একজন আমি, একজন হারিয়ে যাওয়া এবং একজন দূর প্রবাসী
বন্যার্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে উদারভাবে এগিয়ে আসার জন্য শ্রেণী-পেশানির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আসুন, মানবকল্যাণ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা হাতে হাত মিলিয়ে বন্যার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। আমাদের যা কিছু আছে তা দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করি। ’
দেশে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা গতকাল রোববার রাত নয়টায় বেতার ও টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জাতির উদ্দেশে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দেশের সর্বত্র আজ বন্যার ঘনঘটা।
দেশের ৩৮টি জেলা আজ বন্যাকবলিত। ৮০ লাখ মানুষ আজ বন্যার্ত। এই বিশাল ও অসহায় মানুষের বিপদের মুহুর্তে আমাদের ঘরে বসে থাকার কোনো অবকাশ নেই। দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে দলমতনির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। যার যা সামর্থয আছে, তা নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে।
স্বতঃস্কুর্তভাবে ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিতে হবে। তা নাহলে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন অসম্পুর্ণ থেকে যাবে। ’ তিনি বলেন, বন্যার মতো যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সুযোগ করে দেয়। এখন সে রকম সুযোগ এসেছে।
ড. ফখরুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘অতীতেও দুর্যোগের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার জনগণ দুর্গতদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এবারও সকলে তা করবে। ’ তিনি বলেন, যারা ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিতে চায় তারা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণভান্ডারে এবং স্থানীয় পর্যায়ে জেলা কমিটিগুলোর কাছে নগদ টাকা ও ত্রাণসামগ্রী জমা দিতে পারে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকান্ডকে সরকার স্বাগত জানাবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশ-বিদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের স্বতঃস্কুর্ত সহায়তাও আমরা সাদরে গ্রহণ করব। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন, বিভিন্ন খাতের অফিসার-জনগণের সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারব।
’ তিনি বলেন, বন্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। তিনি এ দুর্যোগ-মুহুর্তে পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দিতে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ও সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এবং একই সঙ্গে সীমান্তের ওপার থেকে বন্যার পানির ঢল যুক্ত হওয়ায় প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন জনপদ। এ পর্যন্ত দেশব্যাপী ৭৫টি বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত ৩৮টি জেলা ও ২৩৪টি উপজেলা ১৬০৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা বন্যাকবলিত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২০-এ। প্রায় ছয় লাখ ঘরবাড়ি আংশিক ও প্রায় ৯০ হাজার ঘরবাড়ি সম্পুর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে। ছয় লাখ একর জমির ফসল সম্পুর্ণ ও সমপরিমাণ জমির ফসল আংশিকভাবে নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, বন্যা মোকাবিলা ও দুর্গতদের সহায়তায় সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিষদ এবং আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি, বেসরকারি ও এনজিও খাতে অংশগ্রহণে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটিগুলো কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি এলাকায় ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন। বন্যাকবলিত প্রতিটি জেলায় ত্রাণ তদারকির সার্বিক দায়িত্ব উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে আজই (রোববার) বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের পাশাপাশি তারা ত্রাণ তৎপরতায় অংশগ্রহণের জন্য সর্বস্তরের জনগণকে উদ্বুদ্ধও করবেন।
ড. ফখরুদ্দীন বলেন, সরকার বন্যা মোকাবিলার প্রতিটি ধাপে সুসমন্বিত পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারি উদ্যোগে বন্যাকবলিত মানুষকে এক হাজার ১৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, বস্ত্র ও নগদ সহায়তার পাশাপাশি ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ অনুদানও গ্রহণ করা হচ্ছে। বন্যার্তদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসাদল গঠন করে চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফখরুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘এ দেশের মানুষের রয়েছে অদম্য চেতনা ও দৃঢ় মনোবল। সাধারণ জনগণ দরিদ্র হলেও সাহসী ও চরম ধৈর্যশীল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসলীলা কাটিয়ে উঠে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করে তারা বারবার বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা অর্জন করেছে। এই অদম্য চেতনা বিশ্বে বিরল। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, অতীতের মতো আমরা ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে এবারকার দুর্যোগময় পরিস্থিতিও সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব।
’
সুত্রঃপ্রথম আলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।