টেকি, পথচলার গল্প এবং একটু আধটু কবিতা লিখছি এখানে।
এই লেখার প্রথম প্রকাশ প্রজন্ম ফোরামে
সরাসরিই টপিকে চলে আসি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য নরনারী অংশ গ্রহন করেছেন,যুদ্ধ করেছেন। এক এক জনের ত্যাগ এক এক রকম। বিশেষ করে যদি মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান এর কথা বলি তাহলে অসংখ্য বীরাঙ্গনার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।
কিন্তু নারীরা কি শুধু বীরাঙ্গনা হয়েই ইতিহাসে থাকবেন ? না ঠিক তেমনটি নয়। নারীরাও সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন,রাইফেল হাতে পুরুষের পাশাপাশি যুদ্ধ করেছেন। হ্যাঁ আমি তারামন বিবির কথাই বলছি যিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘বীর প্রতীক’ উপাধি পেয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে। ডঃ ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম হলেন বীর প্রতীক প্রাপ্ত এরকম আর এক নারী মুক্তিযোদ্ধা। আমি তাদের বীরত্বের ইতিহাস আমার সাধ্যমত তুলে ধরার চেস্টা করছি।
আমার লেখায় আমি মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতর নারী-পুরুষ ভেদাভেদ করতে চাইনা। সাধারন মানুষের কাছে অজানা দুইজন মহান মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়েই আমার এই লেখা।
তারামন বিবিঃ
তারামন বিবি মুক্তিযুদ্ধের সময় তার গ্রাম শংকর মাধবপুরে(কুড়িগ্রাম জেলায়) ছিলেন। তারামন ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন (১১ নং সেক্টরের দ্বায়িত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। তিনি ‘বীর উত্তম’ প্রতীক প্রাপ্ত)।
১৯৭৩ সালে তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসীকতা ও বীরত্ব পূর্ণ অবদানের জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাঁকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মন সিংহের একজন গবেষক প্রথম তাঁকে খুঁজে বের করেন এবং নারী সংগঠন গুলো তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন খালেদা জিয়ার সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিক ভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তাঁর হাতে তুলে দেন।
মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধার উৎসাহে তারামন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুহিব হাবিলদার তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দ্বায়িত্বে ছিলেন। তিনিই তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন যখন তারামনে বয়স ছিলো মাত্র ১৩ কিংবা ১৪। কিন্তু পরবর্তিতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখানো শুরু করেন। তারামন রাইফেল ও স্টেনগান চালানো শিখেছিলেন।
একদিন দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারলেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন।
এরপর তারামন অনেক যুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অংশ নেন। তারামন কখনই নিজের জন্য ভাবেননি। অনেক বার তাদের ক্যাম্প পাকবাহিনী আক্রমন করেছে,তবে ভাগ্যের জোরে তিনি প্রতিবার বেঁচে যান।
তারামনকে হাবিলদার মুহিব সব সময়ই উৎসাহ দিয়েছেন। যুদ্ধের পর তিনি তারামনকে একবার ঢাকায় নিয়ে আসেন।
বর্তমানে তারামন কুমিল্লার কালিয়াকৈরে তার স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে আছেন। স্বাধীনতার ২৪ বছর পর্যন্ত তারামন সরকারী কোন সাহায্য পাননি। নারী মুক্তিযোদ্ধা বলে তাঁকে অবহেল করার হয়েছে –এমনটী আক্ষেপ তার রয়েছে।
শুধু তারামন কেন অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এখনো তাদের প্রাপ্য মর্যাদা পাননি । প্রায়ই পত্রিকায় এখনো আমাদের পড়তে হয়,কোন মুক্তিযোদ্ধা তার সংসার চালানোর জন্য রিক্সা চালাচ্ছেন কিংবা ভিক্ষা করছেন...জানি না এই লজ্জ্বা কবে শেষ হবে। হয়তো একদিন জীবিত মুক্তিযোদ্ধা বয়সের ভারে একে একে সবাই হারিয়ে যাবেন...।
তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হকের একটা বই আছে...”বীর প্রতীকের খোঁজে”। ‘করিমন বেওয়া’ আনিসুল হকের রচিত একটি বাংলা নাটক যার কেন্দ্রীয় চরিত্র বাংলাদেশের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি।
ডঃ ক্যাপ্তেন সিতারা বেগম কে নিয়ে লেখাটা তৈরি করা আছে । কিছু দিন পর পোস্ট করবো।
তথ্যসুত্রঃ
১। ইংরেজি উইকিপিডিয়া
২। সাইট মুক্তমনা
৩।
সাইট দৃষ্টিপাত
৪। ছবি তথ্য সুত্রঃ কীর্তিমান ইনফো [link|http://kirtimaan.info/gallery/pages/Taramon
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।