আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুশদীর লাভ ক্ষতি

আমি কাক নই, আমি মানুষ...

ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং বৃটিশ আশীর্বাদপুষ্ট কুখ্যাত লেখক সালমান রুশদীকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করার মাধ্যমে বৃটেন তার ইসলাম বিদ্বেষী চরিত্রের উপযুক্ত প্রমাণ বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে। ইতিহাস এবং বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, যেখানেই ইসলামকে কটা কিংবা হেয় করার অপপ্রয়াস চলে সেখানেই এরা উপস্থিত হয় অকৃত্রিম ও দরদী বন্ধুর ভূমিকায়। অনেক আগেই বিপথগামী মুসলিম সালমান রুশদী আপন চিত্ত বিভ্রমের শিকার হয় এবং ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স কে আপত্তিকর ব্যঙ্গ করে লেখা তার বিশ্বনিন্দিত গ্রন্থ ‘দি স্যাটানিক ভার্সেস’ এর জন্য অজস্র ঘৃণা ও ধিক্কার অর্জন করে। ঐ গ্রন্থে রুশদী লিখেছে, মুসলমানদের কুরআন শয়তানের ব্যাখ্যায় পরিপূর্ণ। বিশ্বনবী (স ছাড়াও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম ও স্ত্রীদেরকে রুচিহীন ভাষায় সমালোচনা করা হয় ঐ গ্রন্থে।

তার জীবনের নিরাপত্তার সঙ্গত হুমকি সহ কোন রকমে প্রাণ নিয়ে পালিয়েও বেড়িয়েছেন দীর্ঘ দিন। সে সময় তাকে সযতেœ আশ্রয় দিয়েছিল বৃটেনের মতো রাষ্ট্রীয় শক্তি। শুধু আশ্রয়ই নয়, বলতে হবে তাকে সযতেœ লালনই করছিল এতদিন। বৃটেন নিশ্চয়ই মনে করেছে দুর্ভাগা রুশদী ইসলামের ব্যাপারে বিকৃত ব্যাখ্যা সম্বলিত ও বিপজ্জনক যে রচনা বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছে তার উপযুক্ত পুরস্কার শুধুমাত্র রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে হয় না। সুতরাং আজ বিশ্বমুসলমানদের এক নাজুক প্রোপটে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে নাইট উপাধি প্রদানের মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে তাকে আরেকবার উসকে দেয়া হলো।

গত বছর খৃষ্টান ধর্মীয় গুরু পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতাপ্রসূত ও দায়িত্বহীন এক মন্তব্য বিশ্বব্যাপী সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় তুলেছিল। ইসলাম ও ইসলামের কোটি কোটি অনুসারীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে ঐ মন্তব্য মারাত্মক আঘাত করে। বেনেডিক্টের সদর দপ্তর ভ্যাটিক্যান থেকে এবং তিনি নিজেও এ মন্তব্যের বিষয়ে শর্ত সাপেে দু:খ প্রকাশ করলেও লণীয় বিষয় ছিল যে, উক্ত মন্তব্য কোন অবস্থাতেই প্রত্যাহার করা হয়নি এবং তা পরিকল্পিতভাবেই করা হয়নি। ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নানারূপ ষড়যন্ত্রের পূর্বাপর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলে একটি সত্য ফুটে উঠে যে, পোপের মন্তব্য কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। তবু পোপের মতো বিশ্ববরেণ্য ধর্ম গুরুর মুখে ইসলাম সম্পর্কে অনাকাক্সিত ও ভারসাম্যহীন উক্তিতে বিশ্ববাসী চরম আহত হওয়ার পাশাপাশি বিষ্মিতও হয়েছিল।

ইসলাম অবমাননার এ ধারা থেমে থাকেনি। ডেনমার্কে উপযূপুরি কয়েক দফায় মহানবী (স কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করা হয়েছে। সারা বিশ্বে ধিক্কারের বার্তা উচ্চারিত হলেও তারা ান্ত হয়নি। সুযোগ বুঝে বার বার এ অপচেষ্টা তারা চালিয়েই গেছে। তার কিছু দিন পর খোদ ঈদুল আযহার দিনে ভোর বেলায় ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি কার্যকর করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের মুসলমানদেরকে তাচ্ছিল্যভরে বুড়ো আঙ্গুল প্রদর্শন করে।

সাদ্দামকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাতে বাহ্যত কোন চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও কেন তড়িঘড়ি করে তাকে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহার দিনেই ফাঁসি দেয়া হলো তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে অনেকবার। বিশ্ববাসী একটু সচেতনতার সাথে ভেবে দেখলেই এর উত্তর খুঁজে পাবে। যে সময় মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ ও পবিত্র সম্মেলন ত্রে মক্কা আল মুকাররামায় ধর্মপ্রাণ লাখ লাখ মুসলমান হজ্জব্রত পরিপালনের উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছিলেন ঠিক সে সময় ইরাকের সাবেক শক্তিশালী শাসক সাদ্দামকে ফাঁসি দেয়ার মাধ্যমে আমেরিকা তার চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের জন্য কিছু বার্তা দিতে চেয়েছে। এরা গণতন্ত্রের উত্তপ্ত দাবীদার অথচ ইসলামের অবমাননার েেত্র তাদের গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা চেতনা মোটেও সক্রিয় নয়। বরং সে েেত্র তারা স্বৈরাচারী ও সাম্রাজ্যবাদীর নগ্ন চরিত্রের প্রকাশ ঘটাতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে।

এর কিছুদিন পরই সা¤প্রতিক কালের সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয় কুখ্যাত লেখক সালমান রুশদীকে বৃটেন কর্তৃক নাইট উপাধি প্রদান করা। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, চেচনিয়া, কসোভো, আরাকান, ঝিংজিয়াং সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানরা যখন নির্যাতন, নিপীড়নের করুণ শিকার, ঠিক তখনই বৃটেনের এই অদূরদর্শী ও অনৈতিক সিদ্ধান্ত মুসলমানদের জন্য সতর্কতামূলক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের তীব্র ােভ ও অসন্তোষের প্রোপটে বৃটেন জোরালো ভাষায় দাবী করছে যে, সাহিত্যে অবদানের জন্য সালমান রশদীকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। কর্তৃপ আরো দাবী করছে যে, সাহিত্যে অবদানের জন্য জনগণকে সম্মানিত করা তাদের মূল্যবোধেরই অঙ্গ। তথাকথিত সাহিত্যের দু:সাহসিক (!) অবদানের জন্য একজন বিপথগামী মুসলমানকে বৃটেন সম্মানিত করার মাধ্যমে সারাবিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানকে তারা অসম্মানের বার্তায় ভূষিত করলো সে বিষয়ে তাদের মূল্যবোধ কি জাগ্রত নয় ? এটা তাদের নিতান্তই দু:খজনক ও বিভ্রান্ত মূল্যবোধ! বিশ্ব গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে খ্যাত বৃটেনের মূল্যবোধ যদি হয় ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত উষ্কানী তাহলে তাকে মূল্যবোধের কলঙ্ক বললেই যথার্থ বলা হয়।

সালমান রুশদী পবিত্র আল কুরআনকে ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ অর্থাৎ শয়তানের ব্যাখ্যা (নাউযু বিল্লাহ) দাবী করে গ্রন্থ রচনা করে। এ দাবী মুসলমানদের মৌলিক ঈমানী বিশ্বাসে মারাত্মক আঘাত হানে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি অমার্হ অপরাধ। পবিত্র ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি অন্যায়ভাবে কটা করাই যে সাহিত্যের মৌলিক উপাদান তা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দিত হওয়াই গণতন্ত্রের দাবী ছিল। অথচ বৃটেন এর উল্টোটা করে তাদের ইসলাম বিদ্বেষী চরিত্রের আবারো উম্মোচন ঘটালো। এ কথা আজ দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, পোপের মন্তব্য, ডেনমার্কের কার্টুন, সাদ্দামের ফাঁসি, সালমান রুশদীর নাইট উপাধি লাভ এ সবই ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের পরিকল্পিত অবস্থানের অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা।

বৃটেনের দেয়া ‘নাইট’ খেতাব সালমান রুশদীকে ব্যাপকভাবে কোন সুখ্যাতি এনে দিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না বরং তার রচিত ‘দি স্যাটানিক ভার্সেস’ গ্রন্থের জন্য অতীত অখ্যাতি ও নিন্দার অবশিষ্ট পাওনাই তিনি অর্জন করছেন বর্তমান। গ্রন্থটির ধর্মীয় উষ্কানী ছাড়া এর সাহিত্যমূল্য বিচারেও বিদগ্ধজনেরা প্রশ্ন তুলেছেন ানেক আগেই। উপরন্তু তার এ উপাধি অর্জনের সাথে সাথে তার জীবনও নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লো। পত্রিকান্তরে জানতে পেরেছি, তেহরান ভিত্তিক ‘দ্য অর্গানাইজেশন টু কোমেমোরেট দ্য মার্টিয়ার্স অব দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড’ নামক একটি সংগঠন রুশদীর মাথার জন্য ৮০ হাজার পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করেছে। ইতোপূর্বে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা মরহুম আয়াতুল্লাহ খামেনী রুশদীর ‘দি স্যাটানিক ভার্সেস’ গ্রন্থ প্রকাশের সাথে সাথে তার মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেছিলেন।

পশ্চিমা বিশ্বের তথাকথিত উদারপন্থী অনেক দেশ থেকে সে সময় ইরানের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হলেও ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বরেণ্য রূপকার জনাব খামেনী তার অবস্থান থেকে এক বিন্দুও পিছু হটেননি। তিনি সব রকম চাপের মোকাবিলায় দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন, তীর একবার ছুঁড়া হয়ে গেলে তা আর ফেরানো সম্ভব হয় না। ইরানের সে ঘোষণা এখনো বলবৎ রয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃটেনের দেয়া নাইট উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বৃটেনকে তিনি ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন বলেই মনে হয়।

সারা বিশ্বের মুসলমানদের তীব্র অসন্তোষের প্রোপটে সালমান রুশদী তেমনটি করবে বলে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। আবার বৃটেনও তার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটবে বলে মনে হয় না। বৃটিশ সরকারের সাহিত্য দৃষ্টিভঙ্গির সুনিপুণ বিচারে রুশদী তাদের বিচণ সহচরের ভূমিকা পালনে সমর্থ হয়েছে। সুতরাং তার যথার্থ পুরস্কার না দিলে বৃটেনকে বিশ্বাসঘাতক ছাড়া আর কি বা বলা যেতে পারে ? কিন্তু কোটি কোটি মুসলমানের শক্তিশালী ও নিরেট ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মাধ্যমে তাদের প্তি করে তোলার বিপরীতে রুশদীর খ্যাতি সঞ্চিত হয়নি তেমন বেশি বরং তার ক্রমাগত নৈতিক অধ:পতনের গতিধারা আরো বেগবান হবে। মানুষের হৃদয়ে মর্মান্তিক বেদনা সৃষ্টি করে সাময়িক কিছু পুরস্কার হয়ত অর্জন করা যায় কিন্তু প্রকৃত আত্মসুখ কখনই অনুভব করা যায় না।

-------

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.