জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।
সেদিন বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ইউনি লাইব্রেরিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বই পড়লাম ঘন্টাখানেক। প্রথমে সাইকোলজিতে ছিলাম, তারপরে রিলিজনে গেলাম। ইসলামের উপর বেশ কয়েকটা বই। ওগুলোই পড়ছিলাম।
তারিক রামাদান, ক্যারেন আর্মস্ট্রং (ক্যাথলিক ব্রিটিশ), আর সাম ফয়সাল নামের একজনের বই--সবগুলোর নাম লিখে নিলাম। কিনার প্রচন্ড লোভ হলো, কিন্তু পকেট ফুটো। বইগুলো কিনতে লোভ হলো, কারণ বইগুলো ইসলামের পূর্নজাগরন নিয়ে। ওই ফয়সালের নামের ভদ্রলোকের বইটাই ধরুন, আমেরিকার ইতিহাসের কথা বলছিল। আমি খুবই কম জানি আমেরিকার ইতিহাস নিয়ে, বিস্তারিত জানতে আমাকে অতি অবশ্যই বইটা পড়তে হবে।
তিনি বলছিলেন আমেরকিরার কথা যেখানে আরও দুইশ বছর আগেও ক্যাথলিকরা ঘৃণ্য ছিল। অথচ এখন? ওরা এখন বেশ প্রতিষ্ঠিত অবস্থায়, এবং আমেরিকার ক্যাথলিকরা ভ্যাটিকানের সিদ্ধান্তগুলো প্রভাবিত করছে। আমাকে, অন্যান্য ডানপন্থীদের প্রায়েই খোঁচা মেরে বলা হয়, পশ্চিমে বসে ইসলামের কথা কেন? আমি যেই পূনর্জাগরণ দেখি, সেখানে এটার সম্ভবনাই দেখি খুব করি--পশ্চিমে বসে ইসলামকে পূর্ণভাবে বুঝে, তারপরে পূর্বের দেশগুলোতে ইসলামকে প্রভাবিত করা। মানুষের চিন্তাভাবনা, চেতনাকে প্রভাবিত করা।
ভালো লাগছিল বইটা পড়ে, কারণ প্রায়েই মনে হয়, ইটস গোয়িং নোহোয়ার, এই পাথর নড়ার নয়।
কিন্তু যখন সামগ্রিক দৃষ্টিপাত হয়, তখন বড় আশা জাগে। আশা জেগেছিল অনেক কুমু আপুর সাথে ছয় ঘন্টা আড্ডা মেরে। আশা জাগে যখন ব্লগে ব্লগে ঘুরে বেড়াই তখন! আমি নিকষ কালো অন্ধকার থেকে আশার আলো খুঁজে পাই আর মুচকি হাসি। জেনারেশন, ফ্যাশন, ট্রেন্ড একটা বড় ব্যাপার। বিশেষত যখন জ্ঞান চর্চা আর মিডিয়ার দৌড়াত্ব এত বেশি, শুধু সরাসরি ইনফ্লুয়েন্স ছাড়াও ইন ডাইরেক্ট ইনফ্লুয়েন্সের ক্ষেত্র প্রচুর।
এখন যাদের বয়স ৩০/৪০ তাদের দৌঁড়াত্ব মিইয়ে আসবেই। পশ্চিমেও ২০-৩০ বছরের মুসলিমরাই ইসলামের ব্যাপারে বেশি সচেতন, ইসলাম সম্পর্কে হীনমন্যতা নেই, যা আগের জেনারেশনে ছিল। মুসলিমদের এখন পুরো নিজেস্ব একটা ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, একটা সমান্তরাল বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে... ক্ষেত্রে খুজতে খুজতে হয়রান হয়ে একসময় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হয় না। কিংবা, অন্য কারো ঘাড়ে পা রেখে উপরে উঠতে হয় না।
বাংলাদেশেও সেই স্রোতের ছোঁয়া লাগছে।
আমি আমার পরিবার, বন্ধুমহল সব জায়গায় তাই দেখি। কারণ, বিশ্বের রিসেন্ট ইভেন্টস অবশ্যই। আমি সব সময় হিজাবকে একেবারে আল্লাহর নির্দেশ বলে পড়েছি বলে মনে পড়ে না, ছোটবেলায় কখনও না কখনও এমন সময় ছিল যখন ভালো লাগতো না। আমাকে সবচেয়ে বেশি মটিভেইট করতো তারাই যারা হিজাব নিয়ে টিটকারী করতো, আমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরতাম হিজাব। জবাব দেয়ার জন্য পড়াশোনা শুরু করা... এখন মুসলিমদের সেটাই হচ্ছে।
কোন কারণ ছাড়াই প্রথম রাজাকার গালি খেলে, কিংবা মৌলবাদী ধর্মান্ধ গালি খেলে সেল্ফ ডিফেন্স ম্যাকানিজম শুরু হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় নিজেকে জানার প্রক্রিয়া। আগের জেনারেশন এত ডেসপারেইট যে না বুঝেই এই প্রক্রিয়া শুরু করিয়ে দেয়। ব্লগে আসার পরে ইসলাম আর ইতিহাস নিয়ে আমার পড়াশোনা অন্তত: দশ গুণ বেড়েছে। ৯/১১ এর পরে প্রথম গালি খেয়ে কত মুসলিম যে কুরআন পড়া ধরেছে! আমি যদি আমার স্কুলগুলোতে না যেতাম, যেই টিচার, ছাত্রীদের মুখোমুখি হয়েছি, তাদের না দেখতাম, তাহলে হয়তো কখনই নিজের বিশ্বাসকে এতটা ভালোবাসতে পারতাম না, এপ্রিশিয়েট করতে পারতাম না।
হরাইজনটা এক চিলতে থাকতো। তাই, পথে কাটা বিছানো মানুষগুলোর প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞতা, চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ না করলে যতটা পথ এসেছি, ততটা কখনও আসতে পারতাম না।
আমার ছাত্রী (যার বাবা মা ভীষণ প্রগতিশীল চাইনীজ মুসলিম, সারা বাসায় একটাও কুরআন নেই, অথচ ও কুরআন পড়তে আগ্রহী হচ্ছে, ক্যাথলিক স্কুলে গিয়ে বেশ কিছু ডিসক্রিমিনেশনের মুখোমুখি হয়েছে তাই) সাথে বসে প্রায়েই বিশ্বের ইতিহাস, প্রেডিকশন আর থিওরীগুলো ডিকনস্ট্রাক্ট করি। আমি সব দেখে খুব নিশ্চিত হই, মানুষ সত্যিকারের সচেতন হচ্ছে। মুসলিমদের মধ্যেই ইসলামের ব্যাপারে ধারণার ডাইভার্সিটি বাড়ছে, ম্যাচুয়ারিটি বাড়ছে।
ডাইভার্সিটি মানেই ডিভিশন নয়, ডিভিয়েশন নয়, কারণ ডাইভার্সিটি বাড়ার সাথে সাথে ম্যাচুয়ারিটি বাড়ছে, অ্যাপ্রিসিয়েশন বাড়ছে। এখন যেই জেনারেশনের দৌড়াত্ব, তাদের সংখ্যা কমবে তো অতি অবশ্যই, পরের জেনারেশন আসলে এখনকার জেনারেশনের ধ্যান ধারণার পঁচে যাওয়া অংশগুলো গ্রহন করবে না, ইতিহাসে সব সময় সেই মানুষগুলো ছিল, যারা আগের জেনারেশনের পঁচে যাওয়া চিন্তাভাবনা আলাদা করতে জানতো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।