সত্যবাদী ভদ্রলোক তার বিশাল বপু নিয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে দৌড়চ্ছিলেন। মীর সাহেব, care এ চাকরীর সুবাদে লাইবেরিয়াতে বসবাস তার। প্রতিদিন সকালে খাটো একটি প্যান্ট পড়ে আমাদের বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে দৌড়ে যান তিনি। হাত তুলে জানান দিলেন, আমি তার দৃষ্টি গোচর হয়েছি। ভদ্রলোক আমার চাচার বয়সী, কিন্তু আমাকে ডাকেন ভাই।
আমিও ডাকি তাই। তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় দৃষ্টির বাইরে চলে গেলেন। ৫০ উর্ধ একজন মানুষ এইভাবে দৌড়ান ভাবতে অবাক লাগে। আমি মধ্যবিত্ত এবং আরাম প্রিয়। অধিক অর্থ উপার্জনের লোভে নিজেকে নির্বাসন দিয়েছি এক বছরের জন্যে।
কোনমতে নাক মুখ গুজে পড়ে থাকি। মীর ভাই উচ্চ বিত্তের কোটায় পরবেন। তার পরিবার আটলান্টায় থাকে। নিজের বাড়ি, দুটো ছেলে। আমাদের বাসায় এলে বড় ছেলের গল্পে মশগুল থাকেন।
চোখ দুটো ভেজা থাকে তখন।
ছেলেটার নাম রাহিন। বয়সটা জানা হয়নি মীর ভাইয়ের কাছ থেকে। তবে আমার আন্দাজ মতে ১০-১১ হবে। রাহিনের ফুল গাছের সখ অনেক।
মীর ভাই যখন লাইবেরিয়া আসছিলেন, রাহিনের মন ভালো করবার জন্যে একটা নার্সারি থেকে দুটো চারা আনতে যান। রাহিনের পছন্দের ফুল, ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায় নাকি তার পাপড়ি। রাহিন বিষণ্ণ বদনে বাবার হাত ধরে ঘুরছিল চারগাছটার খোঁজে। চারাগাছ পাবার উত্তেজনাও যেন ফিকে হয়ে আসছে; বাবা চলে যাবে।
-তোমাকে লাইবেরিয়াতে কেন চাকরী করতে যেতে হবে বাবা?ম্রিদু কণ্ঠে রাহিনের প্রশ্ন।
মীর ভাই হেসে বলেন, তুমি একটা চাকরী যোগাড় করে দাও, আমি যাবো না।
-সত্যি?
-হ্যা, একদম পাক্কা!
একটু যেন হাসি খেলে গেল রাহিনের ঠোঁটে। ছুটোছুটি করতে লাগলো নার্সারির ভেতরটায়। মীর ভাই হাসলেন, ছেলেটা ভারী মায়া নিয়ে জন্মেছে।
-তোমার ছেলে আমাকে একটা অফার দিয়েছে।
স্মিত হেসে মীর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন নার্সারির মালিক।
-সেটা কেমন?
-আমার এখানে একটা job opening এর নোটিশ ছিল, তোমার হয়ে তোমার ছেলে apply করে গিয়েছে।
মীর ভাই নিস্পলক তাকালেন রাহিনের দিকে।
-কি করবেন নাকি নার্সারিতে চাকরী, ভালো মাইনে দেব। হোহোহোহো!
চাকরী যোগাড় করেছে বটে রাহিন।
মুখে তার বিজয়ের হাসি। ।
মীর ভাই, প্রতিদিন দুই বেলা দৌড়ান। রাহিনকে দেয়া একদম পাক্কা কথা ভেঙ্গে তিনি এই দূরদেশে চলে এসেছেন। তবে রাহিন আসবার সময় একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছিল,
-লাইবেরিয়া থেকে six pack নিয়ে ফিরতে হবে বাবা!
এই জগতে সবই সম্ভব.........তবে সবার জন্যে নয়......কারও কারও জন্যে।
উৎসর্গঃ সেবন্তিকে, যে আমার ব্যাগের ভেতর বসে ছিল আমার সাথে লাইবেরিয়া আসার জন্যে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।