অনেক দিন ধরে রেলওয়েতে যাতায়াত করছি। রেলগাড়ীতে করে যাতায়াত অনেক নিরাপদ আর ধুলাবালি ও ধোয়া মুক্ত হওয়ার কারনে আমার প্রিয় একটি বাহন। কিন্তু গত সাড়ে ছয় বছর থেকে সীমান্ত অথবা রূপসা আন্তঃনগর ট্রেনে খুলনা টু সৈয়দপুর যাতায়াত করার সময় অধিকাংশ দিনেই আমার খুব বিরক্তি আর ঝামেলায় পড়েছি। সর্বশেষ যাতায়ত আমার গত ১০ অক্টোবর ২০০৭। আমি আর আমার এক বন্ধু দুজনে খুলনা থেকে সৈয়দপুরে যাব।
৫ তারিখে টিকেট কাটতে গিয়েছিলাম। কাউন্টার ফাকা ছিল কিন্তু টিকেট নেয়ার সময় শুনলাম চেয়ারের টিকেট নেই। শেষে বাধ্য হয়ে নরমাল টিকেট কাটলাম। টাকা দেয়ার সময় দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতি টিকেটে ৫ টাকা করে বেশি চাইলেন। প্রত্যেকবার টিকেট কাটার সময় তারা নরমাল সিটে গেলে প্রতি টিকেটে ৫ টাকা এবং শোভন চেয়াররে গেলে ১০ টাকা বেশি রাখে।
না দিলে সিট নম্বর দেয় না। আসনবিহীন টিকেট দেয়। হিসাব করলে দেখা যায় ট্রেনের ২০০ টি চেয়ার এর জন্য ২’হাজার টাকা আর ৮শ টি নরমাল সিটের জন্য চার হাজার টাকা সর্বমোট ৬ হাজার টাকা প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে মোট ১২ হাজার টাকা আয় করে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের টিকেট কাউন্টার থেকে। প্রতি মাসে এই কাউন্টার থেকে প্রায় তিন লক্ষ ষাট হাজার টাকা অবৈধভাবে আয় হয়। আর একটা কথা ট্রেনে অধিকাংশ দিনেই যাত্রীতে ভর্তি থাকে।
এটা বললাম কাউন্টারের কথা। এবার আসি এটেন্ডেন্ট এবং টিসি’র কথায়। এপর্যন্ত গত ছয় বছরে যতদিন যাতায়াত করেছি প্রতিদিন দেখেছি এরা টিকেট ছাড়া শুধুমাত্র নগদ টাকার বিনিময়ে যাত্রী পরিবাহনে সাহায্য করে। এদের একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট বা নেটওয়ার্ক আছে। এরা টাকার বিনিময়ে স্টেশনের গেট পার করে দেয়।
তবে যারা টাকা একটু কম দেয় তাদেরকে আবার স্টেশনের গেটে আটকিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি করা হয়।
আমি একটা বিষয়ে এখনও ভীষণ অবাক হই। ট্রেনে প্রতিটি কামরায় এটেন্ডেন্ট এবং একাধিক টিসি থাকার পরে কোনযাত্রী টিকেটবিহীন থাকার কথা নয়। অনেক স্টেশনেই দেখা যায় স্টেমনের নামার পরে টিকেট চেক করার জন্য গেটে লোক দারিয়ে থাকে। অধিকাংশ সময় এরা ধান্দাবাজ লোক।
যাদের সাথে রেলওয়ের কিছু অসাধু লোকের যোগসাজস আছে। একদিনে কথা আমি সৈয়দপুরে না নেমে পাবর্তীপুরে নেমে যচ্ছি। প্লাট ফরমে এক লোক আমার টিকেট দেখতে চাইলো। লোকটির গায়ে একটা গেঞ্জি এবং পরনে লুঙ্গি। আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি কে? আপনাকে কেন টিকেট দেখাবো? সেই বেকুব ভেবে বসলো আমার টিকেট নেই।
আমার ব্যাগ টেনে ধরে একজন সাদা পোশাকধারীকে ডেকে বললো স্যার এনার টিকেট নেই। আমি তো তার কথায় অবাক। এবার একটু মজা দেখার জন্য বললাম টিকেট নেই। সেই সাদা পোশাকপড়া ভদ্রলোক আমার কাছে ২শ টাকা চাইলেন, তা না হলে ছেড়ে দিবেন না। আমি বললাম আমার কাছে টাকা নেই সেই লোক আমার মানিব্যাগ চেক করতে চাইছে।
পরে মানিব্যাগ বের করে টিকেট বের করে দেখালাম। সেখানে স্পষ্ট করে লেখা আছে এই টিকেট হস্তান্তর নিষিদ্ধ, আর কোথায় লেখা নেই স্টেশনে এই টিকেট চেক করা হয়, তবে কেন আমি এদেরকে টিকেটা দিব? কিন্তু আমি গত দুবছর ধরে টিকেট নিয়ে স্টেশনে এই ঝামেলা প্রতিবার করি আমার মজা লাগে, আর টিকেটটা ওদেরকে দেই না। আমি নগদ টাকায় কিনেছি ওদেরকে দিব কেন?
আর একটা বিষয় ট্রেনে অনেক আগে প্রত্যেক এটেন্ডেন্ট এবং টিসির নামফলক ও পদবী লেখা থাকতো এখন আর সেগুলো থাকে না এতে নিদিষ্ট করে কারও নামে অভিযোগও করা সম্ভব হয় না। আগেই বলে রাখি রেলওয়ের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করার জায়গা আছে, অভিযোগ খাতা আছে কিন্তু অভিযোগ দেখার লোক হয়তো নেই।
রেলওয়ে খুবই সম্ভাবনাময় একটি পরিবহন খাত অথচ কতৃপক্ষের অসচেতণতা আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্নীতির জন্য হয়তো সুদুর ভবিষ্যতে আমাদেরকে রেলওয়ে লসের খাত দেখিয়ে বেসরকারী করে দিতে হবে।
এখনও অনেক মেইল ও লোকাল ট্রেন বেসরকারী আছে। নিজের দেশের সম্পদ বাংলাদেশ রেলওয়ে, আর সেই সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে কিছু কর্মকর্তা আর কর্মচারী। নিজের ঘরে নিজেই চুরি করছে, কেউ বলতে পারেন এই বাঙ্গালীরা কবে সচেতন হবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।