প্রান্তরে প্রান্তরে কুড়িয়ে ফিরি ধূলিকনা
বাংলাদেশের সমাজ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বড়ো অদ্ভুদ সব ব্যাপার স্যাপার ঘটেছে অবলোকন করেছেন। '৪৭ পরবর্তী সাংস্কৃতিক অপঘাত একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বাঙালি সংস্কৃতির উৎস, ঐতিহ্য এগুলো গৌণ হয়ে হাসান আজিজুল হকের 'সরকারি সংস্কৃতি' টার্মটি বিশেষ টানে আমাকে। সরকার নিজ প্রয়োজনে পছন্দের সয়স্কৃতিকে "...বাংলাদেশের একমাত্র সংস্কৃতি সেটা প্রমাণ করে ছাড়েন এবং দেশের মানুষের জন্য এটাকে গায়ের জোরে বাধ্যতামুলক করার ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। "
সত্যিই তাই।
দ্বি-জাতি তত্ত্বের সুড়সুড়ি দিয়ে বিভাজন সংগঠিত হল। বাংলাদেশের (তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান) সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য যাক না রসাতলে বরং ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যাবে। 'ইসলাম আর সাম্প্রদায়িকতা' বেশ গিলবে বাঙালি। নিজে না গিললেও আল্লাহ্'র ইচ্ছায় গিলবে। সেই পুরোনো গল্পের মত।
জঙ্গলে রাজার সেপাই পিটিয়ে গিলাবে। গিলতে হবেই।
প্রশিতি সামরিক বাহিনী, আধা সামরিক, দালাল, চেলা-চামুণ্ডা, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বুদ্ধিজীবি, আইয়ে জনাব তাশরিফ লায়ে আরও কত কী। হলোটা কী? ৫২,৬৯,৭১ এবং বাংলাদেশ। সবই জায়গায় বসেই।
এই ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলেই।
তড়িঘড়ি করে বঙ্গবন্ধুকে সরানো হল বটে গদিনশীন হলেন স্বয়ং মেজর জিয়াউর রহমান। খান আতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "আমাদের কোন সংস্কৃতি নেই বুঝলেন। আমাদের একটা সংস্কৃতি বানাতে হবে। " গরীবের গরীব খান আতা এত ভারি কথা বুঝবেন কী করে? হয়ত তাঁকিয়ে ছিলেন দুর আকাশে।
কাজ তো আর থেমে থাকে না। জিয়া সংস্কৃতি তথা বাংলাদেশি সংস্কৃতিরও গোড়া পত্তন হলো। জাতীয় সঙ্গীতের বিপরীতে "প্রথম বাংলাদেশ আমার..." কী চমৎকার শোনা গেল। বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি, বাঙালিত্ব স্বাধীনতার নিয়ামক। পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হলো বাঙালির জীবন প্রবাহে কি অদ্ভূদভাবে সেই গৌরবের ধনগুলো সরিয়ে ফেলার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ। রেডিও, টিভি, মিডিয়া? জ্বী স্যার, হ্যাঁ স্যার। হিন্দুয়ানী! রবীন্দ্রসঙ্গীত? প্রথম জীবনে একেশ্বরবাদী ও শেষ জীবনে ’মানুষই ঈশ্বর’ অর্থাৎ নাস্তিকতার দর্শনে মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ নামটা তো হিন্দু। হিন্দু বলে পরিত্যাজ্য। আর নজরুল (অবশ্যই আপাদ মস্তক সেক্যুলার) প্রচণ্ড ভক্তিবাদী আর হিন্দু দেব-দেবীর প্রেমী হলেও নজরুল গ্রহিত হবে।
হলো।
আরও কত কী! এরশাদের আগমনের তাৎপর্য কোন অংশে কম নয়। শুরু হলো এরশাদী নিয়šত্রণ। খ্যামটা। খোঁয়াড় ছেড়ে শুয়োরের পাল।
নুতন বাংলাদেশ! ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলো বাংলাদেশ বাঁচলো! সংস্কৃতি? জীবনবোধ? ঐতিহ্য? বাদ ছিল কোনটা। নব্য সাম্প্রদায়িকতা পূর্ণ জাতীয়তাবাদে গিয়ে ঠেকলো পর্যন্ত।
সর্বশেষ বাঙালির রক্তগড়া সংসদে রবীন্দ্র সঙ্গীতের মাহাত্মÍ বিশ্লেষণ করেননি কেবিনেট সদস্য মহামাণ্য নিজামী, সে তো নিছক বাঙালিকে করুণা করেই।
সামহোয়ার প্রসঙ্গে ফিরি খানিক। অপরিণত ব্যবস্থাপনা চলছে সন্দেহ নেই।
ধরেই নিচ্ছি রাজাকার নিয়ন্ত্রিত সাইট এটি। কিন্তু সাইটটি বাংলাদেশে, বাংলাদেশের সমাজসংস্কৃতির কাছে দায়বদ্ধ। বাঙালির তুমুল পদচারণা এখানে। পরিসংখ্যান নিন কতজন স্বাধীনতা বিরোধীর পদচারণা এখানে, আর বাঙালি সন্তান কতজন? কিছু কুলাঙ্গার আবোল তাবোল ছড়ালেও, মূল লেখাগুলো আসে বাঙালি চেতনায় উজ্জীবিত তারুণ্যের কলম নিংড়িয়ে। কবিতা কি রম্য, বিশ্লেষণ অথবা নিবন্ধ, গল্প হোক আর সাহিত্য কে লিখে, কে পড়ে এসব।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো যখন ব্লগের পাতায় ভেসে আসে আমরা পড়ি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেই। জানি, জানতে পারি। নিজামী গংদের ছবি সম্বলিত পোস্টগুলোতে ধিক্কার আঁছড়ে পড়ে। এসবই প্রয়োজন।
খুব বেশী প্রয়োজন।
আইয়ূব-ইয়াহিয়া থেকে নিজামী পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অপঘাত নিশ্চিত হয়েছে নব নব আঙ্গিকে। বাঙালি সামগ্রিক চেতনা রুদ্ধ করা গেছে কি? রমনা বটমূলে বোমাবাজি করে থেমে দেওয়া গেছে কি জনতার স্রোত? পথ ছেড়ে দেওয়া নয়, প্রতিবাদী হতে হবে পথে থেকেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।