আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া মেয়েটি এবং আমার গল্প !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! পরপর দুইটা বাস ছেড়ে দিলাম । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনও সময় আছে । আমি এমনিতেও একটু তাড়াতাড়িই টিউশনীতে যাই । আজ না হয় একটু দেরি হলই ! কিন্তু প্রিন্সেসের দেখা নাই । মেয়েটা কি আজকে আসবে না ? মনটা একটু খারাপ হল ! কালকেও মেয়েটি আসে নি ।

আজকে কেও কি আসবে না ? যখন মনে হল যে আজকে আর রাজকুমারীর দেখা পাবো না ঠিক তখনই তাকে দেখতে পেলাম ! তবে আজ একটু অবাক হলাম মেয়েটার পোষাক দেখে । অন্যান্য দিন মেয়েটা সাধারনত ওয়েস্টান স্টাইলে পোষাক পরে । কিন্তু মেয়েটা সেলোয়ার কামিজ পরেছে । হালকা আকাশী রংয়ের । আর মেয়েটি সব সময় শক্ত করে চুল বাধে, তবে আজ চুল ছাড়া ।

বাতাসে কয়েকটি চুল বারবার মেয়েটির মুখের সামনে চলে আসছে আর মেয়েটি সেই অবাধ্য চুল গুলো সরিয়ে দিচ্ছে হাত দিয়ে ! আমি কিছুক্ষন তাকিয়েই রইলাম মেয়েটার দিকে ! বুকটার ভিতর খানিকটা হাহাকার দিয়ে উঠলো !! রবি বাবু আসলেই ঠিকই লিখেছিল চোখের পানে চাহিনু অনিমেষ বাজিলো বুকে সুখের মত ব্যাথা !! লাইনটা কি এই রকম ছিল ?? এরকম কিছু একটা ! সুন্দর লাগছে ওকে । অবশ্য ওকে সব সময়ই খুব সুন্দর লাগে ! সুন্দর লাগে বলেই তো প্রতিদিন এখানে দাড়িয়ে থাকি । টিউশনিতে যাওয়ার আগে একটি বার মেয়েটার মুখটা দেখতে বড় ভাল লাগে । এই জন্য আমি সব সময় মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করে থাকি । কালকেও অপেক্ষা করে ছিলাম কিন্তু কেন জানি মেয়েটা এল না ।

কেন এল না কে জানে ? কাল রাতে ঠিক মত ঘুমই আসে নি । আমি জানি এই কঠিন বাস্তবার শহরে এই রকম ছেলেমানুষী মোটেই মানায় না । কোথাকার কোন মেয়ে যার নাম পর্যন্ত আমি জানি না তার জন্য রাতে ঘুম আসে না এই কথা বললে মানুষ জন হাসবে । কিন্তু তবুও এসব যুক্তি মন কে কিভাবে বোঝাই ? মনতো এসব কথা শুনে না । আসলেই মন মাঝে মাঝে বড় অদ্ভুদ আচরন করে ।

মেয়েটি কে প্রথম যেদিন দেখি সেদিন থেকেই আমার মন যেন একটু অস্বাভাবিক আচরন করা শুরু করে দেয় । আমি ঐ দিন প্রথম বারের মত ফিজিক্যাল বাস স্টান্ড এ এসেছিলাম । আসলে আমি মোহাম্মাদপুরে মেইন টার্মিনাল থেকেই প্রতিদিন বাসে উঠি । কিন্তু কি মনে হল সেদিন ফিজিক্যালের সামনে থেকেই বাসে উঠতে মন চাইল । বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম ঠিক তখন আমার এক বন্ধু ফোন করলো ।

ওর সাথে কথা বলতে বলতেই মেয়েটির উপর চোখ গেল । পাশেই একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ! স্কুল ছুটি হয়েছে মনে হয় !! বেশ কিছু ছেলে মেয়ে সদর ফটকের সামনে দাড়িয়ে গল্পে ব্যস্ত ! আমি তার ভিতর মেয়েটিকে দেখতে পেলাম ! সবার মাঝে মেয়েটি যেন ফুটে রয়েছে । মেয়েটি ঐ দিন লাল রংয়ের টপস আর কালো জিন্স পরেছিল । লাল রংয়ের কারনেই বোধহয় মেয়েটাকে বেশি করে চোখে পরেছিল । আমি কেবল অবাক হয়ে মেয়েটার চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।

আমি সাধারনত খুব বেশি স্মার্ট বা বড় লোকের মেয়েদের দিকে তাকাই না । তাকালে কেবল আফসোস বাড়ে । যে জিনিস কোন দিন হাতে আসবে না সেই জিনিসের কথা ভাবাও উচিত্‍ না । এতে কেবল আফসোস হবে । আমি তো আমার লেভেল জানি ! কিন্তু কি যে হয়ে গেল ।

আমি মেয়েটির উপর থেকে চোখ সরাতেই পারলাম না । সব থেকে ভাল লাগছিল মেয়েটির মেয়েটির ছটফটানি ভাবটা । কেমন ছটফট করে বেড়াচ্ছিল । নিজে হাসছিল অন্য কেউ হাসাচ্ছিল । কি প্রানবন্ত সেই হাসি ।

আমি কেবল তাকিয়েই রইলাম । সেই দিনই এই বিপদ শুরু হল !! কি এক বিপদে আমি পড়লাম ! প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে এই ভাল লাগা কেবলই সাময়িক । চোখের আড়াল চলে গেলে মনের আড়ালে চলে যাবে । কিন্তু পরের দিনও যখন আমি একই সময়ে হাজির হলাম তখন বুঝতে পারলাম এই মেয়ে সহজে আমার মাথার ভেতর থেকে বের হবে না । আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম ।

মেয়েটিকে কেমন যেন একটু মলিন মনে হল আজ । মানে অন্যান্য দিন মেয়েটার ভিতর যেমন চপলতা দেখা যায় আজ তেমনটা মনে হল না । তাহলে কি ময়েটার শরীর খারাপ ? এই জন্য কি কাল আসে নাই । আমার খুব ইচ্ছা করলো মেয়েটাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কারনটা ! এই যে কালকে আসেন নি কেন ? আপনার জন্য কাল কতক্ষন বসে ছিলাম জানেন ? জানি না মেয়েটা কি বলত ? একটু হয়তো অবাক হত ? অথবা রাগ করত ? বলত আমি আসি বা না আসি এতে আপনার কি ? রাগ ? নাহ ! রাগ মনে হয় করবে না । মেয়েটার চেহারা দেখে তো মনে হয় মেয়েটা রাগ করবে না ।

আসলে মেয়েদের একটা সহজাত ক্ষমতা থাকে যেটা দিয়ে তারা সহজেই বুঝে ফেলে কারা তাদের কে পছন্দ করে । আর আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে মেয়েটা এতো দিনে নিশ্চই আমাকে লক্ষ্য করেছে যে কিনা প্রতিদিন তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে । মেয়েটি আমার সামনে দিয়েই হেটে গেল । ঠিক আমার সামনে দিয়ে । যখন মেয়েটির থেকে আমার দুরুত্ব মাত্র এক হাত ঠিক তখনই আমার দিকে তাকালো মেয়েটি ।

হায় ! কি সেই চোখের দৃষ্টি ! এ কটু যেন কাঁপছে ! আমার মনে হল মেয়েটির চোখ যেন আমাকে কিছু বলতে চায় ! মেয়েটি আমাকে ক্রস করে আর একটু এগিয়ে গিয়ে দাড়াল । আজকে ওদের স্কুলটা তে তেমন কোন ভিড় দেখতে পেলাম না । অন্যান্য দিন এই সময়টা স্কুল ছুটি হয় । কিন্তু আজ তেমন কিছুই না । আজকে কি স্কুল বন্ধ নাকি ? স্কুল যদি বন্ধ থাকবে তাহলে মেয়েটা কেন আসবে ? আর আজকে মেয়েটার কাধে কোন ব্যাগ দেখলাম না ।

অন্যান্য দিন একটা গোলাপী রংয়ের মিনি মাউসয়ালা ব্যাগ থাকে । কিন্তু আজকে সেরকম কিছু দেখলাম না । তাহলে মেয়েটা কারো সাথে কেবল দেখা করতে এসেছে ? কার সাথে ? আমার সাথে ? নাহ ! অপু তানভীর ! খুব বেশি কল্পনা করছো ! এমনটা কোন কালেই হবার নয় । তাহলে ? আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল দেখলাম আর একটা মেয়ে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল -অনী ! তুই এখানে কি করছিস ?? আজতো ক্লাস নাই ! আচ্ছা তাহলে রাজকুমারীর নাম অনী ! আমি অবশ্য আগেই সন্দেহ করেছিলাম । ওদের বান্ধবীদের মুখে আমি আগেও এই নামটা শুনেছি কিন্তু ঠিক সিওর হতে পারি নি যে এটাই ওর নাম ।

আর অন্যান্য দিন আমি ওদের থেকে বেশ দুরে দাড়াই । তাই ওদের কথা খুব একটা কানে আসে না । আজও অবশ্য আমি আগের জায়গাতেই দাড়িয়েছি কিন্তু আজ অনী একটু এগিয়ে দাড়িয়েছে । অনীর বান্ধবী আবার বলল -তোকে দেখে কেমন জানি লাগছে । শরীর খারাপ নাকি তো ! -একটু খারাপ ।

কাল থেকে খুব জ্বর ছিল । আর কাল সকালবেলা বারবার দম আটকে আসছিল । ঠিক মত শ্বাস নিতে পারছিলাম না । -হায় আল্লাহ কি বলিশ ! এখন কি অবস্থা ? এই শরীর নিয়ে স্কুলে এসেছিস কেন ? সত্যি তো এই শরীর নিয়ে কেউ স্কুলে আসে ? খুব ইচ্ছে হল গিয়ে একটা বকা দেই । এই মেয়ে ? নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিবা না ? বাইরে বের হয়েছ কেন ? দেখলাম অনী ওর বন্ধুকে বলল -একটু কাজ আছে রে ।

আর তোরা কিভাবে পারফর্ম করিস সেটা দেখতে এসেছি । -তাহলে চল ভিতরে । এখানে দাড়িয়ে কেন ? -তুই যা আমি এখনই আসছি । অনীর বান্ধবী চলে গেল । আমি দেখলাম অনী আবার আমার দিকে তাকাল ।

কয়েক সেকেন্ডের জন্য । তারপর আবার আবার অন্য দিকে তাকালো । সেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য যখন অনীর সাথে আমার চোখাচোখি হল তখনও আমার মনে হল যেন ও কিছু একটা বলতে চায় । সত্যি কি চায় ? মেয়েটার হাবভাব তো তাই বলছে ! আচ্ছা মেয়েটাকে গিয়ে কিছু বলব ? আজকে সুযোগ আছে ? একা আছে ! অন্যান্য দিন তো ওর চারিপাশে অনেকেই থাকে ! আজকে কেউ নাই ! অপু তানভীর ! এই সুযোগ ! আর কিন্তু আসবে না ! যাও যাও ! কিন্তু মেয়েটাকে কি জিজ্ঞেস করবো ? নাম জিজ্ঞেস করবো ? গিয়ে কি বলবো অনী আপনার নামটা বলবেন ? আরে তুইসেন জানোস যে তুই ওর ওর নাম জানস ঐ মেয়েকি জানে নাকি যে তুই জানোস ? তাও তো ঠিক ! ঐ মেয়েতো জানে না । কিন্তু এভাবে গিয়ে নাম জানতে চাওয়াটা ও তো কেমন দেখায় ? কিন্তু ! আরে রাখ বেটা তোর কিন্তু ! এই ভাবে কিন্তু কিন্তু করলে সারা জীবন কিন্তুই করতে হবে ।

যা থাকে কপালে ! আজকে মেয়েটার সাথে কথা বলতেই হবে ! আমি অনুভব করলাম আমার পা টা আপনা আপনি মেয়েটার দিকে এগোতে শুরু করেছে । যদিও একটু কাঁপছে আয় বুকের ভিতরেও কেমন ধুপধাপ করছে ! আমি অনীর সামনে দাড়িয়ে অনুভব করলাম যে আমার পুরো শরীর কাঁপছে । আশ্চার্য কাঁপছে কেন ? অনীও মনে হয় বুঝতে পেরেছে যে আমি ওকে কিছু বলতে যাচ্ছি ! কিন্তু কি বলবো কি বলবো ? নাম ? ওকে । নাম জানতে চাইবো ? কিছু বলতে গিয়ে দেখলাম মুখদিয়ে কোন কথা বের হল না । -কিছু বলবেন ? কথাটা অনী ই জানতে চাইলো ।

-হুম । -বলুন ! -কালকে এলেন না যে ? বলেই মনে হল হায় হায় কি বললাম ? এলেন না যে ! এটা কোন কথা হল ? এমন একটা ভাব যেন আমার সাথে ওর কত দিনের পরিচয় ! এলেন না যে !! আমি চুপ করে আছি । অনী কি বলে সেটা শোনার জন্য ! অনী বলল -কেন ? আপনি অপেক্ষা করছিলেন ? আমি ধাক্কার মত খেলাম অনীর কথা শুনে ! সত্যি শুনলাম তো মেয়েটা কি বলল ? আমি কোন মতে কেবল মাথা নাড়ালাম । অনী বলল -আমি জানতাম আপনি অপেক্ষা করবেন । কিন্তু কালকে এতো শরীর খারাপ ছিল যে আসতেই পারি নি ।

আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ! মেয়েটি বলল -আপনি এমন নার্ভাস ফিল কেন করছেন ? -না মানে .. আমি আসলেই কিছু বলতে পারি না । কেবল অনীর দিকে তাকিয়ে থাকি । কতক্ষন এভাবে তাকিয়ে থাকলাম ঠিক বলতে পারবো না । মনে হল এই মেয়েটাকে কত কিছু বলার আছে ! কত গুলো কথা শোনার আছে এই মেয়েটার কাছ থেকে । আজ সুযোগও রয়েছে কিন্তু আমি কিছু বলতে পারছি না ।

-মামা কই যাইবেন? মালঞ্চ আইছে মালঞ্চ ! গুলিস্তান মতিঝিল ! মালঞ্চ ! আমি যেন বাস্তবে ফিরে এলাম !! এদিক ওদিন তাকিয়ে দেখলাম অনী কোথাও নাই । তাহলে কি এতোক্ষন আমি স্বপ্ন দেখছিলাম ?? এই যে দেখলাম অনী আমার সামনেই রিক্সা থেকে নামল । তারপর ! আমার তখন মনে পড়লো অনীতো একটা কালো পাজেরোতে করে আসে । রিক্সা করে না । -মামা যাইবেন মামা ! হেলপার যখন বুঝতে পারলো যে আমি যাবো না তখন ওভিলে সই করে দিল ।

আমি কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম বাসটা চলে যাচ্ছে ! আমি কেবল শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম !! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.