আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'অদ্ভূত বোরখা' নিয়ে কিছু কথা--২

জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।

আমার বোরখা পরা হয়ে উঠে না সব সময়। তবে 'পর্দা' করি, 'হিজাব' পড়ি, আল্লাহ আর রসুলের দেয়া শরীয়ী নিয়মানুযায়ী। এখানে শুধু মেয়েদের পর্দা নিয়ে বলি--মেয়েদের পর্দা হলো মুখ আর হাত ছাড়া সব ঢাকা, ঢিলা ঢালা পোশাকে, শালীন ভাবে। "বোরখা" পোশাকটার উদ্ভাবন হয়েছিল এই ঢাকাঢাকিটাই সহজ করার জন্য।

আরবে পুরুষরাও ঢিলা ঢালা পোশাক পড়ে, পড়তো। মেয়েরা আরেকটু ঢিলা কিছু পড়তো। ভারতীয় উপমহাদেশ, আফগানিস্তান, ইরান, সৌদি আরব, মধ্য প্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া--পৃথিবীর অনেকগুলো জায়গায় অনেক আগে থেকেই মুসলিমরা আছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে সব দেশেই ইসলামিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মেয়েদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখা হিজাবের প্রচলন আছে, কিন্তু সব জায়গার 'হিজাব' এক রকম নয়। বরং প্রতিটা জায়গায় দেশীয় কালচার আর ইসলামের সীমারেখা--দুইটার এক সাথে 'ফিউশন' ঘটানো হয়েছে।

আমাদের দেশের নানী দাদীরা কিন্তু 'পর্দা' করতেন ঠিক। বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় নিজের সাজুগুজু করা কাপড়ের উপর 'কাপড়' পরে বোরখা পড়তেন, বাড়িতে পরপুরুষ আসলে কিন্তু বোরখা পড়া ছাড়াই পর্দা করতেন। শাড়ি পরেই। দেশের প্রচলিত পোশাকটাকেই প্রয়োজন অনুযায়ী বদলে নেয়া, এই তো হয়েছে সব মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়। তাই হিজাবের প্রয়োজনে উদ্ভাবিত পোশাকের নামটা এক এক জায়গায় এক এক রকম।

সৌদি আরবে 'আবায়া', ভারতীয় উপমহাদেশে 'বোরখা', ইন্দোনেশিয়ায় 'জিলবাব', ইরানে 'চাদর'। সবগুলোই 'হিজাব'। উপমহাদেশে যাকে 'পর্দা' বলা হয়। তবে উপমহাদেশের শুধু মুসলিম মেয়েরা 'পর্দা' করে না, হিন্দুরাও করে! মুসলিমদের হিজাবের এক এক দেশের স্টাইল আলাদা। দেশীয় সংস্কৃতি, পরিবেশ, এগুলোর সাথে সাথে যেই পোশাকের 'হিজাব' হিসেবে পরা হয় তা বদলে যায়।

কিছু মানুষ বলেন, এক এক পরিবেশে শালীনতার সংজ্ঞা এক এক রকম। কিন্তু, এই সংজ্ঞাটারও একটা সীমারেখা দরকার। একটু এক্সট্রিম উদাহরণই দেই--ন্যুড বীচে ন্যুড হয়ে থাকাটা অশালীন না, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের স্ট্যান্ডার্ড এতটা বদলালে তো সমস্যা--সৌদি আরবে সবাই বোরখা পড়ে আছে, তাই সেখানে বোরখা না পড়া অশালীন আর ন্যুড বীচে সবাই ন্যুড অতএব ন্যুড হতে সমস্যা নেই? বাহ। যারা এই ক্রমাগত বদলে যাওয়া স্ট্যান্ডার্ডের ব্যপারে মুখে মুখে বিন্দুমাত্র আপত্তি করেন না, আমার তাদের ব্যক্তিগত জীবনে খুব দেখতে ইচ্ছা করে।

নিজের প্রিয় স্ত্রী/প্রেমিকা ন্যুড বীচে ন্যুড থাকলে সমস্যা লাগবে না তো? না লাগলে, সে অন্য তর্ক। এই সংজ্ঞা যেন খুব বেশি এদিক সেদিক না যায়, সে জন্যই ইসলামে সীমারেখা টেনে দেয়। 'মুখ হাত বাদে বাকি সব ঢাকা ঢিলা ঢালা শালীন পোশাক'। তবে এটা ইসলামের সীমারেখা, সবার যে 'মানতে' তবে, তেমন যুক্তি নেই। দেশ থেকে দেশে, সমাজ থেকে সমাজে 'ঢিলা ঢালার' সংজ্ঞা বদলে যায়, উগ্রতা/শালীনতার সংজ্ঞা বদলে যায়, তবে ইসলামের এই সীমাটুকু কমে না।

বলা যায় এটা একটা 'নরমেটিভ স্ট্যান্ডার্ড', যেখানে সব যুগ, সব সমাজে মেয়েদের জন্য মুখ হাত বাদে সব ঢাকাটাই 'স্বাভাবিক' বলা হয়েছে। (চলছে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।