মানুষ তার আশার সমান বড়...
সাঁতার, সাইকেল থেকে দাবা খেলা, কেউ কখনো শেখাইনি আমাকে। নিজে নিজে যতটুকু পারা গেছে, ততটুকুই। সাঁতার আমি একদম ভালো পারিনা সাইকেলতো একেবারেই না, দাবাটা বলা যায় একটু পারি। কারণ, জাতীয় পর্যায়ে কয়েকবার খেলেছি এবং সুখস্মৃতি আমার সর্বোচ্চ ৩ পয়েন্ত , ক্রিকেট, ফুটবল একদমই পারিনা। কেরামটাই যা ভালো পারি )
ক্লাশ ফোর/ফাইভে সাইকেল ধরেছি।
এলাকায় সাইকেল ঘন্টা হিসাবে ভাড়া পাওয়া যেত, প্রতি পনেরো মিনিট ২ টাকা করে। প্রথম ক'দিন বেশ কয়েকবার হাঁটু, কনুই, মাথায় আলু গজানো ছাড়া তেমন কোনো বাহারী কম্ম সাধন হয়নি। দল বেঁধে সমবয়সীরা সাইকলে রেস খেলতাম। কেউ একজন আমাকে প্রায় ধরে ফেলছে টের পেলে পেছনের চাক্কাটা কৌশলে তার সামনের চাক্কার সাথে বাজিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দিতাম..., নিজেও কতবার পড়েছি... । এভাবেই যখন পার হয়ে যাচ্ছে দিন ভাড়াটে সাইকেলে চড়ে... তখন হঠাৎ একদিন দাদা আমাকে ডেকে ৩৫০০ টাকা ধরিয়ে দিলেন এবং কখনো আর আমাকে কিছু কিনে দেবেন না মর্মে চুক্তি সম্পাদন করালেন অষ্টম ক্লাশ পাশ করে বেকার ছিলাম তখন।
বন্ধুকে সাথে নিয়ে বংশাল থেকে ৩১০০ টাকা দিয়ে এম.টি.ভি সাইকেল কিনে নিয়ে আসলাম। এবার বড় রেস, তাই ঝুলিতে বড় দুর্ঘটনা। একবার এক দুধওয়ালাকে বাঁচাতে গিয়ে জঙ্গলে ঢুকে গেলাম, লতাগুল্ম, কাঁদা মাটি মাখামাখি এ ফাঁকে বোলতার হুল খেলাম চোখের উপর, নাকে, মুখে... আজাব... চেহারার বারোটা!!! এক সপ্তাহ বাইরে বের হতে পারলাম না।
আরেকদিন বৃষ্টিতে মাখামাখি রাস্তায় রেস হচ্ছিলো। একটা রাস্তার মোড় ঘুরতে গিয়ে জমাট পানিতে চাক্কা পিছলে এমন জোরে পড়লাম... গতির কারনে ছ্যাচড়ে অনেকদূরের ওয়ালে গিয়ে বাড়ি খেলাম, মাথায় আলু, হাঁটু কেটে সাদা মাংস দেখা যাচ্ছে, কনুইয়েরও একই অবস্থা, বারোটা বারোটা।
৩/৪ দিন দাদায় সাইকেলে তালা বন্ধ করে রাখলেন।
আরেকবার চোদ্দ নাম্বার ক্যান্টনমেন্টের রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। গতি ভালোই, সামনের মোড়ে এসে দেখলাম 'উড়োজাহাজ' (ট্যাম্পুর মত, তবে প্রচুর শব্দ হতো বলে আমরা এর নাম দিয়েছিলাম উড়োজাহাজ, কেউ কেউ ভটভটি নামে ভালো চিনে) তার বিশাল নাকটা এগিয়ে দিয়েছে মোড় ঘুরবে বলে, আমি ব্রেক চেপে ধরেছি দাঁত মুখ খিচে। কোন কাজই হলো না। এক্কেবারে নাকে নাকে ঠোকাঠুকি।
আমি উড়োজাহাজটার উপর দিয়ে রাস্তার ওপারে প্রায় উড়ে গেলাম, চারদিকে হইচই, আমার সাইকেলের একাংশ উড়োজাহাজের ওপারে, এপারে আমি, সামনেই আমার সাইকেলের সামনের চাক্কা লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটছে। আমি উঠতে পারলাম না, ভাবলাম ইন্তেকাল করিতেছি।
সেদিন মরি নাই মনে হয় আরো কিছু ছোট/বড় দুর্ঘটনা, আমার হাতের দুই কনুই, পায়ে, পাঠে, মাথায় বৈশিষ্ট্য হয়ে ফুটে আছে।
ক্রিকেটে প্রথম দিকে ব্যাটসম্যান ছিলাম। স্কুল টুর্নামেন্টে হয়ে গেলাম মিডিয়াম পেসার।
ভালো ফিল্ডিং দিতাম বলে সবসময় লেগ সাইডের বাউন্ডারী লাইনে দোড়াদুড়ি করতে হতো। বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যানই লেগ সাইডে শট খেলতে পছন্দ করে, আমার ধারনা। কলেজ পযর্ন্ত বেশ ভালো গতিতে বল করে এসেছি। হঠাৎ একদিন আমার হাতের গোড়ায় টস করে একটা শব্দ হলো, ব্যাথায় বসে গেলাম, দুয়েকদিন পর সুস্থ্য হয়ে গেলেও আবিস্কার করলঅম, আগের মত আর বল করতে পারছি না, যত জোরে বল করি ততই হাতের তালু ঝিনঝিন করছে, ব্যাথায় বসে পড়তে হচ্ছে... বুঝতে অসুবিধে হলো না যে, আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার এখানেই ফিনিস।
ফুটবলে খেলতাম ডিফেন্সে।
ছোট বেলায় সিটি ক্লাবে নিয়মিত খেলেছি। সেই সুবাদে দম একদম মন্দ ছিলোনা। ডিফেন্সার, তাই নির্দেশ ছিলো- যেকোন একজনকে ধরে রাখতে হবে... হয় বল, নতুবা প্লেয়ার। আমার শরীরের তুলনায় দ্বিগুন মানুষকে কতবার মাটিতে ফেলে দিয়েছি, কতবার মারপিট, কতবার ঠোঁট ফাটিয়ে বাসায় এসেছি... গণার বাইরে। একদিন হয়ে গেলাম মিড ফিল্ডার।
রোমান্সে বুদবুদ ছিলাম ইচ্ছেমত সব কিছু ডাইভার্ট করা যায়। এটাক করা যায়, ডিফেন্স করা যায়, দৌড়াদুড়ি করতে করতে জানটা শেষ করে... সন্ধ্যায় ভাবতাম... ইস নয়ন ভাইকে বলটা না দিয়ে সোহাগকে দিলে গোলটা হতোই হতো। নিজে গোল করেছি খুব কম, গোলের চেয়ে বল সার্ভ করতে আমার বেশি ভালো লাগতো।
হকি খেলেছি ক্লাশ এইট থেকে নাইন পর্যন্ত। বর্ণক ক্লাবের ফ্রি কোচিং যতদিন ভালো লেগেছে ততদিনই খেলেছি, কখনো বাইরের কোনো টুর্ণামেন্টে খেলিনি।
কুঁজো হয়ে খেলতে হয় দেখে এই খেলা আমার কখনোই পছন্দের তালিকায় ছিলো না।
জগতের সব খেলা পারবো কিন্তু কেরাম পারবো না। কেরামের কথা শুনলেই আমার কান্না আসে। পারিনা একেবারেই। রাশেদ/ নির্ঝরদের সাথে খেলতে নামি নিল বাঁচানোর চিন্তা মাথায় রেখে অথবা ওরা যখন বলে, তোকেতো ৩ বোডেই গেম দিয়ে দিবো, তখন মাথা গরম করে বলি, "আমার আত্মবিশ্বাস আছে, তুই ৫ বোডের আগে গেম দিতে পারবি না"।
কখনোই ওদের গেম দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামি না। আমি আসলে কেরাম কখনো খেলিনি। জীবনে ১৫/১৬ বারের মত খেলেছি।
সাঁতার?
উহু এদমই পারিনা
এসব খেলা নিয়ে আমার কখনোই কোনো দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্ন ছিলোনা। এটা খেলা তাই খেলি, এটা দিয়ে টাকা বানানো যায়, সম্মান আনা যায় এমন স্বপ্নের প্রতি কখনোই আগ্রহ জন্মেনি।
ক্রিকেটে অনির্বান পর্যন্ত দৌড় ছিলো, ফুটবলে বহু টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেও কখনোই মনে হয়নি থার্ড ডিভিশনের জন্য নিজেরে প্রস্তুত করতে হবে... রেকেটে রেফারেন্সের হাত ধরে জাতীয় পর্যায়ে খেলা কোনো ব্যাপার না, কিন্তু ভাবিনি কখনো এই খেলা ভালো খেলি।
হাডুডু, লুডু, কানামাছি ভৌ ভৌ, চোর পুলিশ, আইস ওয়াটারকেই মনে করি পৃথিবীর সেরা সেরা খেলা ভাগ্গিস এসব খেলা ছিলো- না থাকলে মহিলারা যে তুমুল কান্ড ঘটিয়ে ফেলতো... এটা নিশ্চিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।