যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
বিষয়বস্তু ইতিহাসের একটা অংশ। আমরা সবাই জানি রাজাকার এবং তাদের মতাদর্শের লোকজন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে এবং সেটাই স্বাভাবিক। কারন নিজামী বা মুজাহিদ কখনও জনসমক্ষে বলবে না - ৭১ এ ওদের ভুমিকা কি ছিল। এদের সামনে ইতিহাস লুকানো বা বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করে নিজেদের কুর্কীতি ঢেকে রাখবেই। সেই পথ অনুসরন করেই নব্য রাজাকারবৃন্দ একটা বিষয় বিশ্বাস করতে চায় - মুক্তিযুদ্ধের সকল ইতিহাসই বায়াসড।
এই বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রচুর বিতর্ক ব্লগে দেখা গেছে।
কিন্তু স্বাধীনতার পরের ইতিহাস। সেখানে তো কোন সমস্যা থাকার কথা না কিন্তু উল্টা পথে হেটে যাদের অভ্যাস তাদের জন্যে সোজা রাস্তায় হাটা কত কঠিন এর একটা নমুনা দেখাবো এখন।
একজন ব্লগার, সবাইকে সালাম দিয়ে বেশ কঠিন ভাবে রাজাকারী মতাদর্শ প্রচারের জন্যে সক্রিয় হলেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজাকারদের সাথে বিতর্ক করা একটা অর্থহীন কাজ বলে কখনও সেই চেষ্টা করিনি।
কিন্তু দেখলাম - সেই রাজাকার ভাইজান ইতিহাস নিয়ে বিকৃত তথ্য প্রচার করতে কোন বিরাম নিচ্ছে না।
এক পর্যায়ে উনি আমাদের জানলেন -
"শাহ আজিজুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন"
বিষয়টা এখানে এতো গুরুত্বপূর্ন হতো না - যদি শাহ আজিজ একজন পাকিস্থানী দালাল না হতেন। একজন রাজাকার আওয়ামীলীগের প্রধানমন্ত্রী - বিষয়টা এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করার মতো।
জানতে চাইলাম - কত সালে শাহ আজিজ প্রধান মন্ত্রী ছিলেন। দীর্ঘ মৌনতার পর রাজাকার ভাইজান শাহ আজিজ আওয়ামী লীগের প্রধান মন্ত্রী থাকার বিষয়ে একটা বিরাট এনালিশিস দিলেন - যা নীচে দেওয়া হলো:
"----------------
১. কৃষক-শ্রমিক-জনতালীগ যখন (সম্ভবত: বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে) সিইসির সাথে দেখা করতে যায়, তখন সিইসি বলেছিলেন, 'আপনারই তো (রাজাকার) শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন।
' এর উত্তরে কৃষক-শ্রমিক-জনতালীগ কিছু বলেনি।
আমি জুনিয়র বলে এত ইতিহাস জানিনা। আমি চমকে উঠলাম! এখন, শাহ আজিজ যদি বঙ্গবন্ধুর খুনের পরে খন্দকার মোশতাকের মণ্ত্রীসভায় থাকেন, তবে আমার মতে (অন্যরা মতবিরোধ করতে পারেন) তাও আওয়ামীলীগের মন্ত্রীসভা। কারণ: আমার জানা মতে,
ক. খন্দকার মোশতাকের বঙ্গবন্ধুর কাছের লোক ও উনার মণ্ত্রীসভায় ছিলেন,
খ. বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর কাছের লোক, আগে আওয়ামীলীগ করতেন, ও তিনি সিইসির কথার প্রতিবাদ করেন নি।
গ. ১৯৭৫ সালে আওয়ামীলীগ/বাকশাল ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল।
বঙ্গবন্ধুর কাছের লোকেরা (খন্দকার মোশতাক এন্ড গং) বঙ্গবন্ধুকে খুন করে ক্ষমতা দখল করেছে। একে সামরিক সরকার বলুন আর যাই বলুন, আপনাদের মতে যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি তারাই এই সরকারে ছিল।
------------------------------"
একটু লক্ষ্য করুন। যেহেতু উনি বলেছেন - এবং সে প্রতিবাদ করেনি - সেহেতু যদু মধুর বাগানে ছাগল ছেড়েছে - এটা হলো বিশ্লেষনের সংক্ষিপ্ত প্রতিপাদ্য।
এখন প্রশ্ন হলো - একজন সাধারন মানুষ হলে " শাহ আজিজ কখন প্রধান মন্ত্রী ছিলেন" এই প্রশ্ন শুনে কি করতো? সোজা লাইব্রেরীরে চলে যেত, না হয় যে জানে তাকে জিজ্ঞাসা করতো।
সবচেয়ে সহজ হলো - ইন্টারনেটে একটা সার্চ দিয়ে খুঁজে তথ্যটা বের করে ফেলতো।
(উইকিপিডিয়ার সার্চের ফলাফলের স্ক্রীন শট দেওয়া হলো।
কিন্তু রাজাকারদের লজিক সেভাবে কাজ করে না। তাই মুক্তিযুদ্ধের জ্বলজ্যন্ত প্রমানের ছবি দেখে সেটাকে বিকৃত ভাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি - তা নিয়ে বালসূলভ প্রশ্ন করে - সকল তথ্য প্রমান থাকার পরও নতুন ইতিহাস রচনার জন্যে আর্কাইভ বানানোর হাস্যকর ঘোষনা দেয় - নতুবা যুক্তিতর্ক দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে বিকৃত করার অপচেষ্টা করে।
মুক্তিযুদ্ধের মাত্র ৩৭ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখনও অনেক মানুষ বেচে আছেন - যারা যুদ্ধ দেখেছে - এরা সেই সময়ের স্বাক্ষী। বিকৃত ইতিহাস খোজাখুজি করে নিজেদের মানসিকতাকে বিকৃত না করে - সোজা মুক্তিযুদ্ধে দলিল, মুক্তিযুদ্ধাদের জীবনী আর সেই বিষয়ে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষীদের স্মরনাপন্ন হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সেটাই সহজ সরল পথ - সিরাতুল মোস্তাকীম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।