আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিভাবে ভোলাবে যদি বিষূবীয় রেখায় মেরু জল কাঁদে !

পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি

অনেকটা পথ হেঁটে এসে বসি তোমার পাশে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে ব্যথা হয়ে গিয়েছে , জানো ? অনেকটা দারিদ্রে পুড়ে পুড়ে তোমাকে ছুঁয়ে দেই। দৈন্যের সবটুকু উলঙ্গ নখর কাটলেও বেড়ে ওঠে , মানো ? ছোট্ট একটা বাড়ি ছিলো । মাটির ভিটাটুকু একটা জোয়ান কামলা সমান উঁচু । খুব বন্যা হত যে ! বারান্দায় যেতে ৭ টি উঁচু উঁচু সিড়ি বেয়ে উঠতে হতো । আমি পারতাম না ।

খুব শুকনা পাতলা , দুর্বল একটা বাচ্চা ছিলাম। পড়ে যেতাম প্রায়ই । খুব ব্যথা পেতাম । কিন্তু , বড়রা কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসতো না । এ রকম করে ব্যথা পেয়ে পেয়েই নাকি জীবনে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট শক্ত হবো ।

তাই , মাত্র সাড়ে তিন বছরের দেহটা ছিলে কেটে শক্ত হলো । একটা বিরাট ইস্কুল ছিলো । সেখানে বড় বড় পরিবারের দারুন ক্ষমতাধর ছেলেরা পড়তে আসতো । সেটা একটা চুপ চাপ , ভীষন কোমল শিশুর জায়গা ছিলো না, যে কি না দেখতে অন্যদের মত নয় । যাকে দেখলেই মনে হয় , এটা কি ? আমাদের কেউ তো নয় ।

যাকে আমরা চিনি না ,জানি না , তাকে আমরা ভয় পাই । আক্রমন করে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাই । আমি তাই নিশ্চিহ্নই হয়ে গেলাম ,বারংবার আক্রমনে। তবে একেবারে হারিয়ে যাওয়ার আগে সাত সিঁড়ি সমান ভিটার মত শক্ত হয়ে ফেরত আসবো , এই ঘৃণা টুকু নিয়ে হারিয়ে গেলাম। একটা মাত্র টাকা ছিলো ।

আট আনা যেতে । আট আনা আসতে । এর বাইরে খাতা ,পেনসিল, বই , জামা ,জুতো দরকার হলে ৩২ পৃষ্ঠার " কেন ইহা এখন কিনিতে হইবে " ধরনের কারন দর্শাইতে হইতো । লজ্জা লাগত ,এই ভাবে চাইতে । তাই চাওয়াই বন্ধ করে দিলাম।

অথচ আমরা মনে হয় অতটা দীন ছিলাম না । আমি কি করে জানবো , গ্রামে ১৩ জনের আর শহরে শ্বশুর বাড়ির ৫ জন , মোট ২২ জনের খরচ চলে একজনের আয়ের উপরে? আমি শুধু জানতাম, আমার চাইতে ভালো লাগে না । আমি অন্যের হাত এর দিকে হাত বাড়ানো ভুলে গেলাম। একটা মাত্র হৃদয় ছিলো । খুব বেশি কিছু চাইতো না সে ।

স্বপ্ন দেখতো না নিজেকে নিয়ে স্বার্থপরের মত । শুধু চাইতো , একটা মাত্র বাক্য - " তুমি আমার গর্ব , আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি"। শোনার জন্য পাগলটা কি না করলো । অর্জনের পরে অর্জন । পার্থিব মাপকাঠিতে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য যা কিছু মানুষ পেতে চায় , সব - সব কিছুই ।

হারিয়ে গেলো , মুখ থুবড়ে পড়লো অনেক দামী স্বপ্ন গুলো । বস্তুজগতের সাফল্যে হারিয়ে গেলো আত্মা । একটা মাত্র নির্দেশ ছিলো । " শেরাটনের মার্বেল পাথরে আর কপোতাক্ষের কাদায় তোমাকে যেন সমান স্বচ্ছন্দ দেখি"। পৃথিবীর যে কোন দেশে , পাঁচ তারা হোটেলে , কুড়িলের বস্তিতে , পদ্মার কাশফুলে, চট্টগ্রামের পাহাড়ী বন্যতায় নিজেকে মানিয়ে নিলাম।

দেশের প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে এসে মিশে গেলাম নিভৃত পল্লীর ভাঙাচোরা কুঁড়ে ঘরে । অথচ এদের কেউ আমাকে চেনে না। একটা মাত্র লক্ষ্য ছিলো । তিন বেলা পেটের ভাত জোগাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। করেছি ।

পকেটে মাত্র পাঁচ টাকা নিয়ে মাসের পর মাস ঘুরেছি। পাঁচ বেড়ে পঞ্চাশ হাজার হয়েছে । অথচ আমার কোন বিকার নেই । ততদিনে যাকে পাঁচশত দিতে পারলে বেঁচে যেত , সে ফিরে গেছে এই নোংরা , একলা , ক্ষমাহীন দুনিয়া ছেড়ে । আমি টাকার বান্ডিল আর ডাক্তারী সার্টিফিকেট খানা লাল রেশমে মুড়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে এসেছি কবরখানায়।

তুমি আমাকে কি দিয়ে ভোলাবে? আমার বিষূবীয় দহনে মেরুর বরফ কাঁদে । তুমি আমাকে ভোলানোর চেষ্টা কোরো না। এ মানবী বড় বেশি চেনে মায়াজালের বিষাক্ত সূতো! তুমি আমাকে কি দিতে পারো , নিখাঁদ প্রেম ছাড়া ? আমি কেন চাইবো অন্য কিছু বেহিসেবী ভালোবাসা ছাড়া ? অনেকটা পথ হেটে এসে তোমার হাতে হাত রেখেছি অনেক গুলো রাত কেঁদে এসে তোমার ঠোঁটে হাসি চেয়েছি অনেক দৈন্য সয়ে এসে তোমার হৃদয়ে প্রাচুর্য্য খুঁজেছি অনেক জোনাক বুকে নিয়ে তোমাকে আমার সূর্য জেনেছি বিশ্বাস দাও ,প্রিয় , আমি বিশ্ব দেব!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.