হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই
বদরিকাবাবুর ঘড়ির ট্যাঁকে আস্তরণ জমেছিল, সেগুলো পুড়লো তার সাথেই। ছটুকুবাবু সামন্তবাদকে বাদ দিতে চাইলেন না, কিন্তু চাইলেন পুঁজিপতি হতে- স্বাভাবিকভাবেই পারেন নি। ননীলালের শরীরে শুধু পুঁজির বাতাসই লাগে নি; বয়ে বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক হাওয়া, যদিও তার কোনো সুস্থ বিকার নেই। সুবিনয়বাবু সারাটা জীবন ঘুরে মরলেন ঘোরের মধ্যে- এ কি কেবল সুবিনয়বাবুর দোষ? নাকি লেখক নিজেই বিশ্বাস করেছিলেন ব্রাহ্ম সুবিনয়কে তিনি বিশ্বাসের ঘেরাটোপে বন্দী করবেন। সুপবিত্র হয়তো মেরুদণ্ডহীন (ভূতনাথের মনোভাবে)।
কিন্তু মেরুদণ্ডের সংজ্ঞা অনুপস্থিত রইলো বরাবরই। পাঠকের কাছে অভিমানী দৃঢ়মনের মানুষই হয়তো সে। বৃন্দাবনের সাথে জানবাজারের মানুষটির সম্পর্ক কি কেবল রহিতই ছিলো, ছোটবাবুর আড়ালে-আবডালে কিছু হতো কি? জবা একইসাথে ভালোবাসে দু’জনকে, যার মধ্যে একজনকে করুণার সিরাপ মিশিয়ে গেলাতে চায়। পটেশ্বরী বৌঠানের এতো জেদ-সংকল্প, শেষে কিনা ইচ্ছার জোর কমাতে চাইলেন শরাবের ‘নন্দঘোষত্ব’ আবিষ্কার করে। বংশীর জন্যই হয়তো আংকল টমস কেবিন লিখতে হয় আজো।
আর ভূতনাথ?
একাধারে সাধক, অপদার্থ, কুলাঙ্গার, দেশপ্রেমিক, বিরহী, আন্তর্বিদ্রোহী- আরো কত কী? লেখক চাইছেন তাকে সব করে তুলতে, তাই তিনি তা হয়েছেন। তবে নিখাদ আবিষ্কারটা হলো- নতুন ভূতনাথ কিংবা পুরনো অতুলকে কলকাতা চায়নি কোনোমতেই। আর তাই তাঁকেও সব ফেলে যেতে হলো সামন্তযুগীয় কায়দায়, যেখানে শরৎবাবু প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন নিজের সাম্রাজ্য। দুঃখবিলাস যার খেরোখাতা, অভিমান যার মুড়ির টিন, না খেয়ে থাকা যার বহির্জাগতিক উদারতা, আর সবশেষে না পাওয়া যার কাছে আইএমএফের পিআরজিএফ। অনেক উপদেশ পেলে সে বৌঠানের কাছ থেকে, জবার কাছ থেকে, সুবিনয়বাবুর কাছ থেকে, ব্রজরাখালের কাছ থেকে।
কিন্তু আবালের মতো নিজের ঘুঁটেটুকু দান করে দিয়ে আসে সে তাদেরই কাছে, বিধাতা যাদের দান দিতে নারদকে সাথে নিয়ে উদগ্রীব। কী হতো ভূতনাথ যদি ফতেপুরের অতুলকে জবার সামনে আনতো? সেই তো মেসজীবনে ভোরবেলায় গঙ্গাস্নান!
তবে আমাদের পূষণকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম না আপনাদের সাথে? ওই যে যার অভিমান মানুষের পায়ের তলায় মিশে যাচ্ছিলো? আমিও বিমল মিত্রের ‘সাহেব বিবি গোলাম’ পড়ার আগে জানতাম না পূষণ যে সামন্তযুগের ভূতনাথ ছিলো। 'চোখ থাকতি থাকতি যে তিভুবনটা চিনল না...'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।