীন হইতো দলের ভেতরেই। তাজউদ্দিন আহমেদ এই প্রতিবাদকামী/প্রতিরোধকামী রাজনৈতিক অংশের নেতৃত্বে ছিলেন...তার রাজনৈতিক ধী'র কারনে হইয়া উঠতেছিলেন আওয়ামি রাজনীতির'ই অন্যতম প্রধান পুরুষ...শেখ মুজিবর রহমানের বিকল্প উপস্থিতি।

আর এই কারণেই দেখা গেলো তার রাজনৈতিক অবস্থানের বিরুদ্ধে কন্সপিরেসী শুরু হইয়া গেলো...সে যাতে আওয়ামি লীগের প্রাণ পুরুষ না হইতে পারে, নিজেগো নাক কাইটা হইলেও সেই ব্যবস্থাগ্রহণে উদ্যোগী হইলো একটা বিরাট গ্রুপ। এরপর শেখ মুজিবর রহমান আর পরিবারের হত্যাকান্ডের পর টের পাওয়া গেলো সেইটাও একটা কন্সপিরেসীর ফসল...কয়েকদিন আগেও যেই নেতা তাগো প্রণম্য ছিলো তার হত্যাকারীরা তাগো স্বজন হইলো। তয় জেনারেল জিয়া দেখাইলেন কন্সপিরেসীর সবচাইতে বড় উদাহরন... তার ক্ষমতায় আরোহন আর কর্নেল তাহেরের ফাসী এই দেশে কন্সপিরেসী'র চূড়ান্ত অধ্যায় সূচীত করলো। এর পর থেইকা এই দেশে সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ কৌশল আর গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের উপর ভিত্তি কইরা রাজনীতি না কেবল, রাষ্ট্রীয় যে কোন পলিসি কিংবা পরিকল্পণাতেও তার ছায়া পরলো। সাথে শুরু হইলো কর্পোরেট পুঁজি চক্রের খেলা...আর খুব স্বাভাবিক নিয়মতোই এর প্রভাব পরলো সামাজিক সকল বিবেচনায়।

দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালারে কোন রম পরিকল্পণা ছাড়াই মুক্তবাজার অভিমূখী করনের প্রাণপন সংগ্রামে লিপ্ত হইলো শাসকেরা, বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফ'এর ডিজাইন মাফিক। এই পরিকল্পনায় প্রধান যেই লক্ষ্য তৈরী করা হইলো তাতে দেশের সাধারন মানুষ পরলো প্রতিযোগিতামূলক তত্ত্বের গ্যাড়াকলে। আমরা যখন ছাত্র রাজনীতি করছি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে, সেই সময় দেখতাম সকলে কেবল অঙ্ক মিলায়। আর এই অঙ্কের সমীকরণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা লুটনের চেষ্টা করে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী...বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দুইটা ঘটনা আজো আমার মনে দাঁগ কাটে। একবার ৯৪ সালে বিএনপি'র ক্ষমতাসীন কালে মুজিববাদী ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে গন্ডগোল লাগছে, তো মহিবুল্লাহ গ্রুপের নেতা মহিবুল্লাহ সাহেব তার বিরোধী গ্রুপের নেতার নামে চান্দাবাজির অভিযোগ তুললেন...সেই অভিযোগ তিনি সুকৌশলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একটা মাস্তান গ্রুপের কানে পৌছাইয়া দিলেন খুব বেশি চাউর না কইরাই।

তার ফলশ্রুতিতে সেই কথিত চান্দাবাজ নেতার আঙুল কাইটা দিলো ছাত্রদলের মাস্তানরা...এই ঘটনার পর ক্যাম্পাসে রীতিমতো কোনঠাসা হইলো ছাত্রলীগের ঐ গ্রুপ, পরে সেই আঙুল কাটা নেতা টিটুর পায়ের বুড়া আঙুল দিয়া হাতের আঙুল ট্রান্সপ্লান্ট অপারেশন সফল হওনের পর একদিন টিটু টেলিভিশনে সেই আঙুল প্রদর্শন করে জাতিরে...টিটু আবার ক্যাম্পাসে ফিরা আসে...সে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের ফলে বহিস্কারও হয়! কিন্তু তার আগেই সে তার মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়া ফেলছে...অথচ আমরা সবাই জানতাম সে ধর্ষণকারী গ্রুপে ছিলো না। টিটু ক্যাম্পাসে ফিরা আসে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মাঝামাঝি একটা সময়ে। সে আইসা তার নিজের গ্রুপরে সংগঠিত করনের চেষ্টা করলো প্রথমে, কিন্তু দেখা গেলো ক্ষমতার আতিশয্যে তার পক্ষের বেশীরভাগ নেতা-কর্মীই মহিবুল্লাহ বা মানিকের গ্রুপে চইলা গেছে। যেই কারনে টিটুরে কয়েক দিন একা একা ঘুরতে দেখা গেলো, তারপর একদিন দেখা গেলো সে মানিকের পাশেপাশেই থাকে। ঐ সময়টাতে আন্দোলনে ক্লান্তি আর অভিভাবকগো নিয়ন্ত্রনে খানিকটা ধীরে চলো নীতি শুরু হইয়া গেছিলো।

টিটু সেইসময়ে ছাত্রলীগের সমাবেশে মানিকের পাশে দাঁড়াইয়া সভা পরিচালনা করে...সেইরম এক সমাবেশে রেহনুমা আপা আক্রান্ত হইলেন... শিক্ষক অ্যাসল্ট হওনের পর পুরা আন্দোলন গতিপ্রাপ্ত হইয়া মানিক গ্রুপ ছাত্রলীগের রাজনীতি থেইকা ভ্যানিশ হইয়া গেলো পুরাপুরি। মহিবুল্লাহ পরবর্তীতে আরেকবার আরো বড় কন্সপিরেসী করতে চাইলো কিন্তু তার বর্ষীয়ান মেধা দিয়াও সেই চক্রান্ত সফল করতে পারে নাই...কারন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথে সেই সমঝোতামূলক অবস্থান মুজিববাদী ছাত্রলীগের অভ্যন্তরেই খুব বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায় নাই...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।