প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের সুইস ব্যাংকে আটকা পড়া তার ৫১ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশে আনতে চাইছেন।
এজন্য ওই আটকাদেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চাইছেন তিনি। অনিয়মের অভিযোগে তার সাত বিলিয়ন ডলারের একাউন্ট সুইস ব্যাংক জব্দ করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ওই হিসাব অবমুক্ত হলে সমুদয় অর্থ পর্যায়ক্রমে দেশে ফিরিয়ে আনবেন। বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করবেন। তবে এ জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
ইতিমধ্যে ওই টাকা ফেরত পাওয়া এবং দেশে আনার জন্য লবিংও শুরু করেছেন তিনি। তার পক্ষে লবিং করছেন দেশ-বিদেশের বিশিষ্টজনদের অনেকেই।
প্রিন্স ড. মুসা বিন শমশের এব্যাপারে তার মুখপাত্র সৈয়দ রিয়াদ আহমেদের মাধ্যমে জানিয়েছেন, তার সারা জীবনের সঞ্চয় আটকা পরেছে সুইস ব্যাংকে। এমনটি হবে তা কখনও তিনি ভাবেননি। অন্যায়ভাবে তার হিসাব জব্দ করেছে ব্যাংক।
এ ঘটনায় তিনি ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন। এ কারণে তার উপার্জিত সমুদেয় দেশের মানুষের জন্য বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছেন। এতে দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে।
তার লবিস্টদের একজন বলেন, মুসা বিন শমশেরের সাত বিলিয়ন ডলারের হিসাব জব্দ করার পেছনে কারও ইন্ধন রয়েছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করছেন।
এর আগে কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তাই হঠাৎ করে হিসাব জব্দ করার ঘটনায় তিনি বিস্মিত।
সূত্র জানায়, গত বছর সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নেতৃস্থানীয় আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ড. মুসার সাত বিলিয়ন ডলারের ব্যাংক একাউন্ট সহ তার ব্যবহার করা ও ব্যাংকের লকারে রাখা হীরকখচিত কলমটিও জব্দ করেছে। সুইস ব্যাংক থেকে ওই সময়ে বলা হয়, অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে হিসাব পরিচালনার জন্য একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এরপর ব্যাংকের ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন মূসা।
সূত্র জানায়, আগামী দু’-এক মাসের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই একাউন্টের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এরপর ওই টাকা বাংলাদেশে কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় আনতে হবে, এজন্য সরকার তাকে কোন ধরনের সহযোগিতা করতে পারে- সে ব্যাপারে কাজ শুরু করেন। তিনি আশা করছেন, ওই টাকা দেশে এনে বিনিয়োগ করলে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে ও তার পরিবারকে “সেভেন স্টার ফ্যামিলি” আখ্যা দেয়া হবে। অবশ্য তার পরিবার বিদেশে অনেকের কাছে “ফাইভ স্টার ফ্যামিলি” হিসেবেই পরিচিত।
সূত্র জানায়, সেভেন স্টার ফ্যামিলি আখ্যা পাওয়ার পেছনে তার রয়েছে একটি ছোট উদ্দেশ্য।
তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা এখন সাত। তিনি, তার স্ত্রী, তিন সন্তান ও দুই পুত্রবধূ। সপরিবারে গুলশানে থাকেন মুসা। সেখানে রয়েছে তার প্রাসাদোপম অট্টালিকা। সে প্রাসাদ এমনভাবে সাজানো যে, দেখতে চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
লিভিং রুম, ডাইনিং রুম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে ঝাড়বাতি সহ নানা ধরনের বাতি। পুরো বাড়ির মেঝে বিভিন্ন দেশের দামি সব কার্পেটে মোড়ানো। বাড়িতে প্রায়ই ডিনার পার্টির আয়োজন করা হয়। দেশ-বিদেশের অনেক নামীদামি মেহমান এতে যোগ দেন। তাদেরকে আপ্যায়নের জন্য রয়েছে শতাধিক উচ্চশিক্ষিত ও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শেফ, সেবাকর্মী, কেয়ারটেকার, ওয়েটার।
প্রিন্স মুসা’র তিন সন্তান ন্যান্সি, ববি ও জুবি। তারা প্রত্যেকেই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। তারা বিদেশে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলেও ভবিষ্যতে দেশেই স্থায়ীভাবে বাস করতে চান এবং দেশের জন্য কাজ করতে চান। বর্তমানে তারা সবাই দেশে রয়েছেন। মুসার প্রথম সন্তান ন্যান্সি জাহারা বিনতে মুসা ইউএসএ’র ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন।
তিনি বিয়ে করেছেন খ্যাতিমান ব্যবসায়ী শেখ ফজল ফাহিমকে। মুসার দ্বিতীয় সন্তান ববি হাজ্জাজ বিন মুসা ইউএসএ’র ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং অক্সফোর্ড থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। অক্সফোর্ড স্কলার হিসাবে ববি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ও কলামনিস্ট হিসেবে সুপরিচিত। তিনি বিয়ে করেছেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমামকে। তিনিও একজন অক্সফোর্ড স্কলার।
আইনজীবী হিসেবে সেখানে কাজ করছেন তিনি। মুসার তৃতীয় সন্তান জুবি আজ্জাত বিন মুসা বিশ্ববিখ্যাত লিংকনস ইন থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং ইউনিভার্সিটি অব ওলভারহ্যাপটন থেকে আন্ডার গ্রাজুয়েট ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে জুবি আইন পেশায় নিয়োজিত। তিনি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চ ডিগ্রিধারী সুমি নাসরীনকে বিয়ে করেছেন। এই সাতজনের পরিবারের অধিকারী মুসা মনে করেন, সেভেন স্টার ফ্যামিলি হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করা হলে তা হবে তার জন্য এক বড় পাওয়া।
এদিকে প্রিন্স মুসাকে নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনা কম নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্যাশন ম্যাগাজিন ও পত্র-পত্রিকা তার স্টাইল, ফ্যাশন, জীবনধারা ও আভিজাত্য নিয়ে নানা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তিনিই প্রথম নিজের জন্য বিশেষভাবে তৈরী ড্রেসে হীরা ও অলঙ্কার ব্যবহার করেছেন। তিনি হীরকখচিত জুতা-ও পছন্দ করেন। বিশেষ বিশেষ পার্টিতে তিনি হীরার জুতা ও কোট ব্যবহার করেন।
লন্ডন টেলিগ্রাফ তাকে নিয়ে এর সাড়াজাগানো প্রচ্ছদ কাহিনী রচনা করেছে। পত্রিকাটির বিশেষ প্রতিনিধি নাইজেল ফার্নডেল ‘ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গানস’ শিরোনামে লিখেছেন, প্রথম সারির আন্তর্জাতিক এ অস্ত্র ব্যবসায়ী পৃথিবীর সর্বত্র, বিশেষ করে পাশ্চাত্যে প্রিন্স অব বাংলাদেশ বলে খ্যাত। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই প্রিন্স মুসাকে বিশ্বের বিভিন্ন মহলে প্রিন্স মুসা বলে অভিহিত করা হয়। ’৮০ দশকে ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক দ্য হিন্দু এবং টাইমস্ অব ইন্ডিয়া তাকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে। সর্বশেষ ‘কর্পোরেট নিউজ’-ও তাকে ও তার পরিবার নিয়ে একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
সূত্র জানায়, অস্ত্র ব্যবসা ছাড়াও প্রিন্স মুসা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে প্রভূত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। জনশক্তি রপ্তানি করেও এ খাতে দেশকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করেছেন।
(সূত্র: মানবজমিন)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।