আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মান্ধদের খেলা, নজরুল-রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় মেরুকরণ ও আমার বক্তব্য

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

এরা পাশপাশি কাউকে দেখতে জানে না। এক আর দুই এর বাইরে তিন গুনতে গেলে নাভিশ্বাস ওঠে ওদের। ওরা মানুষের দুটো মাত্র চেহারাই চেনে। হয় ধর্মান্ধ, নয় ধর্মহীন। এর বাইরের কিছু বিচার করার ক্ষমতা এদের মগজের জন্যে বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

শ্বাসকষ্ট হয় ওদের। আবোল তাবোল বকা শুরু হয়। সেজন্যেই নজরুলকে উপরে তুলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে টেনে হিচড়ে নীচে নামাতে উন্মাদ হয় এরা। ভিন দেশে এদের মতোই ভিন ধর্মের অন্ধানুসারীরা করে এদেরই উল্টোটা। এরা টানাহেচড়া করেন নজরুলকে।

দুদলেরই বিদ্যা আর চিন্তার পরিধি সমানভাবেই সীমাবদ্ধ। এরা ভাগাড়ের শকুনের মতোই পরস্পরের সাথে কামড়াকামড়িতে মত্ত। আর এদের মাঝখানের পড়ে সুস্থ মননের মানুষের নাভিশ্বাস। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ বা এঁদের মতো বড় মাপের মানুষের সৃষ্টির দিকে তাকাতে হলে যে ধর্মীয় সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে তাকাতে হয়, এটুকু বোঝার মতো উর্বর মস্তিষ্ক ওদেরই ঈশ্বর তৈরী না করে যে অবিচারটুকু করেছন, তার দুর্গন্ধ তাঁর আরশে বসে ঈশ্বর নিজে পাচ্ছেন কি না জানিনা, কিন্তু সাধারণ পৃথিবীর পরিবেশদূষন ভয়াবহ। কিন্তু এই ধর্মীয় দূষনের নামাবলী গায়ে জড়িয়ে এই বিষাক্ত, ক্লেদাক্ত নি:শ্বাস যাদের, তাদের তো এই ভয়াবহতা টের না পাবারই কথা।

বরং খোলা বাতাসেই শ্বাসকষ্ট হয় এদের, সামান্য আলোর ঝলকানি ওদের অণ্ধকারে অভ্যস্ত চোখে যন্ত্রণা হয়ে আঘাত করে। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ দুজনের প্রত্যেকেরই স্বধর্মের আরো অনেক উপরে স্বমহিমায় উজ্জল। এরা নিজেরা তাদের স্বধর্মে যতো না প্রভাবাহ্নিত, তার চেয়ে বেশী চেষ্টা ছিল ওদের নিজেদের চিন্তা ও দর্শন দিয়ে ধর্মকে এমন ভাবে প্রভাবাহ্নিত করা, যাতে ধর্ম মানুষ ও মানবিকতাবোধের উপরে না দাড়াতে পারে । সেজন্য নজরুল লিখেছেন. “গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে নাহি কিছু বড় নাহি কিছু মহীয়ান”। ধর্মান্ধদের ধর্মবোধের সাথে মিলে নজরুলের এই বাণী? আপনারা কি নজরুলকে কখনো মোরতাদ ঘোষনা করার কথা ভেবেছিলেন? “আমার শ্যমা মায়ের কোলে চড়ে ডাকি আমি শ্যমের নাম”, পড়ে আপনার নজরুলকে কি হিন্দু ভাবেন নি? নাকি মুসলিম নামের জোরেই পার পেয়ে গেছেন তিনি? নজরুলের লেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল সাম্প্রদায়িক সহনশীলতা।

যে রাজনৈতিক ও অর্থৈনতিক কারণে হিন্দু মুসলিমের বিরোধ ছিল সে সময়ে, তাকে দুর করার জন্যে ‘হিন্দু-মুসলিম’ বা ‘বেঙ্গল প্যক্ট’ করায় অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত। দেশবন্ধুর হঠাৎ মৃত্যুর পর সে চুক্তি বাতিল হওয়াতে আঘাত পান নজরুল। লিখলেন চিত্তনাম গ্রন্থে ইন্দ্রপতন কবিতায়, পয়গাম্বর ও অবতার যুগে জন্মিনি মোরা কেহ, দেখিনি ক; মোরা তাঁদের, দেখিনি দেবের জোতির্দেহ । .... বুদ্ধের ত্যাগ শুনেছি মহান. দেখিনি ক’ চোখে তাহে, নাহি আফসোস, দেখেছি আমরা ত্যগের শাহানশাহে। নিমাই লইল সন্যাস প্রেমে, দিইনি কো তারে ভেট, দেখিয়াছি মোরা “রাজা-সন্ন্যাসী”, প্রেমের জগৎ-শেঠ! কবিতাটি তখন বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।

তখনকার ধর্মান্ধ মুসলমানদের মগজেও নজরুলকে বাণীর এই মহাত্ব ঢুকতে পারে নি। তাঁকে ‘কাফের’, ‘নমরুদ’, ‘ফেরাউন’ ফতোয়া দেয়া হয়েছিল। সেসব ধর্মান্ধদের উত্তরসুরী আজকালকার নব্য ধর্মান্ধরা সেই একই নজরুলকে নিজেদের কবি হিসেবে ঘোষনা করে আত্মতৃপ্তিতে ঢেকুড় তোলে। পাশাপাশি রবীন্দনাথকে ছোট করে নিজেদের ভেতরের ধর্মীয় উন্মাদনা জনিত হিংস্রতার প্রকাশ ঘটায়। এদেরকে ঘৃন্য, সুবিধাবাদী না বলা ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকে না আর।

মোদ্দা কথা, নজরুল বা রবীন্দ্রনাথ কোন ধর্মের, হিন্দু বা মুসলিমের কবি নন। তাঁরা বাঙ্গালীর কবি, তারা মানুষের কবি। কোন কোন ক্ষেত্রে তাঁদের পথ ও দর্শন আলাদা হলেও লক্ষ আদি এক ও অভিন্ন মানুষ। একই অভীষ্ট লক্ষে তাই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি শুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়ায়ে উর্ধ্বমুখে নর নারী । ...... ...... কেন এ হিংসাদ্বেষ, কেন এ ছদ্মবেশ কেন এ মান-অভিমান।

বিতর বিতর প্রেম পাষান হৃদয়ে জয় জয় হোক তোমারি। কিন্তু আমার কথা, যারা জেগে জেগে অন্ধ, যারা কুয়োর ব্যাঙ, কুয়োতেই যাদের অহোরাত্রি বসবাস, তাদের জাগাবে কে? তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, যাতে তাদের উত্তরসুরীরা সে প্রক্ষাপটে, সে আলোবাতাসে সতেজ নি:শ্বাস নিতে পারে, এটুকুই কামনা আমার।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।