সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...
নানা প্রতিকুলতা,প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও মুলধনের অভাবে দেশের মনিপুরী তাতঁ শিল্প হুমকীর মুখে পড়েছে। দেশে বিদেশে এ শিল্পের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও এ শিল্পের দুর্দিন যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সিলেটের মনিপুরি তাঁত শিল্পের তৈরী সামগ্রীর সমাদৃত হলেও সরকার কতৃêক কোন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে না। নানাবিধ সমস্যার কারনে মনিপুরী তাঁত শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, তিলকপুর, মাধবপুর ও শ্রীমঙ্গলের রামনগর মনিপুরী বস্তিতে মণিপুরি সম্প্রদায়ের অধিকাংশের বসবাস।
এসব এলাকার মনিপুরি সম্প্রদায়ের শতকরা ৯০ ভাগ মহিলা তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তাদের নরম হাতের বিভিন্ন নকশাখচিত ঊৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার তাঁত বস্ত্র দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় মূলধন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, ঊৎপাদন পদ্ধতি আধুনিকায়ন ও বাজারজাতকরনে নানা প্রতিকূলতার কারনে মণিপুরি তাঁত শিল্প আজ হুমকির মুখে পড়েছে। এক দশক আগেও যেসব মণিপুরিরা অবসর সময়ে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় কাপড় বুনত। বর্তমানে মনিপুরি মহিলারা তাঁত শিল্পকে তাদের পেশা হিসাবে গ্রহন করেছে।
ফলে উৎপাদন চাহিদা ও কাপড়ের গুনগত মান অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। মনিপুরিদের ঊৎপাদিত পন্যের মধ্যে মনিপুরি শাড়ি, বিভিন্ন প্রকার চাদর, বেড কভার, ওড়না, গামছা, ব্যাগ ঊল্লেখযোগ্য। কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার মণিপুরিদের প্রতিটি বাড়িতে বাঁশ ও কাঠের তৈরি ‘জঙ্গম’ এবং ‘খাঁঙ’ তাঁত দ্বারা এসব আকর্ষনীয় বস্ত্র তৈরি করা হয়ে থাকে। মণিপুরি তাঁত শিল্পের কাঁচামাল বাজার থেকে ক্রয় করতে হয়। প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব ও কাঁচামাল সহজলভ্য না থাকায় ঊৎপাদিত পন্যের প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছেনা।
এ দিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ঊৎপাদন পদ্ধতি আধুনিকীকায়ণ না হওয়ায় অধিকাংশ তাঁত মেশিন বর্তমানে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত মণিপুরিরা প্রথম দিকে বিভিন্ন বিপনি বিতানগুলোতে তাদের তৈরি কাপড় বিক্রি করত। কিন্তু এখন সে চিত্র বদলে গেছে। মণিপুরিদের এসব পন্য বিভিন্ন বানিজ্যিক মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে। পাশাপাশি রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের অভিজাত মার্কেট গুলোতে এ সব পন্য সরবরাহ হচ্ছে।
অথচ এই মণিপুরি তাঁত শিল্প আধুনিকায়নে সরকারি উদ্যোগ বা প্রশিণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। মান্ধ্যাতা আমলের তৈরি একটি ধারামতে মনিপুরি তাঁত শিল্প চলছে। বিনিয়োগযোগ্য পুঁজি না থাকাতে অনেকে এনজিওদের কাছ থেকে ুদ্র ঋন নিয়ে কোনোমতে তাদের অস্তিস্ত ঠিকিয়ে রেখেছে। মনিপুরীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, নারায়নগঞ্জ থেকে ‘ববিন’ ও ‘মাকু’ ক্রয় করে স্থানীয়ভাবে তৈরি করে বাঁশ ও কাঠের তাঁত নিজেরাই তৈরী করে। তবে তাদের তাতঁ শিল্পের বাস্তবধর্মী প্রশিনের ব্যবস্থা নেই।
বেশ কয়েক বছর আগে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরে বিসিকের উদ্যোগে একটি প্রশিণ কেন্দ্র খোলা হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে ১৯৭৮ সালে প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার শিব বাজারে যে বস্ত্র বয়ন প্রশিণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল তাও তাঁত শিল্পের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। মনিপুরী তাত শিল্পের নানা প্রতিকুলতা কাটিয়ে উঠলে তাদের উৎপাদিত পন্য বিদেশে রপ্তানীর মাধ্যমে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এব্যাপারে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা অতিব জরুরী বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।