চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা
মাওলানা জালালুদ্দিন রুমীর একিটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। এক পন্ডিত বাড়ি ফিরছেন।
পথে পড়ল নদী। নদী পার হওয়ার জন্য নৌকায় চড়লেন। কথায় কথায় মাঝিকে জিজ্ঞাসা করলেন মাঝি কদ্দুর পড়াশনা করেছ? মাঝি উত্তর দিল、 কিছুই না? উত্তর শুনে মাওলানা বললেন তোমার ত অর্ধেক জীবন বৃথা, মাঝি চুপ করে রইল।
নৌকা যখন নদীর মাঝখানে তখন ভীষন ঝড় উঠল। নৌকা একসময় ডুবতে শুরু করল। মাঝি পন্ডিতকে জিজ্ঞেস করল হুজুর সাতার কাটতে জানেন? মৃত্যু ভয়ে ভীত পন্ডিত কাপতে কাপতে উত্তর দিলেন, না। মাঝি তখন বলল হুজুর আপনার ত পুরো জীবন বৃথা।
মাওলানার গল্প দিয়ে শুরু করলাম বলে অনেকে নিশ্চয় রাজাকার ভাবতে শুরু করেছেন।
অনেকেই হয়ত জানেন যে ইংরেজিতে অনুদিত এই মাওলানার একটি কবিতার বই কিছুদিন আগে আমেরিকাতে বেস্ট সেলার হয়েছিল।
আসলে আমার এই গল্পের অবতারনা অধুনা কিছু ব্লগ পন্ডিতদের নিয়ে যারা গোস্বা করে ব্লগ ছেড়েছেন(পোষ্টটা একটু দেরিতে হল) । যারা ভাব করেন যেন তারা জীবনের সব কিছুই বুঝে গিয়েছেন আর বাকীরা সব অন্ধকারের জগতে আছেন। জ্ঞানের আধিক্যে অনেকে আবার বিনয়, ভদ্রতা, আলাপে সংযমীতা সবই ভুলতে বসেন। অথচ জ্ঞান মানুষকে অধিকতর বিনয়ী করে তুলে।
একবার সক্রেটিসকে সবাই মিলে ধরল তাকে মানতে হবে তিনি গ্রীসের সবচাইতে জ্ঞানী ব্যক্তি। সক্রেটিস কিছুতেই মানতে রাজী নন। সবাই আবার নাছোড়বান্দা। শেষে সক্রেটিস এই বলে রাজী হলেন যে আমি সবচাইতে জ্ঞানী বক্তি এই অর্থে যেহেতু আমার অজ্ঞতার ব্যপারে আমি সবচাইতে বেশি জানি। যে চাষী চাষাবাদ করে সে জানে কখন গাছ রোপন করতে হয়, কখন গাছে পানি দিতে হয় যে জ্ঞান একজন শহুরে বিদ্দান ব্যক্তির নেই।
আসলে প্রতিটি মানুষের নিজস্ব জীবন দর্শন আছে、 আছে নিজস্ব একটি জ্ঞানের জগত। যেখানে সবকিছুই সে দেখে নিজের জ্ঞানের আলোকে। তাই যে অনেকে সম্মান করতে জানেনা আসলে সে নিজেকই খাটো করে।
কিছুদিন আগে এক পন্ডিত ব্লগার পবিএ্য কুরআন আর হাদীসের উদ্ধতি দিয়ে আমাদের নবীজিকে (সাঃ) খাটো করার চেষ্টা চালালেন। ভাবখানা এরকম যেন ১৪০০ বছর ধরে শতকোটি মুসলামান বোকার মত এমন একজন মানুষকে অনুসরন করে আসছে যিনি ছিলেন মিথ্যেবাদী, কপট চরিত্যের লোক।
এপ্রসংগে আমেরিকা এক বিখ্যাত প্রেসিডেন্টের একটি উত্তি মনে পড়ছে, তিনি বলেছিলেন তুমি কিছুদিনের জন্য কিছু লোককে বোকা বানিয়ে রাখতে পারবে, কিন্তূ খুব বেশি লোককে খুব বেশি দিনের জন বোকা বানিয়ে রাখতে পারবে না। তাই মুরখসুরখ লোকেরাই কেবল ধর্মকর্ম পালন করে এরকম ভাবাটা হিপোক্রেটিক চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। আবুল মনশূর আহমেদ তার এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন যে একজন নাস্তিকেরও নিজস ধর্ম আছে যা হল খোদায় বিস্বাস না করা।
মুলপ্রসঙ্গে আসা যাক। বাকস্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে ভাসা ভাসা জ্ঞানের আলোকে সর্বজন শ্রধ্যেয় কারো চরিত্রে কালিমা লেপন দুরভিসন্ধিমুলক।
দান্তে এই ভুলটি করেছিলেন তার ডিভাইন কমেডি নামক রচনার মাধ্যমে,আর যা তিনি করেছিলেন প্ররোচিত হয়ে নবীজিকে (সাঃ) হেয় করার জন্য। পরে জানা গেল ইসলাম ধর্মের কিছূই তিনি জানতেন না। অথচ যখন গ্যেটের কাছে ইসলামের বর্ণনা দেয়া হলে তিনি বলেছিলেন এই যদি হয় ইসলাম তাহলে আমি একজন মুসলমান। এক রাশান মা তার সন্তানের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরের কথা টলষ্টয়কে জানালে তিনি উত্তরে লিখেছিলেন খীষ্ট্র এবং ইসলাম এদুটি ধর্মের একটি বেছে নিতে বলা হলে আমি ইসলাম ধর্মে ধর্মেকে বেছে নেব। জগতের সবচাইতে বিখ্যাত তিন নাট্যকারের কথা বললে তার মধ্যে একজন জর্জ বারনারড শ ।
তিনি বিস্বাস করতেন জগতের সব সমস্যা যে ব্যক্তি নিমেষেই সমাধান দিতে পারতেন তিনি নবী সাঃ। তিনি সমগ্র ইউরোপের ভবিষত ধর্ম হিসেবে ইসলামকে মনোনিত করেছিলেন। নেপোলিয়েন চেয়েছিলেন জগতের সমস্ত বিদ্যান ব্যক্তিকে জড়ো একটি ধর্ম কে চালু করবেন যা হলো ইসলাম। বারট্রান্ড রাসেল ইসলামী সভ্যতার স্বৃকিতি দিয়েছিলেন। উল্লেখ প্রাচ্যের ক্রমাগত প্রচারনার পরও নবীজির (সাঃ) উত্তম চরিএর সন্ধান ইউরোপের বিদ্দান ব্যক্তিদের কাছে পৌছে গিয়েছিল।
এবার পন্ডিতদের অপপ্রচারে শঙ্কিত ব্লগারদের উদ্দেশ বলি সোভিয়েত কালে কমুনিজ্যমের অগনিত পন্ডিতেরাও অপপ্রচার চালিয়ে, মসজিদ গুড়িয়ে দিয়েও ধর্মকে নিরবাসন দিতে পারেননি, উপরন্তু তাদের নিজেদের অস্তিত্যই বিলীন হয়ছে। খোদ রাশিয়ায় এখন ইসলামের প্রসার ঘটছে অতি দ্রুত। পরিসঙ্খান অনুযায়ী ২০৫০ সালে রাশিয়ার অর্ধেক জনগন হবে মুসলিম।
ধর্মের গুরত্ব উপলব্দি না করে ধর্ম নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করাটা উদ্দেশ্যমুলক। ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যপারে এবং জ্ঞানে বিজ্ঞানে সবচাইতে এগিয়ে যে দেশটি সেই আমেরিকার মুদ্রায় গডের কথা লেখা থাকে আর প্রত্যেক জনপ্রতিনিধিকে বাইবেল হাতে নিয়ে শপথ নিতে হয়।
অথচ এই দেশে ইসলামের সামান্য উপষ্থিতিথে এই পন্ডিতদের গাত্র্যদাহ ঘটে। আখ্যা দেন রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধী আথবা জংগী হিসেবে। উনাদের দুঃখ এ পৃথিবীটা চাষাভুষায় (রুমীর মাঝি) ভরা।
দুঃখে ব্লগ ছেড়ে গিয়েছেন ভাল এ জগত ছেড়ে না গেলেই হয়।
ধর্ম নিয়ে বারাবারিটা কারো পছন্দ হওয়ার কথা নয়।
যে যার বিস্বাস নিয়ে শান্তিতে থাকাটা সবার কাম্য। অন্যের ধর্মের ব্যাপারে বেপরোয়া হলে তাতে সমাজের শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার সুযোগ থাকে। যেকোন ধরনের আগ্রাসন পরিহার করা উচিত।
আভরো ফনেটিকে লিখতে গিয়ে অনেক বানানই শুধ্যভাবে লিখতে পারেনি। আমি লেখক নই।
সিরিয়াসলী কিছু লিখতে চেষ্টা করাটা এই প্রথম। ভাষাগত সমস্যাও থাকতে পারে। এসব কিছুর জন্যই ক্ষমাপ্রাথী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।