আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবীর সেরা পেশা # গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

একটি কলাম্বিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সাংবাদিকতা পড়তে চায় এমন ব্যক্তিদের কোন ধরনের গুণ থাকা উচিত অথবা তাদের জন্য পেশাভিত্তিক কোন ধরনের পরীক্ষা নেয়া উচিত। উত্তরটি ছিল চরম। Ñবলা হয়েছিল, সাংবাদিকরা শিল্পী নন। শিল্পের সঙ্গে সাংবাদিকদের জড়িয়ে যে মতগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা উস্কানি পেয়েছে আরেক অভিযোগকে কেন্দ্র করে যে, সংবাদপত্রের কাজ হলো সাহিত্যিক ধাঁচের।

পঞ্চাশ বছর আগে সাংবাদিকতার স্কুলগুলো এতো কেতাদুরস্ত ছিল না। এই কেরামতি শেখা হতো নিউজরুম, ছাপাখানা, দমবদ্ধ করা রেস্টুরেন্টের কোনায় এবং প্রতি শুক্রবারের রাতের আড্ডা-আসরে। সংবাদপত্রের কাজ হতো ফ্যাক্টরির মতো স্থানে। সেখানেই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও তথ্য যোগান দেয়া হতো। মতামত তৈরি হতো যৌথ প্রতিক্রয়ার সতত আবহে।

সাংবাদিকরা কঠিন বন্ধনে জড়িয়ে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে কাজ করতেন। আমরা একটি যৌথ জীবনযাপন করতাম এবং পেশা বিষয়ে এতটাই একগুঁয়ে ছিলাম যে, অন্য বিষয়ে কথাই বলতাম না। কাজটার ধারাই এমন যে, ব্যক্তিগত জীবনের জন্য খুবই কম সময় থাকতো। কার্যকর কোনো এডিটরিয়াল বোর্ড না থাকলেও বিকাল পাঁচটায় সকল সাংবাদিক স্বতঃম্ফূর্তভাবে বিরতি নিয়ে জড়ো হতেন এডিটরিয়াল কর্মকাণ্ডের স্থানে। সে সময় কফি পান করতেন তারা।

অনেকটা খোলামেলা আড্ডার মতো আয়োজন জমতো। প্রত্যেক বিভাগের গরম তর্কগুলো উঠতো সেখানে আর পরের সকালের সংস্করণের জন্য নির্ধারিত বিষয়গুলোতে ফিনিশিং টাচ দেয়ার কাজও করা হতো। যারা ২৪ ঘণ্টাজুড়ে চলতে থাকা এই ভ্রাম্যমান শিক্ষণ প্রক্রিয়ার গনগনে আগুন থেকে কিছুই নিতো না অথবা এইসব আলোচনায় বিরক্ত বোধ করতো তারা নিজেদের সাংবাদিক বলতে চাইলে বা বিশ্বাস করতে চাইলেও সেটা কঠিন হতো। সেই সময় সাংবাদিকতাকে তিনটি বড় ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হতো : সংবাদ, ফিচার স্টোরি ও সম্পাদকীয়। যে বিভাগটিতে কাজের সবচেয়ে কেরামতি দেখাতে হতো এবং দামও বেশি পাওয়া যেত তা হলোÑসম্পাদকীয় বিভাগ।

রিপোর্টারের কাজকে খুবই অবমূল্যায়ন করা হতো। তাকে ভাবা হতো শিক্ষানবিশ, নিচের সারিতে অগুরুত্বপূর্ণ কাজ করার লোক। সময় ও পেশা দুটোই বলে দিত সাংবাদিকদের রুটিন ঘড়ির কাটার উল্টাদিকে ঘুরবে। পরিহাস হিসেবে বলি, ১৯ বছর বয়সে আমি ছিলাম আইন বিদ্যালয়ের সবচেয়ে খারাপ ছাত্র আর চাকরি শুরু করেছিলাম একজন এডিটরিয়াল স্টাফ হিসাবে। পর্যায়ক্রমে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে আমি আমার জায়গা তৈরি করেছি, নানা বিভাগে কাজ করেছি এবং শেষ পর্যন্তšপরিণত হয়েছি নির্জলা এক বুড়ো রিপোর্টারে।

এই পেশার চর্চায় প্রয়োজন এক বৃহত্তর সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিত, যা নিজেই কাজের পরিবেশ তৈরি করে দেয়। পড়াশোনা হলো আনুসঙ্গিক উপাদান। স্বশিক্ষিতরা সাধারণভাবেই এক্ষেত্রে উৎসুক থাকে এবং দ্রুত শিখে নেয় সবকিছু। এটা আমার কালের সত্য উপলদ্ধি। আমরা একে বলতাম দুনিয়ার সেরা পেশা আর অব্যাহত রাখতে চাইতাম এর সামনে চলাকে।

বারোমেসে সাংবাদিক আলবার্তো লেইয়েরাস কামারগো দুই দফা কলাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, কিন্তু তার শিক্ষাদীক্ষা হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট পর্যন্তও ছিল না। এক সময় একাডেমিক সার্কেল থেকে সমালোচনা করা হলো যে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটি বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এর ফলেই জন্ম§নিলো সাংবাদিকতার স্কুলগুলো। সে সময় শুধু প্রিন্ট মিডিয়াই নয় বরং মিডিয়ার সকল দিক এমনকি আবিস্কৃত হবে এমন মিডিয়াকেও এর কোর্সের অন্তর্ভুক্ত করা হলো। পঞ্চদশ শতকের শুরুর দিকে এর সম্মানীয় নামকরণ সত্ত্বেও এখন সেটি অচল হয়ে গিয়েছে।

একে এখন আর সাংবাদিকতা বলা হয় না। এ হলোÑএখন যোগাযোগ বিজ্ঞান বা গণযোগাযোগ বিদ্যা। সাধারণ মূল্যায়নে, ফল খুব ভাল নয়। একাডেমিক ইন্সস্টিটিউশন থেকে যারা বাস্তবতা বর্জিত আকাঙক্ষা নিয়ে স্নাতক হবেন, ভবিষ্যতের জীবনে বাস্তব জ্ঞান এবং জগতের মৌল সমস্যার স্পর্শের বাইরেই থেকে যাবেন তারা। এবং আত্মউন্নয়ননই তাদের কাছে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

দুটি চাবিকাঠিÑঅর্থাৎ, সৃজনশীলতা ও অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করলে এটাই সত্য বলে প্রতিভাত হয়। বেশিরভাগ ছাত্রই এ পেশায় যুক্ত হয় ব্যকরণ ও বানানে দুর্বলতা এবং যে বিষয়টি তারা পড়েন সে বিষয়ে পর্যাপ্তøদখল না থাকার এক আবশ্যিক ন্যূনতা নিয়ে। কেউ কেউ বাস্তবিক অর্থেই গর্বিত বোধ করেন এই ভেবে যে, তারা মন্ত্রীর টেবিলের গোপন কাগজটি পড়ে ফেলতে পারেন, যে কোনো আলোচনা রেকর্ড করতে পারেন বক্তার অজ্ঞাতেই অথবা যে কথাকে তারা গোপন বলে মেনে নিয়েছিলেন তাকে প্রকাশ করে দিতে পারেন। সবচেয়ে বিরক্তিকর হলো, এই ধরনের টানাহেঁচড়ার ভিত্তি এই পেশার প্রায়-অশ্লীলতম দিক যে, সকল কিছুর উর্ধ্বে যে কোনো মূল্যে একজনকে কিছু একটা জানতে হবে। আর বিশ্বাসটি গেঁথে দেয়া হয়েছে সচেতন ও গভীরভাবে।

ধারণা করা হয়, যে খবরটি প্রথম সংগৃহীত হলো তা-ই শ্রেষ্ঠ খবর নয়, বরং সেরা হলো উত্তমরূপে পরিবেশিত খবর, তাদের কাছে যার কোনো মূল্যই নেই। এদের মধ্যে যারা নিজেদের অপারগতা বিষয়ে সচেতন তারা মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রতারণা করেছে। যে গুনগুলো তাদের কাছে এখন প্রত্যাশা করা হয় তা সঞ্চারিত করার ব্যর্থতার জন্য শিক্ষকদের দোষারোপ করতে তারা কার্পণ্য করে না। প্রকৃতপক্ষে কৌতুহল নিজেই জীবনকে পুরস্কৃত করে। (বাকী অংশ পরে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.