একের পর এক সময় নিয়েও নির্মাণ কাজ শুরু করতে না পারায় সামিট পাওয়ারের সঙ্গে বিবিয়ানা-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ চুক্তি বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে সামিটের ৩০ লাখ ডলারের জামানত। চলতি সপ্তাহেই এ ব্যাপারে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সামর্থ্য না থাকলেও ক্ষমতার জোরে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ বাগিয়ে নেয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ।
চলতি বছর আগস্ট মাসে বিবিয়ানা-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার কথা থাকলেও সামিট এখন পর্যন্ত কাজই শুরু করতে পারেনি। ৩৪১ মেগাওয়াটের বিশাল কেন্দ্রটির নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় বিদ্যুৎ খাত বড় রকমের একটা ধাক্কা খেল। তাদের হাতে থাকা বিবিয়ানা-২ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসছে না। এ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে সরকারকে কুইক রেন্টাল থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে হতো না।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তহবিল সংগ্রহ করতে ১০ মাস সময় পায় সামিট।
গত ২৭ মাসেও তারা তহবিল সংগ্রহ করতে পারেনি। তাই আইনগতভাবেই তাদের চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেলেই চুক্তি বাতিল করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আরও আগে সামিটের সঙ্গে চুক্তি বাতিল ও তাদের জামানত বাতিল হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে কোনো কোনো কর্মকর্তার বদলি হয়ে যাওয়ার রেকর্ডও আছে।
প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তহবিল সংগ্রহের জন্য তারা তিনবার সময় বাড়ায়। তারপরও কাজ শুরু করতে না পারায় গত ১২ আগস্ট পাওয়ার সেল মন্ত্রণালয়ে চুক্তি বাতিলের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয় চিঠির অনুমতি দিয়েছে। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে না এলে জামানত বাজেয়াপ্ত ছাড়াও জরিমানা করে নতুন দরপত্র আহ্বানের বিধান রয়েছে। কিন্তু জরিমানা দূরের কথা সামিট এখন তাদের জামানত রক্ষায় তৎপরতা চালাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিবিয়ানা-১ কেন্দ্রটির চুক্তি বাতিল হলেও একই ক্ষমতার বিবিয়ানা-২ কেন্দ্রটির কাজ এখনো সামিট গ্রুপের হাতে রয়েছে। তবে বিবিয়ানা-১ প্রকল্প বাতিল হওয়ায় বিবিয়ানা-২ প্রকল্পের বাস্তবায়নও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। কারণ গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন, সাবস্টেশন নির্মাণ এগুলো বিবিয়ানা-১ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সূত্র জানায়, গত বছর ১৮ জুন সরকারের সঙ্গে এক বৈঠকে বিবিয়ানা-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করতে পারবে না বলে মৌখিকভাবে জানিয়ে দেয় সামিট গ্রুপ। তবে জামানত হারানোর ভয়ে তারা লিখিত কোনো চিঠি বিদ্যুৎ বিভাগকে দেয়নি।
বিদ্যুৎ বিভাগও চুক্তি বাতিল করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। এতে কেন্দ্রটির পুনঃদরপত্র কাজ আরও পিছিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ১২ মে মেঘনাঘাট ৩০০-৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ১৫ মে বিবিয়ানা ১ ও ২ কেন্দ্রের জন্য পিডিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় সামিট গ্রুপ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মেঘনাঘাট ও আগস্ট মাসে বিবিয়ানা- ১ ও ২ উৎপাদনে আসার কথা। এর মধ্যে কেবল মেঘনাঘাট কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসতে যাচ্ছে।
বিবিয়ানা-২ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আর বিবিয়ানা-১ কেন্দ্রটির কাজে হাতই দিতে পারেনি সরকারের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্ব পাওয়া সামিট গ্রুপ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।