সিল্কের শার্ট-প্যান্টের ভেতর গুঁজে, যত্ন করে চুল আঁচড়ে সকাল সকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন আবদুল আউয়াল। মুঠোফোনটি বেজেই চলেছে, স্ত্রী আনিলা আক্তার ওপ্রান্তে। আনিলার বাবা চার বছর ধরে কারাগারে। রায়ে খালাস পেয়েছেন। এখন কেবল মুক্তির অপেক্ষা।
হরতালে সহিংসতা এড়াতে গোটা রাজধানীতে জনজীবন স্থবির। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এর ব্যতিক্রম। কারাগারের বাইরে আজ অজস্র মানুষের মিছিল। এঁদের স্বজনেরা বিডিআর জওয়ান ছিলেন। কেউ কেউ খালাস পেয়েছেন—উজ্জ্বল মুখে এঁদের স্বজনেরা বাইরে অপেক্ষা করছেন।
কিন্তু ফাঁসির রায় হয়েছে যেসব জওয়ানের, তাঁদের স্বজনেরা শোকের ভার যেন আর বইতে পারছেন না। সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে অনেকে এড়িয়ে গেছেন। কেউ কেউ কান্না চেপে কথা বলতে শুরু করেছিলেন, শেষ করতে পারেননি। এঁদের একজন আবুল কালাম। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তাঁর সবচেয়ে আদরের ছোট ভাইটির ফাঁসির আদেশ হয়েছে।
প্রথম আলো ডটকমকে তিনি বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটায় রিয়ন (বিডিআর সৈনিক) মাকে ফোন করেছিলে। বলেছিল ওর সাতক্ষীরায় বদলি হয়েছে। গেট পাসটা নিয়ে সাড়ে ১০টার মধ্যে রংপুরে আমাদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবে। সেই রিয়নের ফাঁসির রায় হলো। ’
আবুল কালাম গতকাল রাতেই ট্রেনে উঠেছেন।
খুঁজছেন ভালো ব্যারিস্টার। তাঁর বিশ্বাস ভাই নির্দোষ, একটু চেষ্টা করলেই হয়তো ভাইটাকে বাঁচানো যাবে।
ফাঁসির রায় হয়েছে আয়েশা আক্তারের স্বামীরও। তিনি সাত দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন কি না জানেন না। প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘পাঁচ বছর ১১ বছর আর পাঁচ বছর বয়সী দুই ছেলেকে নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি।
উকিল ধরব সে টাকা কোথায়? কোথায় যাব, কার কাছে যাব? কে করবে সাহায্য?’ আয়েশারও দাবি তাঁর স্বামী নির্দোষ।
ভাইয়ের ১০ বছরের জেল হলেও বেশ ফুরফুরে দেখাচ্ছিল গোপালগঞ্জের মোস্তাফিজুর রহমানকে। তিনি বলছিলেন, ‘ভাইকে আড়ালে ডাকিও জিজ্ঞেস করিছিলাম। অন্যায় করলে শাস্তি পাতি হবে, নইলে কি আর কিছু হবি। আমি কনফিডেন্স, আমার ভাই ছাড়া পাবে ইনশাআল্লাহ।
’
২৫ ফেব্রুয়ারি নৃশংসভাবে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের মৃত্যুর পর ওলটপালট হয়ে গেছে বহু মানুষের জীবন। সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার ভুগছে, ভুগছে সৈনিক পরিবারগুলোও। গতকাল মঙ্গলবারের রায়ে কারও জন্য বয়ে এনেছে সুখের বার্তা, কারও জন্য একরাশ হতাশা আর অনিশ্চয়তা।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।