সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
'পরি রফি' ইরানের মানবাধিকার সংস্থার সদস্য। বার্লিনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষা সন্মেলনে তিনি ইরানের নারীঅধিকার বিষয়ক প্রশ্নে তার বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যের কিছু অংশ অনুবাদ করে এখানে প্রকাশ করলাম। বলা বাহুল্য, ইরান একটি ইসলামী আইন ও শারিয়া মেনে চলা একটি রাষ্ট্র।
- যে সব মহিলার সন্তান রয়েছে, তাদের তালাক ও খোরপোষের অধিকারকে আরো বেশী সীমিত করা হয়েছ।
- ছেলে সন্তান হলে সাত বছরের পর থেকে ও মেয়েদের বেলায় তিন বছরের পর থেকে তালাকের পর ছেলে-মেয়ের অধিকার একক ভাবে বাবার হাতেই যাবে।
- যদি কোন নারী তালাক চান, তাহলে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে তার স্বামী নেশাখোর, যৌন ক্ষমতার অধিকারী নন, বাড়ীতে থাকেন না, পাগল ও ধর্মত্যাগ করেছেন। তবে যদি বিয়ের আগে তালাকের অধিকার নিয়ে কোন চুক্তি করা থাকে, তাহলে সে চুক্তি অগ্রাধিকার পাবে।
- বিয়ের শর্ত হিসেবে যে কাবিনের অংক স্থির করা হয়, সে অর্থের বলে স্বামী স্ত্রীর উপর পূর্ণ অধিকার পান। আইনের বইতে এভাবে উল্লেখ আছে যে, কাবিনের অর্থের পরিবর্তে স্বামী স্ত্রীকে তার সাথে সাথে যৌনমিলনের, গৃহস্থলীর কাজকর্ম করায় ও তার আদেশ শোনায় বাধ্য করার অধিকার পান।
- স্বামীদের ক্ষেত্রে বহুগমনের প্রতি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে।
- যে সব নারীরা পরিবার ভাঙ্গেন, তাদেরকে পাথর ছুড়ে মারা হবে। (আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের কারনে ইচ্ছে থাকলেও আইনটি বলবত করা হয়নি। )
- মেয়েদেরকে আগের নিয়মানুযায়ী সাত বছরের পর বিয়ে দেয়া যেত, এখন তা বাড়িয়ে তেরো বছর করা হয়েছে। ছেলেদের বেলায় তা পনের বছর।
- সাধারণ আইনের বলে স্বামী স্ত্রীকে যে কোন জীবিকা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য রাখতে পারেন, যা তার মতানুযায়ী পরিবার ও স্ত্রীর জন্যে অসন্মানজনক।
- সম্পত্তি ও উইলের প্রশ্নে মেয়েদের অধিকার ছেলেদের অর্ধেক। আদালতে পুরুষের বক্তব্য নারীদের তুলনায় অগ্রাধিকার পারে।
- স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রী কোথাও ভ্রমণে যাবার অধিকার রাখেন না। স্বামীর লিখিত অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর পাসপোর্টের আবেদন গ্রাহ্য করা হবে না।
- পুরুষদের খেলাধুলা নারীরা হলে বা স্টেডিয়ামে বসে সরাসরি সে খেলা দেখার অধিকার রাখেন না। মহিলাদের জন্যে অনেক খেলাধুলা জায়েজ না।
- কোন মহিলা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবার যোগ্যতা রাখেন না।
- পারিবারিক সন্মান রক্ষার প্রশ্নে হত্যার পরিমান অনেক বেড়েছে। এর কোন কঠিন শাস্তি নেই।
সামান্য টাকার বিনিময়েই অপরাধী সাজা থেকে বেঁচে যেতে পারে। একজন পুরুষকে হত্যা করে অপরাধীর যে অর্থদন্ড, একজন মহিলাকে হত্যা করলে তার অর্ধেক দিতে হয়।
- শাসনতান্ত্রিক আইন অনুযায়ী কোন মহিলা যদি কোন বিদেশীকে বিয়ে করেন, তাহলে তাকে তার স্বামীর জাতীয়তা নিতে বাধ্য করা হয়। অনেক ইরানী নারী তাই আফগান শরনার্থীকে বিয়ে করে নিজের জাতীয়তা হারিয়েছেন। তাদের সন্তানদের ইরানী জাতীয়তা থাকলেও তারা ইরান ছাড়তে বাধ্য হন।
- পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্র নারীদের উপর শারিরীক নির্যাতনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমর্থন করা হয়। 'শারিয়া'র মাধ্যমে মেয়েদের জীবন ধারণ পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। তাদের নিয়মের অন্যথা হলে তাদের পিঠ উলঙ্গ করে চাবুক মেরে তাদেরকে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়।
আমি তীরন্দাজ এক্জন পুরুষ। আমার জন্যে এ ধরণের আইন ও সামাজিক নিয়ম কানুন সুবিধাজনক হলেও আমার চিন্তা ও মানবিক বিচারে এর প্রতি আমার প্রবল ঘৃনা।
সবার কাছে আমার জানার আগ্রহ, বাংলাদেশকে একটি পরিপূর্ণ মুসলিম আইন শাসিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে আপনারাও কি এই আইন ও সামাজিক নিয়ম বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে চান?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।