নিজের জাতি আর মানুষের কল্যাণেই শান্তি পাই।
আন্তর্জাতিক মানের একটি ধারাবাহিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, বিগত প্রায় এক বছরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতি জনমত ঝুঁকেছে। আর তাই আগামীতে জাতীয় নির্বাচনে জয়ের জন্য দলটি ভাল অবস্থানে রয়েছে। সর্বশেষ গত জুলাইতে চালানো জনমত জরিপে দেখা গেছে. বিএনপি ৪৩ শতাংশ জন সমর্থন পেয়েছে। যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
বিএনপি'র পক্ষে এ জনমত সমর্থন গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে দ্বিগুণ। ঐ সময়ে বিএনপির পক্ষে জনমতের সমর্থন ছিলো মাত্র ২০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি ও ব্রিটিশ দাতা সংস্থা ইউকেএইড'র অর্থায়নে জরিপকারী প্রতিষ্ঠান এসি নিয়েলসন গত প্রায় এক বছরে চার ধাপে এ জরিপটি পরিচালনা করেছে। আর এ জরিপটি বাস্তবায়নে কাজ করেছে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।
জরিপের ফল প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলো।
এর আগে জরিপ শেষে শুধু চারটি রাজনৈতিক দলের কাছেই ফল প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে ২৪০০ থেকে ২৫০০ লোকের সরাসরি সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে এ জরিপ চালানো হয়।
জরিপে উত্তরদাতাদের অন্যতম একটি প্রশ্ন করা হয়েছে তা হলো, যদি আজকে নির্বাচন হয় তাহলে কোন দলকে ভোট দেবেন? এ ছাড়াও সম্প্রতিক ইস্যু যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও শাহবাগ আন্দোলনের বিষয়েও তাদের প্রশ্ন করা হয়। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, জরিপে তারা সবচেয়ে আধুনিক পরিসংখ্যানভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এ কারণে এই জরিপে যথাযথভাবে বাংলাদেশি ভোটারদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে।
গত বছরের নভেম্বর, চলতি বছরের জানুয়ারি, এপ্রিল ও জুলাইয়ে এ জরিপ হয়।
তবে জুলাইয়ে তাদের সর্বশেষ জনমত জরিপ বিএনপির জন্য সুসংবাদের কারণ হলেও ঐ জরিপে দেখা গেছে, ১৯ শতাংশ ভোটার কারো পক্ষে তাদের সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত এখনো নেননি। তাই এখনো আওয়ামী লীগের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। গত জানুয়ারিতে চালানো জনমত জরিপে দেখা যায়, বিএনপি'র জন সমর্থন ২০ শতাংশ থেকে ৩২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছিলো। আর এপ্রিলে বিএনপিকে ভোট দিতে চায় এমন জনমতের হার দাঁড়ায় ৩৮ শতাংশে।
তবে জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি জন সমর্থন প্রায় অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। শুধু জুলাইয়ে সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৩২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
জরিপের ফলে দেখা যায়, প্রথমবার ভোট দেবে এমন ২২ বছর বা এর কম বয়সীদের মধ্যে বিএনপির জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। গত জুলাইয়ের জনমত জরিপে দেখা যায়, ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সীদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ বিএনপির প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছে। যেখানে আওয়ামী লীগের প্রতি ঐ বয়েসীদের সমর্থন রয়েছে ২৯ শতাংশের।
প্রথমবার দিচ্ছে এ রকম ভোটারের সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আগামী নির্বাচনে এসব ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ।
২০০৬ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো তখন এসব ভোটারের বয়স ছিলো ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। বিএনপির মেয়াদের বিষয়ে তাদের ধারণা কম। শুধু যে নতুন ভোটারদের সমর্থনের জন্য বিএনপির জনপ্রিয়তা বেড়েছে তা নয় অনেক আওয়ামী লীগের সমর্থকও বিএনপিকে সমর্থন করেছে।
২০১২ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত করা চারটি জরিপে দেখা যায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ভোট দিয়েছে জরিপে অংশ নেয়া এমন লোকদের প্রায় অর্ধেকই বলেছে তারা আগামীতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চান না। যেখানে ২০০৮ সালে বিএনপিকে ভোট দেয়া ৯০ শতাংশ ভোটারই বলেছে তারা বিএনপিকে সমর্থন করা অব্যাহত রাখবেন। ২০১২ সালের নভেম্বরে এ সংখ্যা ছিলো ৭০ শতাংশ।
এছাড়া ১৯৯১ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত হওয়া চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেসব আসনে বড় জয় পেয়েছে সেখানেও বিএনপির ভালো জনপ্রিয়তা পরিলক্ষিত হয়েছে এই জরিপে। গত চারটি নির্বাচনে যে ৪১টি আসনে আওয়ামী লীগ ৭ থেকে ১৪ শতাংশ বেশি ভোটে জয় পেয়েছে, সেসব আসনে বিএনপির জনপ্রিয়তা এখন আওয়ামী লীগের থেকে ১৭ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, ৭২টি আসন যা কিনা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এসব আসনে ১৪ শতাংশের বেশি ভোটে দলটি বিগত নির্বাচনগুলোতে জয়লাভ করেছিলো। এখন এসব আসনে বিএনপি'র জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগ থেকে ২ শতাংশের সামান্য বেশি।
জুলাইয়ের জরিপে দেখা যায়, শহরের (২৫ শতাংশ) তুলনায় গ্রামে (৩৪ শতাংশ) আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেশি। অন্যদিকে, শহর ও গ্রামে দু ক্ষেত্রেই বিএনপির জনপ্রিয়তা বেশি। গ্রামে ৪২ শতাংশ ও শহরে ৪৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে বিএনপির দিকে।
জরিপে বিএনপির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির বিষয়ে কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি। যদিও গত নয় মাসে ঘটে যাওয়া যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়, রাজনৈতিক সহিংসতা, শাহবাগ আন্দোলন, ব্লগারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এর পেছনে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।