এ ব্লগে আর কোন মৌলিক লেখার দরকার নেই, যেহেতু আমি আমার নিকৃষ্টতম লেখার স্বত্ব ও কাউকে দিতে রাজী নই
[ ক্ষ্যপা নামের একজন ব্লগারের একটা পোষ্ট চোখে পড়লো । আরো কয়েকজন ব্লগারকে তিনি সতর্ককরে দিয়েছেন ধর্মান্ধতা বিরোধী লেখার জন্য । ক্ষ্যপা - আপনার উদ্্বেগের জন্য ধন্যবাদ । আর এ লেখাটা আপনার সেই বন্ধুকে ---যিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন তার লেখার জন্য ]
মধ্যযুগের মারাঠী কবি তোকারামকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল আর তার কবিতাগুলো ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল নদীতে ।
কাজটা করেছিলেন ধার্মিক ব্রাম্মনরা ।
তোকারামের অপরাধ ছিল তিনি অন্ত্যজ জন হয়ে ও কবিতা লিখেছিলেন ধমর্ীয় বিষয় নিয়ে ।
শুরুটা তারো আগে ।
ধর্মান্ধ আর সৃষ্টিশীলদের দ্্বন্দ্ব।
সেই চর্যাপদের কবি কাহ্নপা , শবরদের ও মোকাবেলা করতে হয়েছে ধর্মান্ধদের ।
এই জনপদের মানুষ ধর্মকে অস্বীকার করেনি কোনোদিনই ।
বরং চারিত্রিক নমনীয়তার কারনে সমস্ত দুযের্াগে বিশ্বাস করেছে, ভরসা করেছেঐশী শক্তির উপর ।
কিন্তু এই জন গোসঠীই কখনো ধর্মান্ধদের সুযোগ দেয়নি চেপে বসার ।
বাংগালীর শেকড়ের যে সংস্কৃতি তার ভেতর রয়েছে চমৎকার উদারতা, ধর্ম নিয়ে বিচার বিশ্লেষন, অসামপ্রদায়িকতা আর ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধাচরন ।
চর্যাপদ থেকে শুরু করে আমাদের মুর্শিদী ,মারফতি,বাউল গান গুলো তার প্রমান ।
লালন সাঁই,হাসন রাজা,রাধারমন,সিরাজ সাঁই, বিজয় সরকার,সৈয়দ শাহনুর,শিতালং শাহ, দুর্বিন শাহ,আবদুল করিমের গান এদেশের মানুষ যুগের পর যুগ ধরে ধারন করেছে ।
কিন্তু এদের প্রত্যেককেই লাঞ্চিত হতে হয়েছে ধর্মান্ধদের হাতে ।
শরিয়তপন্থীরা বাউলদের বে-শরা ঘোষনা করেছে, একতারা ভেংগে দেয়া হয়েছে, দাড়ি-চুল কেটে দেয়া হয়েছে তবু প্রচলিত ধর্মচর্চার বদলে মানবতার জয়গান বন্ধ হয়নি ।
বিজয় সরকার এক গানে পাই:
' বাউল বাউল করো তোমরা
বাউল কি আর আছে?
বড় দু:খে বাংলাদেশের বাউল মইরাছে....'
শাহ আবদুল করিমের মুখে শুনে ছিলাম মসজিদের ইমাম তার এক সাগরেদের জানাযা পড়াননি, তিনি গান গাইতেন বলে ।
সিলেটের গ্রামা ঞ্চলে অত্যন্ত জনপ্রিয় এক গায়ক ক্বারী আমীর উদ্দীন । নিজে ক্বারী হলে ও তার গানগুলোতে মোল্লা মৌলভীদের বিরুদ্ধে অনেক কিছু থাকে ।
তাই কয়েক গ্রামের মওলানারা তার বাড়ী ঘেরাও করে আগুন দিয়েছিল ।
তাই ছাহাবা সৈনিক পরিষদ নাসরীনের মাথার দাম ঘোষনা করে কিংবা শায়খ রহমানের ভাই হুমায়ুন আজাদকে কোপায় ---এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় ।
যুগ যুগ ধরে এই জনপদে ধর্মান্ধদের মোকাবেলা করেছে সৃষ্টিশীল মানুষেরাই । আর সাধারন মানুষ ধর্মকে সম্মান করলেও ধর্মান্ধতাকে বর্জন করে এসেছে সবসময়ই । কারন মানুষ দেখেছে মাতব্বরের ছেলে ধর্ষন করলে ও ইমাম তাকে বাঁচানো র ফতোয়া দেন কিনতু শরীয়ার নামে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয় নিস্পাপ নুরজাহানকে [ কমলগনজের ছাতকছড়ায় ] ।
মোল্লা মুন্সীদের ব্যাংগ বিদ্্রুপ আমাদের গ্রামীন সংস্কৃতিতেই বিদ্যমান ।
---------------------------------------
এই ব্লগে সত্যি অনেক সাহসী লেখা হচ্ছে । অপবাক, দীক্ষক কিংবা রাসেলের লেখা গুলো তসলিমা নাসরীনের লেখার চেয়ে অনেক বেশী স্পষ্ট , সাহসী এবং সুনির্দিষ্ট (আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি)। এগুলো কোনো জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হলে এবং ইসলামের কোনো ঠিকাদারের চোখে পড়লে --- কেজানে হয়তো আরো কয়েকটা মাথার দাম ঘোষিত হয়ে যাবে , বেড়ে যাবে আরো কয়েকজন মুরতাদের সংখ্যা । এমনকি ধর্মপরায়ন সাদিকের তথ্যব হুল পোস্টগুলো ও হয়তো উসকে দেবে জেহাদের আগুন।
আমার ছোটো বেলায় দেখেছি সুরা ফাতেহায় দোআললীন না যোআললীন বলা হবে সেটা নিয়ে দুদল মওলানার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, মাদ্্রাসা পুড়িয়ে দেয়া ।
---------------------------------------
মানুষের বেঁচে থাকা ধর্মের চেয়ে অনেক বড় সত্য ।
বাংলাদেশে খুব নীরবে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে । এটা ঘটিয়েছেন শ্রমজীবি নারীরা । হাজার হাজার নারী
গার্মেন্টসে কাজ করছেন ।
হাজার হাজর নারী মাটি কাটছেন , পাথর ভাংছেন । বাংলাদেশের ফতোয়াবাজ ধর্মান্ধ আর মেকী নারী বিপ্লবী দের গালে এটা একটা চমৎকার থাপ্পড় । কোনো ফতোয়া আর শরীয়া আইনের দোহাই দিয়ে এই নারীদের ফেরানো যাবেনা ।
আর হ্যাঁপশ্চিমা দেশে থাকা যেসব বুকিশদের কাছে হিজাবের মতো ফালতু বিষয় খুব গুরত্ব পায় তাদের,বাংলাদেশের এই শ্রমজীবি নারীদের কাছ থেকে শেখার আছে অনেক ।
---------------------------------------
ধর্মান্ধরা মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করবে, যা তারা বোঝেনা তা ও নিয়ন্ত্রন করতে চাইবে আবার সৃষ্টিশীল স্বাধীনচেতা মানুষেরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবে --- এটাই বাস্তবতা ।
যুগ যুগ ধরে এই প্রতিরোধ চলে এসেছে । ভিন্ন রুপে , ভিন্ন ভিন্ন ধারায় ।
এই চলমান প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে কেউ হাল ছেড়ে দেবে , কেউ আত্নসমর্পন করবে, কেউ পক্ষ ত্যাগ করবে । কিন্তু এই প্রতিরোধ থামেনি, থামবেনা ।
এই দ্্বান্দিক বাস্তবতা ই গড়ে তোলবে মানুষের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।