যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে
১.
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বা সংক্ষেপে ইউসি'র অনেকগুলো শাখার মধ্যে সবচাইতে ডাকসাইটে ধরা হয় ইউসি বার্কলে। তারপরে ধরা যায় ইউসি লস এ্যাঞ্জেলেস, কখনো ডেভিস। এ ছাড়াও ইউসির অন্যান্য ইউনভার্সিটিগুলো সারা ক্যালিফোর্নিয়া জুড়ে আছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আরভাইন, সান ডিয়াগো, রিভারসাইড, সান ফ্রান্সিসকো ইত্যাদি। মর্যাদার দিক থেকে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া লস এ্যাঞ্জেলেসকে আমেরিকার তো বটেই, পৃথিবীর অন্যতম সেরা স্কুল ধরা হয়।
বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ইউসিএলএর অবস্থান এক থেকে পাঁচের ভিতরে যার পেছনে মূলত ক্রেডিট দেওয়া যায় এখানকার খুব নামী মেডিকেল রিসার্চ ইন্সটিটিউটগুলোকে।
এইসিএলএর হসপিটাল পশ্চিম উপকূলের রেংকিং-এ এক নম্বর। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং কারিকুলামে মেডিকেল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের যোগসাজস খুব বেশ বলে ইউনিভার্সিটির হাসপাতালের একটা বড় ভূমিকা থাকে। হাসপাতালের পাশাপাশি এখানে ব্রেইন ম্যাপিং ইন্সটিটিউট, জিন ম্যাপিং ইত্যাদি অনেকগুলো হাইটেক সুযোগসুবিধা আছে।
২.
গত দুই সপ্তাহ গেলো ওরেয়েন্টেশনের পর ওরিয়েন্টেশনে। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসাবে এক গাদা ওরিয়েন্টেশন, তারপরে গ্রাজুয়েট স্কুলের, তারপরে নিজ ডিপার্টমেন্টে।
ইউসিএলএ এতটাই বিশাল ইউনিভার্সিটি যে এটাকে অনেকেই আলাদা শহর বলে থাকে। ইউনির্ভার্সিটির ক্যাম্পাসটা বিশাল, অনেকটা জায়গা নিয়ে। বিশালত্বের ধারনা পাওয়া যাবে যদি বলি ইউনির্ভার্সিটির ভেতরে নিজস্ব পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (বিখ্যাত এলএপিডি) থেকে শুরু করে পাওয়ার প্ল্যান্ট - কি নাই!
ইউনির্ভার্সিটির বিশাল ভলিউমের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য তাই হাজার রকম সার্ভিস আর সেগুলো সম্পর্কে অল্প বলতে গেলেও পুরো দুই সপ্তাহ লাগলো ওরিয়েন্টেশনে।
৩.
ইউসিএলএ তে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম আমেরিকার ও বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রোগ্রাম। অসম্ভব কম্পিটেটিভ এবং এখানে খুব বেশি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা চান্স পায় না।
আমেরিকার নিজস্ব মেধাবীরাই ভিড় জমায় ইউসিএলএতে। সেই হিসাবে বাংলাদেশী হিসেবে সরাসরি ফেলোশিপে পিইএচডি প্রোগ্রামের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে বসে নিজেকে অদ্ভুত লাগছিলো। অদ্ভুত কারন প্রথমত আমি বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে এখানে আসি নি, অথচ আসেপাশের সব গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টরা প্রায় সবাই বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মেজর করা। আমি আমার সাথে বয়ে বেড়াই গরীব একটা দেশের গরীব একটা ইউনিভার্সিটির ডিগ্রী এবং সেটাও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। বায়োর ধারে কাছেও নয়।
অন্যদিকে আমার আশেপাশে যারা বসে আছে তারা কেবল বায়োইঞ্জিনিয়ারিংই না, কেউ জন হপকিন্স থেকে, কেউ এমআইটি, কেউ স্বয়ং ইউসিএলএ বা ইউসি বার্কলী থেকে এসেছে। অদ্ভুত কোন এক যোগসাজশে এইরকম একটা প্রোগ্রামে ফেলোশিপ (যেখানে অনেকে এখনো ফান্ডিং পায় নি) নিয়ে বসে ইউনিভার্সিটি ডিনের ভাষণ শুনতে পুরো বিস্ময়করই লাগছিলো। উপরওয়ালা নিতান্তই রহস্যময়!
৪.
কোথা থেকে এসেছো, উততের বাংলাদেশ বললে অনেকেরই কিছু সময় লাগে নামটা বুঝতে! কয়েকজনতো কনফিডেন্সের সাথে বলেই বসে, ও বাংলাদেশ তো ভারতে তাই না?! এক মদন সবচেয়ে হাসির রিয়্যাকশন দিয়েছিলো, বলে বাংলাদেশতো ভারতের রাজধানী, তাই না?!
আমার বুঝায়ে বলতে হয়, না এইটা ভারতে না। ভারতের পাশের একটা দেশ। আশ্চর্য্য এই আমেরিকানরা! নিজের দেশের বাইরে দুনিয়া সম্পর্কে পুরা বেখবর!
৫.
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে গিয়ে সবচেয়ে ভালো লেগেছে ইউসিএলএর আর্কিটেকচার।
অনেকগুলো মূল ভবনের ডিজাইন সেই ৬০এর দশকের ডিজাইনে। দেখতে খুব রাজকীয়। খুব ক্লাসিক ডিজাইনের। বিশেষ করে পাওয়েল লাইব্রেরীটার ভবনটা অসাধারন। দেখলে মনে হবে যেন ১০০ বছর পেছনে চলে এসেছি।
...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।