আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাসঙ্কটে বোতল মামা-১



'পানির ফোঁটা কি চাকার মতো? মোটেই না। তবে গড়িয়ে যায় কী করে? এ নিয়ে ভেবেছিস কখনো?' প্রশ্নটা যাকে করা হয়েছে সে আছে মহাবিপদে। প্রশ্ন শোনার সময় তার নেই। সে মনপ্রাণ লাগিয়ে ভিডিও গেমস খেলছে। নায়ককে নিয়ে বিরাট এক মিশনে নেমেছে।

কিন্তু সাধাসিধে একটা ঘরে আটকা পড়ে আর কিছুতেই বের হতে পারছে না। বোতল মামার তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই। তিনি দ্বিতীয় প্রশ্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 'আচ্ছা, এবার বল পোশা কবুতর পথ চেনে কী করে?' পায়েল বিরক্ত চোখে মামার দিকে তাকায়, 'মামা! কবুতরের গলায় একটা ম্যাপ ঝোলানো থাকে! এবার হয়েছে! আমাকে খেলতে দাও!' বোতল মামার তাতেও ভাবান্তর নেই। তিনি বিড়বিড় করে কী সব বলছেন, আর মাঝে মাঝে দুহাতের তালু ঘষছেন।

তার মানে কোনো একটা হিসেব মেলাতে পারছেন না। সমস্যা জটিলতর। এমন সময় দেবদূতের মতো পায়েলের মা বেগম শান্তনা খানমের আবির্ভাব ঘটলো। তার হাতের ট্রেতে সাক্ষাত আশির্বাদ। অন্তত বোতল মামার কাছে চা'টা আশির্বাদের মতোই।

বিশেষ করে মাথায় যখন চিন্তার রেলগাড়িটা ঘটাং ঘটাং শব্দ না করে শাঁই শাঁই করে ছুটতে থাকে। মামা হাত বাড়িয়ে আশির্বাদ তথা চায়ের কাপ তুলে নিলেন। বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'দিদি ধন্যবাদের জন্য তোমায় চা। ' পায়েল গেমসের কথা ভুলে খিক খিক করে হেসে উঠলো। মামার দিকে তাকিয়ে বলল, 'মামা! তুমি কী বললে!' শান্তনা খানম ব্যাপারটা ধরতে পারেননি।

তিনি তার আধপাগলা ভাইয়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টি হেনে রান্নাঘরে চলে গেলেন। বোতল মামা কিছুক্ষণ চোখ কুঁচকে কি যেন ভাবলেন। দুই সেকেন্ড পর তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তারমানে ভুল ধরতে পেরেছেন। কিছুটা চড়া গলায় বললেন, 'চায়ের জন্য ধন্যবাদ হবে, হে হে।

' গেমসের নায়ক পথ খুঁজে না পেয়ে এখন দেয়ালে মাথা চাপড়াচ্ছে। মিশনের টাইম ওভার। তাই পায়েল এখন মামার কথায় যথেষ্ট মনযোগী। কম্পিউটারের টেবিল ছেড়ে সে মামার পাশে সোফায় বসলো। 'মামা, নতুন কী বানালে?' বোতল মামা এসেছেন ঘণ্টাখানেক হলো।

এতোক্ষণ পায়েল কিছুই জানতে চায়নি। মামা মাথা উঁচু করে হুঁ জাতীয় একটা শব্দ করলেন। যার মানে পায়েলের কাছে অস্পষ্ট। মামা কি তবে সত্যিই কোনো সমস্যায় পড়েছেন? জটিল ধরনের সমস্যা? পায়েল কিছুটা সিরিয়াস স্বরে জিজ্ঞেস করলো, 'মামা তুমি কী ভাবছো?' বোতল মামা এবার লম্ব দম নিলেন। গড়গড় করে বলতে লাগলেন, 'পানির ফোঁটার গড়িয়ে চলাটা বেশ রহস্যময়।

বাঘাবাঘা বিজ্ঞানীরাও একসময় ঘোল খেয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে কবুতরের ঘরে ফেরার সম্পর্কটা আরো জটিল। ' পায়েল আপাতত শুধু শুনেই যাচ্ছে। বোঝার চেষ্টা করছে না। মামা বলছেন, 'কবুতরের চোখ হচ্ছে কম্পাসের মতো, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাক বরাবর উড়তে থাকে।

আর নিজের অজান্তেই নাকটা এদিক সেদিক ঘুরিয়ে পথ চিনে নেয়। এছাড়া, ঘ্রাণ শুঁকেও বলতে পারে কোথায় এসেছে, কতোদূর যেতে হবে। তেমনি আমার মনে হয় পানির ফোঁটাও কোনোভাবে পথ চিনে নেয়। পথ চিনে গড়াতে থাকে। তবে তার গতিপথের অনেক কিছুই আগাম বোঝা যায় না।

ঠিক যেভাবে তারা আসছে। ' পায়েল এবার প্রশ্ন খুঁজে পায়। 'মামা, কারা আসছে? কোথায় আসছে?' বোতল মামা চোখ বন্ধ করে ফেললেন। কিছুটা ভারি গলায় বললেন, 'তাদের নাম দিয়েছি সাইলেন্ট ড্রপ মানে নীরব ফোঁটা। দেখতে অবিকল পানির ফোঁটার মতো।

তবে অনেক বড়। দূরের একটা গ্রহ থেকে আসছে। তাদের থামাতেই হবে। তা না হলে কোন দিকে যে গড়িয়ে যাবে কেউই বুঝতে পারবে না। বোঝার আগেই সব শেষ।

সবাই ডুবে মরবে। ' পায়েল কিছুটা হতাশ হয়। ভেবেছিল ভয়ংকর কোনো এলিয়েন টেলিয়েন আসছে হয়তো। কিন্তু পানির ফোঁটার মতো দেখতে গোলগাল বস্তুটা কি-ই এমন করতে পারবে। বোতল মামা চোখ খুললেন।

পায়েলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। তারপর বেশ গুছিয়ে বলা শুরু করলেন, 'শোন, প্রথমে ধরা পড়েছে আমার টেলিস্কোপে। পরে তেপান্তরে হিসেব করে সব বের করলাম। ' এই ফাঁকে বলে নেয়া ভালো, তেপান্তর হচ্ছে বোতল মামার সার্বক্ষণিক সঙ্গী, একটা মিনি কম্পিউটার। সাইজে হাতঘড়ির মতো হলেও বোতল মামার দাবি তার আবিষ্কৃত তেপান্তরই এ মুহূর্তের সবচে বুদ্ধিমান কম্পিউটার।

মারাত্মক দ্রুত কাজ করে। মাঝে মাঝে কমান্ড দেয়ার আগেই বোতল মামার মন বুঝে হিসেব কষে ফেলে। মামা বললেন, 'তাদের আসার গতি ঠিক কী হারে বাড়ছে তা তেপান্তর ছাড়া কেউ বের করতে পারবে না। এ জন্য নাসার বিজ্ঞানীরা এখনো কিছু জানতে পারেনি। তাছাড়া..।

' 'তাছাড়া কী মামা?'। পায়েল এখন কিছুটা আগ্রহী। 'বলছি..'। বোতল মামা চায়ে চুমুক দিলেন। 'তারপর শোন, ওরা আসছে পানির ফোঁটার মতো গড়িয়ে গড়িয়ে।

শক্তি কীভাবে পাচ্ছে প্রথমে বুঝিনি। তবে এখন কিছুটা বুঝেছি। ওদের প্রতিটি ফোঁটায় অসম্ভব শক্তি জমিয়ে রাখা। ' পায়েল বলল, 'মামা ওরা মানে, ঠিক কজন?' 'বলছি দাঁড়া, ওরা সংখ্যায় কতো তা বলতে পারবো না। তবে তেপান্তর যা বলল তাতেতো গা শিউরে ওঠার দশা।

ইয়া বড় বড় ফোঁটাগুলো থেকে তৈরি হবে আরো অসংখ্য ফোঁটা। এরপর জমা হবে পৃথিবীর আকাশে। মেঘের মতো। বিজ্ঞানীরা কিছুই বুঝবে না। ' পায়েল চি্তকার করে বলল, তারপর ওরা বৃষ্টির মতো নেমে আসবে! ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি! 'হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস।

' মামার মুখে প্রশংসার ছাপ। তবে পায়েলের ভয় লাগছে না। তার মনে কেমন যেন আনন্দ ভর করলো। তার এলিয়েন দেখার পূরণ হতে যাচ্ছে! 'কিন্তু মামা, এখানে কবুতর আসলো কেন'। বোতল মামা আবার দম নিয়ে বললেন, 'ওরা আসছে পৃথিবীর গন্ধ পেয়ে।

এটাও বুঝেছি। কবুতরের মতো ওদের একটা নাক আছে। সবার হয়তো একটা নাক। আবার হতে পারে সেটা কোনো নাকই নয়। কোনো দিকনির্দেশক যন্ত্র।

' পায়েল অবাক হয়। 'পৃথিবীর গন্ধ মানে!' 'সে এখন বোঝাতে পারবো না। প্রতিটা গ্রহের আলাদা আলাদা গন্ধ আছে। তবে মানুষ কখনো সে গন্ধ পায় না। ' পায়েল বলল, 'তবে ওরা যে পাচ্ছে তা বুঝলে কী করে?'।

মামা বিরক্ত ভঙ্গিতে চোখ কুঁচকালো। পায়েল কিছুটা লজ্জা পেল। তার বোতল মামা পারে না এমন জিনিস খুব কমই আছে। শুধু মাঝে মাঝে শার্টের বোতাম এলোমেলো হয়ে যায়। 'কিন্তু মামা, ওরা পৃথিবীতে এসে...'।

পায়েলের কথা শেষ হওয়ার আগেই বোতল মামার সেকেন্ড লেকচার শুরু। 'ওরা পৃথিবীর কক্ষপথে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের বিজ্ঞানীরা টের পাবে। কিন্তু তখন কিছুই করার থাকবে না। এমনকি আমিও..। না আমি হয়তো একটা কিছু করতে পারবো।

কক্ষপথ থেকে সোজা পুরো আকাশ দখল করে বসবে। পৃথিবীর যতো মেঘ আছে সবগুলোকে নিজেদের মতো যন্ত্র বানিয়ে দেবে। তারপর মেঘের মতো পুরো আকাশ ছেয়ে যাবে এলিয়েনে। ' মামা একটু বিরতি নিলেন। চায়ে আবার চুমুক।

পায়েল মহাবিরক্ত। এমন টানটান উত্তেজনার সময় মামার চায়ের কথা মনে থাকে কী করে! বোতল মামা আবার শুরু করলেন, 'তারপর সোজা হিসাব। মেঘ থেকে কী হয়? বৃষ্টি, হ্যাঁ ওরা বৃষ্টির মতো টুপটাপ ঝরে পড়বে মাটিতে, ছাদে, তোর আমার গায়ে। ' 'মামা তারপর কী হবে?'। 'তারপর সব শেষ।

পুরো পৃথিবীটাকে একটা ইয়া বড় পানির ফোঁটা বানিয়ে সোজা নিয়ে যাবে অন্য কোনো গ্যালাক্সিতে। মানুষ, গাছ-পাহাড় সবই তখন পানির ফোঁটার মতো টলমল করবে। ' মামা আবার ঝিম মারা শুরু করলেন। কতোক্ষণ পর এই ধ্যান ভঙ্গ হবে তা কেউ বলতে পারবে না। পায়েল পড়েছে মহাচিন্তায়।

এলিয়েন আসলে তার সাধের জাম্বো জেটটা পানি হয়ে যাবে ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে। পায়েল আসলে মামার কথা এখনো ঠিকমতো বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই খেলনা নিয়েই তার চিন্তা। জাম্বো জেটটা মামাই তাকে বানিয়ে দিয়েছে। ছোট সাইজের জেট বিমানটা রিমোট কন্ট্রোলার দিয়ে চালানো যায়।

ব্যাটারি তেল কিছুই লাগে না। শুধু কয়েক চামচ পানি দিলেই হলো। তাতেই নাকি অনেক শক্তি লুকানো আছে। যাই থাকুক, বিমান আকাশে উড়লেই পায়েল খুশি। মামার ঝিম মারা দেখতে ভালো লাগছে না।

আবার ভিডিও গেমসও খেলতে ইচ্ছে করছে না। এলিয়েন কি সত্যিই আসছে! মামাতো এমনি এমনি কিছু বলে না! যদি সত্যি হয়ে যায়! তাহলে কী হবে তা ভাবার আগেই পায়েলের মা চি্ত্কার ছুড়লেন, 'এ্যাই! খেতে আয় তোরা। ' (আসছে...বাকি অংশ)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।