আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফতোয়া ৮ - প্রসঙ্গ : সেই কর্দমাক্ত ঝর্ণা

"অবশ্যই আমার নামাজ আমার এবাদাত আমার জীবন আমার মৃত্যু সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহর জন্যে। "

প্রশ্ন : সূরা আল কাহফ-এ বাদশাহ যুলকারনায়নের ঘটনা প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা বলেন, '(চলতে চলতে) এমনিভাবে সে সূর্যের অস্তগমনের জায়গায় গিয়ে পৌঁছুলো, সেখানে গিয়ে সে সূর্যকে (সাগরের) কালো পানিতে ডুবতে দেখলো, তার পাশে সে একটি জাতিকেও (বাস করতে) দেখলো, আমি বললাম, হে যুলকারনায়ন (এরা তোমার অধীনস্ত), তুমি ইচ্ছা করলে (তাদের) শাস্তি দিতে পারো অথবা এদের সাথে তুমি সদয় ভাবও গ্রহণ করতে পারো। ' (সূরা আল কাহাফ, আয়াত ৮৬) প্রশ্ন হচ্ছে সেই কর্দমাক্ত ঝর্ণা কোনটি যেখানে সূর্য অস্ত যাচ্ছিলো? সেই জাতি কোন জাতি যাদের সাথে যুলকারনায়নের সাক্ষাত হয়েছিলো? উত্তর : বাদশাহ যুলকারনায়নের আলোচনা সূরা কাহাফে বিদ্যমান রয়েছে। এই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কোরআন আমাদেরকে এ কথা জানায়নি যুলকারনায়ন কে ছিলেন। মাশরেক ও মাগরেব অর্থাৎ পূর্ব ও পশ্চিমে তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, কোন কোন জাতির সাথে দেখা করেছিলেন, সেসবও জানানো হয়নি।

এই সূরায় অন্যান্য ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব ঘটনা থেকেও বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। এর হেকমত আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। তবে বক্তব্যের ধরণ দেখে বোঝা যায় যে, কোরআনে কাহিনী এবং ঘটনার উল্লেখ ঐতিহাসিক বিবরণী উল্লেখ করার জন্যে করা হয়নি বরং শ্রোতা ও পাঠকদের শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যেই এসব উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'অবশ্যই (অতীতের) জাতিসমূহের কাহিনীতে জ্ঞানবান মানুষদের জন্যে অনেক শিক্ষা রয়েছে' (সূরা ইউসুফ, আয়াত ১১১) এই সূরায় যুলকারনায়নের কাহিনীও শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি এমন একজন বাদশাহ ছিলেন, যাকে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে রাজত্ব দিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনীয় সকল প্রকার উপায় উপকরণ দিয়েছিলেন।

চারিদিকে তার বিজয়ের ডংকা বেজে উঠেছিলো এবং নানা জাতি তার আনুগত্য স্বীকার করেছিলো। তবু তার মনে বিন্দুমাত্র অহংকার সৃষ্টি হয়নি। তিনি সব সময় ন্যায় বিচার করতেন, সত্য ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। কখনো আল্লাহ প্রদত্ত সীমা লংঘন করেননি। নিজের জাতিকে সম্বোধন করে তিনি বলেছিলেন, 'এদের মাঝে যে (আল্লাহর সাথে) বিদ্রোহ করবে, তাকে আমি অবশ্যই শাস্তি দেবো, অতঃপর তাকে (যখন) তার মালিকের সামনে ফিরিয়ে নেয়া হবে (তখন) তিনি তাকে (আরো) কঠিন শাস্তি দেবেন।

(অপরদিকে) যে ব্যক্তি (আল্লাহর ওপর) ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, তার জন্যে (আখেরাতে) থাকবে উত্তম পুরস্কার, আর আমিও তার সাথে আমার কাজকর্ম সম্পাদনের সময় একান্ত বিনম্র ব্যবহার করবো' (সূরা আল কাহাফ, আয়াত ৮৭-৮৮) সেই ঝর্ণা কোনটি ছিলো, যেখানে সূর্য অস্ত যাচ্ছিলো এবং কোন কোন জাতির সাথে যুলকারনায়নের দেখা হয়েছিলো, এ সম্পর্কে কোরআনে কিছু বলা হয়নি। তাদের নামধাম বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখের মধ্যে যদি আমাদের দ্বীনী বা দুনিয়াবী কোনো কল্যাণ থাকতো তবে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আমাদের তা জানাতেন। কোরআনে এ ঘটনার যে বিবরণ রয়েছে এতে দেখা যায় যে, যুলকারনায়ন পশ্চিম দিকে রওনা হয়েছিলেন। যখন তিনি অনেক পশ্চিমে গেলেন তখন সূর্যকে একটি ঝর্ণার মধ্যে ডুবতে দেখলেন। এর অর্থ এটা নয় যে, সেই কর্দমাক্ত ঝর্ণায় সূর্য ডুবছিলো বরং এটা হচ্ছে একটা দৃশ্যকলা।

সাগরের পাড়ে দাঁড়ালে যেমন মনে হয় সূর্য পানিতে ডুবে যাচ্ছে, তেমনি হয়তো মনে হচ্ছিলো, সূর্য যেন ধীরে ধীরে সেই ঝর্ণার ভেতর অস্ত যাচ্ছে। এমন হতে পারে যে, এটা সেই জায়গা যেখানে নদীর কর্দমাক্ত পানি সমুদ্রে যাচ্ছিলো। অথবা বাস্তবেই সেই ঝর্ণা ছিলো যথেষ্ট কর্দমাক্ত। প্রকৃতপক্ষে সূর্যাস্তের দৃশ্য বর্ণনা উদ্দেশ্য নয়, পুরো ঘটনার বিবরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন একজন বাদশাহর কথা জানানো, যিনি এই পৃথিবীর এক বিস্তৃর্ণ এলাকার ওপর রাজত্ব করতেন এবং অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ এবং ন্যায়পরায়ণ। বিবেকবানদের জন্যে এই বিবরণীতে অনেক শিক্ষা রয়েছে।

এ প্রসংগে আমি বলতে চাই, সর্বাবস্থায় ততোটুকু নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত, যতোটুকু আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসূল আমাদেরকে জানিয়েছেন। আমরা যেন অহেতুক এ রকম প্রশ্ন না করি যাতে দ্বীনী বা দুনিয়াবী কোনো ফায়দা নেই। *** জবাব দিয়েছেন শায়খ ইউসুফ আল কারদাওয়ী *** *** অনুবাদ করেছেনঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ ***

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।