আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসরেল, বর্ণবৈষম্য ও জিমি কার্টার- সারি মাকডিসি (পর্ব ২)

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

ওয়েস্ট ব্যাংক ইসরেলে দুই সেট নিয়মনীতি বজায় রেখে চলে। একটি ইহুদিদের জন্য অন্যটি যারা ইহুদি নয় তাদের জন্য। এই অপছন্দনীয় পদ্ধতিকে বর্ণনা করতে শুধু বর্ণবৈষম্য শব্দটি ব্যবহার করা ভুল। ইসরেলের অংশ থেকে এটি যতোটা বিস্তৃত হয়েছে ততোটা সাউথ আফৃকার প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যও নেই। উদারবাদী (লিবারাল) আমেরিকানরাই কেবল এ নিয়ে কিছুটা বলছে।

কার্টারের বইয়ের চোখ ধাধানো ভুলটি হলো, যে কোনো কারণেই তার নিবন্ধের ক্ষেত্রে বর্ণবৈষম্য শব্দটি ইসরেলের নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না। যেখানে তিনি বলেছেন, ইহুদি এবং ইহুদি নয় নাগরিকদের আইনের অধীনে একই অধিকার দেয়া হয়েছে। এটি সহজ কথায় অসত্য। ইসরেলের আইনি সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে স্টেটের ইহুদি এবং নন ইহুদিদের মধ্যে পার্থক্য করেছে। এটি জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবার একত্রকরণের বিষয়ে এবং নাগরিকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রেও ইসরেল ন্যাশনালিটিস সংশোধন করেছে।

উদাহরণস্বরূপ ইসরেলে বসবাসকৃত প্যালেস্টিনিয়ান নাগরিকের প্যালেস্টিনিয়ানদের এলাকায় বিয়ে করা থেকে নিবৃত্ত করা হয়। তাদের এক সঙ্গে ইসরেলে বসবাস করার সুযোগ দেয়া হয় না। সাউথ আফৃকাতেও বর্ণবৈষম্য নিয়ে একই রকমের আইন পাস হয়েছিল। অবশ্য দেশটির সুপৃম কোর্ট এটিকে পারিবারিক অধিকারের লঙ্ঘন মনে করে আইনটিকে উঠিয়ে দিয়েছে। ইসরেলের হাই কোর্টও এই বছরে এই আইনটি উঠিয়ে দিয়েছে।

ইসরেলের জনগণ প্রকৃত নাগরিকদের রাষ্ট্র থেকে ইহুদি লোকজনের রাষ্ট্র বলে জোরগলায় বলে বেড়ায়। (এক পঞ্চমাংশই হচ্ছে প্যালেস্টিনিয়ান আরব)। নাগরিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ইসরেলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ইসরেলি ছাড়া আলাদা রেঞ্জে বিচার করে। অফিশিয়াল রেজিস্টৃতে, ইসরেলের ইহুদি নাগরিকদের ক্ষেত্রে ন্যাশনালিটি লাইনকে পড়া হয় জিউ হিসেবে। প্যালেস্টাইনের নাগরিকদের ক্ষেত্রেই একই ন্যাশনালিটি লুণ্ঠনকে পড়া হয় আরব হিসেবে।

যখন এই চোখ ধাধানো অসাম্যতার বিষয়টি ইসরেলের হাই কোর্টে অভিযোগ করে উঠানো হয় তখন বিচারপতি এটি খারিজ করে দেন। বিচারপতি বলেন, ইহুদি জনগণ থেকে পৃথক কোনো ইসরেলি দেশ নেই। নিশ্চিতভাবে ইসরেলের অ-ইহুদি লোকদের জন্য এই পৃথককরণ দ্ব্যর্থক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, অধিকাংশ ইসরেলি ইহুদিই আরব নাগরিকদের একটি জনসংখ্যাতাত্ত্বিক (ডেমগ্রাফিক) হুমকি হিসেবে মনে করছে। তাদের অনেকেই এমনকি ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার তাদের উচ্ছেদ করতে আগ্রহী।

এসব আসলে কি, যদি এটি রেসিজম (এক জাতি অন্য অপেক্ষা উৎকৃষ্ট এমন ধারণা) না হয়? তবে অনেকেই উচ্চনাদি নিন্দাবাদ করেছেন, প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তো আমেরিকার প্রায় মুহূর্তের চোখ ধাধানো অবিচারকে লক্ষ্য করছেন না। কেন তারা ইসরেলের এমন নগ্ন রেসিজমকে না দেখার ভান করছে? সম্ভবত এটি এই কারণে যে তারা সবাই সচেতন, তাদের অমার্জনীয় অপরাধ থেকে আত্মরক্ষা করতে হবে। কারণ তারা সবাই সচেতন যে রাজাটিকে তারা কিছু পরিধান করাতে চাচ্ছে, আসলেই তার কোনোই কাপড় নেই। কতোদূর পর্যন্ত এই আবরণ হবে তারও একটা সীমা আছে। কার্টারের বইয়ের প্রধান আলোচিত বিষয় হলো, আমাদের শেষ পর্যন্ত সেই সীমাতেই পৌছতে হবে।

(সমাপ্ত) অনুবাদ : একরামুল হক শামীম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।